আমাদের দর্শন


CFC Pulpit

প্রভু ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে বেঙ্গালুরুতে সিএফসি-কে রোপণ করেছিলেন। আমরা তখন মাত্র কয়েকজন বিশ্বাসীর সাথে শুরু করেছিলাম। যখন আমরা প্রথম একসাথে সভা করা শুরু করি, তখন ঈশ্বর কেন আমাদের একত্র করেছিলেন তা আমদের কাছে খুব একটা স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে ঈশ্বর আমাদের কাছে তাঁর পরিকল্পনা প্রকাশ করলেন।

এটি ছিল সেই: নতুন দ্রাক্ষারস (যীশুর জীবন এবং ঐশ্বরিক স্বভাব) একটি নতুন কুপায় (স্থানীয় মণ্ডলীটি খ্রীষ্টের দেহ হিসাবে প্রকাশিত হয়েছে, এটি নূতন নিয়মের ধরণ অনুসারে নির্মিত হয়েছে) রাখার বিষয়ে প্রদর্শন এবং প্রচার করার জন্য ।

এটি তখন আমাদের দর্শন হয়ে ওঠে।

আমাদের নির্দিষ্ট আহ্বান

পুরাতন নিয়মে প্রত্যেক ভাববাদীকে ঈশ্বর কর্তৃক একটি স্পষ্ট দর্শন দেওয়া হয়েছিল তাঁকে ইস্রায়েলের কাছে কিছু ঘোষণা করতে - এবং তাঁরা কেবল সেই বার্তাই প্রচার করেছিলেন। তাঁরা এটিকে "প্রভুর বোঝা" বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁরা সকলেই ঈশ্বরের কাছ থেকে তাঁদের আদেশ জানতেন - এবং ঈশ্বর তাঁদের হৃদয়ে বোঝা হিসাবে কী রেখেছেন সে সম্পর্কে তাঁরা এককভাবে মনোনিবেশ করেছিলেন - এবং তাঁদের প্রাথমিক বোঝা থেকে তাঁরা কখনও বিভ্রান্ত হতেন না।

সিএফসি-তেও, ভারতের মণ্ডলী হিসাবে আমাদের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক আহ্বান সম্পর্কে ঈশ্বরের থেকে আমাদেরকে এক স্পষ্ট দর্শন দেওয়া হয়েছিল। এবং এর থেকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমরা বিগত দশকগুলিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।

অবিশ্বাসীদের খ্রীষ্টের কাছে আনতে এবং বাইবেলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সত্য প্রচারের জন্য প্রভু ভারতে অনেক ধর্মপ্রচারকদের প্রেরণ করেছিলেন এবং বিগত দুই শতাব্দী ধরে আমাদের ভূখণ্ডে বহু প্রচারমূলক আন্দোলন উত্থাপন করেছিলেন। তাঁদের সকলের জন্য আমরা প্রভুর প্রশংসা করি। তবে নূতন নিয়মের আরও কিছু সত্য ছিল যা আমরা অনুভব করেছি, যেগুলির উপর ভারতে এখনও যথাযথভাবে জোর দেওয়া হয়নি।

জোর না দেওয়া এই সত্যগুলি যা নূতন নিয়মের সাথে সম্পর্কিত তা হলো: শিষ্যত্বের শর্তাবলী, ঈশ্বরকে আমাদের পিতা হিসাবে জানার মধ্য দিয়ে যে সুরক্ষা আসে, যীশু যেভাবে চলেছিলেন তাঁর পদক্ষেপের সাথে চলা, পবিত্র আত্মার শক্তি আমাদের মধ্যে থেকে প্রবাহিত হওয়া, ঈশ্বরের স্বভাবের অংশী হত্তয়া, ক্রুশের পথ, সমস্ত সচেতন পাপকে কাটিয়ে উঠা, জাগতিকতা এবং অর্থের প্রতি ভালবাসা থেকে মুক্তি, নিরুৎসাহ, ভয় এবং উদ্বেগ থেকে মুক্তি, পর্ব্বতে দত্ত উপদেশের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য (মথি ৫, ৬ এবং ৭), ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস যে যীশুর জন্য তিনি যা কিছু করেছিলেন তা আমাদের জন্যও করবেন, স্থানীয় মণ্ডলীকে দেহ হিসাবে গড়ে তুলতে, ইত্যাদি।

সিএফসি'র বোঝা ছিল ভারতে প্রতিটি মণ্ডলী-গোষ্ঠীতে এই সত্যগুলিকে ছড়িয়ে দেওয়া। ঈশ্বর আমাদের এটি করার সুযোগ দিয়েছেন - জনসভা, সম্মেলন, রেডিও এবং রচনাবলীর মাধ্যমে; এবং হাজার হাজার ক্যাসেট-টেপ, সিডি এবং ডিভিডি বিতরণের মাধ্যমে।

তবে বেশিরভাগ মণ্ডলীর নেতারা আমাদের এবং আমাদের বার্তার বিরোধিতা করেছিলেন এবং আমাদের জন্য তাদের দরজা বন্ধ করেছিলেন।

অতঃপর ঈশ্বর এক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তিনি আমাদের জন্য ইন্টারনেটকে উন্মুক্ত করেছিলেন। আমরা আমাদের শত শত বার্তা সেখানে রেখেছি - উত্সর্গীকৃত ভাইদের একটি দলের মাধ্যমে যাদেরকে ঈশ্বর সিএফসি-তে নিয়ে এসেছিলেন। এটি বহু মণ্ডলীর বিশ্বাসীদের প্রতিক্রিয়ার প্লাবন নিয়ে এসেছিল - কেবল ভারত জুড়েই নয়, সারা বিশ্ব জুড়ে যারা এই বার্তা শুনেছিলেন এবং যাদের জীবন রূপান্তরিত হয়েছিল এবং যাদের বিবাহ জীবন সুস্থতা পেয়েছিল। নতুন মণ্ডলীগুলির জন্ম হয়েছিল - এবং তাদের মধ্যে কিছু মণ্ডলী সিএফসির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হওয়ার জন্য আগ্রহী ছিল।

সুতরাং ঈশ্বরের সত্য কুসংস্কারযুক্ত মণ্ডলী-নেতাদেরকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যারা আমাদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং তাদের ধর্মসভার ক্ষুধার্ত সদস্যদের কাছে পৌঁছেছিল। আজ বিশ্বজুড়ে অনেক মণ্ডলীর অনেক বিশ্বাসী আছেন যারা এই চমত্কার সত্যগুলির দ্বারা আঁকড়ে আছেন এবং যারা এগুলি অন্যদের কাছে প্রচার করছেন। আমরা এটির জন্য ঈশ্বরের প্রশংসা করি - কারণ আমরা যা প্রার্থনা করেছিলাম এবং যা চেয়েছিলাম ঠিক তেমনই তিনি করেছেন। এইভাবে আমরা ঈশ্বরের সিএফসি উত্থাপিত করার সেই উদ্দেশ্যটির সামান্য কিছুটা দেখতে পেয়েছি। ঈশ্বরের পথগুলি সত্যিই আশ্চর্যজনক। তিনি বিস্ময়করভাবে কাজ করেন যখন আমরা কেবল তাঁর গৌরব অনুসন্ধান করি এবং নিজের জন্য কিছুই চাই না।

পৌল বলেছিলেন যে তাঁর লক্ষ্য "প্রত্যেক মনুষ্যকে খ্রীষ্টে সিদ্ধ করিয়া উপস্থিত করা" - এবং তিনি এই লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন (কলসীয় ১:২৮, ২৯)। এটা আমাদেরও লক্ষ্য। আমরা সিএফসি-র প্রত্যেককে প্রথমে সত্য শিষ্য হিসাবে গড়ে তুলতে কঠোরভাবে চেষ্টা করি - যিনি যীশুকে তার আত্মীয়-স্বজনদের চেয়ে বেশি, তার নিজের চেয়ে বেশি এবং তার পার্থিব সম্পদের চেয়েও বেশি ভালবাসেন (লুক ১৪:২৬, ২৭ এবং ৩৩)। এরপরে আমরা যীশু যে সকল আদেশ দিয়েছিলেন তা মান্য করার জন্য তাদের সবাইকে শেখানোর চেষ্টা করি (মথি ২৮:২০)।

আমরা জানি যে এই পথটি একটি সঙ্কীর্ণ পথ এবং খুব কম লোকই এটি খুঁজে পাবে। আমরা আরও জানি যে এমনকি যীশুর 'মণ্ডলী'-তেও বারোজনের মাঝে একজন ভণ্ড বসে ছিলেন। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি যে সিএফসি-তেও ভণ্ড থাকবে, খ্রীষ্টের পুনরাগমনের দিন পর্যন্ত। তবে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, বাক্যের প্রচার এই জাতীয় ভণ্ডদের ক্রমাগত দোষী সাব্যস্ত করবে এবং অস্বস্তিতে রাখবে - এই আশায় যে তারা অনুতপ্ত হবে।

ধর্মপ্রচার ও শিষ্য তৈরি

সিএফসি-তে আমরা সমস্ত বিশ্বাসীদের উৎসাহিত করেছি ব্যক্তিগতভাবে অন্যদের সাথে সুসমাচার পরিবেশন করতে। এইভাবে অনেকে খ্রীষ্টের কাছে এসেছেন এবং বিগত বছরগুলিতে আমাদের মণ্ডলীর সাথে যুক্ত হয়েছেন। এবং এইভাবে ঈশ্বর ভারতের শহর ও গ্রামে, পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে নতুন নতুন মণ্ডলী রোপণ করেছেন।

সিএফসি-তে আমাদের জন্যে ঈশ্বরের পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট আহ্বান রয়েছে বলে আমরা অন্যান্য সেবাকার্য্যের (যেমন সামাজিক কাজ) সাথে জড়িত হই না, যা আমাদের মুখ্য আহ্বানের ক্ষেত্রে আমাদের কর্মশক্তিকে প্রতিসারণ করতে পারে। আমরা এটি চাই না যে শেষ দিনে আমাদের সম্পর্কে বলা হোক "আমরা অন্য লোকের ক্ষেত্রের যত্ন নিয়েছি কিন্তু প্রভু আমাদের যে ক্ষেত্র দিয়েছেন তার যত্ন করিনি" (পরমগীত ১:৬ দেখুন)। সুতরাং প্রভুর প্রতিটি সন্তানের জন্য তাঁর একটি পৃথক আহ্বান রয়েছে তা স্বীকার করে আমরা অন্যান্য সেবাকার্য্যগুলি তাঁদের উপর ছেড়েছি, যারা সেই ক্ষেত্রগুলিতে নিযুক্ত থাকার জন্য ঈশ্বরের আহ্বান উপলব্ধি করেছেন। আমরা একাধিক রকম সেবাকার্য্যে জড়িত হয়ে অন্যান্য বিশ্বাসীদের চোখে "সামঞ্জস্যপূর্ণ" উপস্থিতি দেখানোর কোন ইচ্ছা পোষণ করি না। এটি কেবল ঈশ্বরের আহ্বান এবং অনুমোদন, যা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

যেহেতু আমরা একটি ক্রমবর্ধমান মণ্ডলী, তাই আমাদের সাথে যুক্ত হওয়া নতুন বিশ্বাসীদের প্রতি এবং অনেক শিশু যারা আমাদের মাঝে বেড়ে উঠে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে, তাদের প্রতিও আমাদের বড় দায়িত্ব রয়েছে। তাদের সকলকেই শিষ্য হিসাবে তৈরি করা দরকার। নতুন ধর্মান্তরিত হওয়া এবং বড় হয়ে ওঠা শিশুরা উভয়ই একটি স্বাস্থ্যকর, ক্রমবৃদ্ধিমান মণ্ডলীর লক্ষণ। ঈশ্বর যে সকল নতুন বিশ্বাসীদের আমাদের মাঝে নিয়ে এসেছেন এবং আমাদের বড় হয়ে ওঠা শিশুরাই এখন আমাদের কাজের নতুন ক্ষেত্র।

ঈশ্বর এবং অর্থ

সিএফসি-তে আমরা অর্থের বিষয়ে একটি ভিত্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছি, কারণ যীশু বলেছিলেন যে আমরা ঈশ্বর এবং অর্থ উভয়েরই সেবা করতে পারি না (লুক ১৬:১৩) - এবং কেবল ঈশ্বরের সেবা করার জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েছিলাম। এই বিষয়টিতে নিন্দার একেবারে ঊর্ধ্বে থাকার জন্য আমরা আমাদের সেবাকার্য্যে অর্থের বিষয়ে এই ব্যবহারিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি - কোনও বেতনভুক্ত প্রচারক থাকবে না এবং কোন সভা থেকে উপহার সংগ্রহ করা হবে না। আমরা দশমাংশের বিষয়ে পুরাতন নিয়মের বিধানের বিরুদ্ধে প্রচার করব। আমরা এটা শিক্ষা দেব যে প্রভুর কাজের জন্য সমস্ত অর্থ প্রদান আনন্দের সঙ্গে এবং স্বেচ্ছায় করতে হবে। আমরা কাউকে কোনও টাকা দেওয়ার জন্য কোন চাপ দেব না। আমরা আমাদের কাজের কোনও প্রতিবেদন কারও কাছে প্রেরণ করব না এবং আমরা কখনই আমাদের মণ্ডলীর আর্থিক চাহিদা অন্যের কাছে জানাব না। আমরা যৌতুক (বরপণ) প্রদান ও গ্রহণের বিরুদ্ধে দাঁড়াব এবং আমরা সবাইকে ঋণমুক্ত থাকতে উৎসাহিত করব (রোমীয় ১৩:৮)।

ঈশ্বরের অনুগ্রহে, আমরা শুরুর থেকেই এই নূতন নিয়মের মানদণ্ডগুলি ধরে রেখেছি। এই বিষয়গুলিতে আমাদের দৃঢ় অবস্থানের কারণে আমরা অন্যান্য খ্রীষ্টীয় দল ও মণ্ডলীর পক্ষ থেকে প্রচুর বিরোধিতা ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছি। তবে আমরা জানি আমরা কিসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি - এবং প্রভু ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এই নীতিগুলির জন্য দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকব।

আমাদের সমস্ত প্রাচীনেরা প্রেরিত পৌলের মতো আর্থিকভাবে নিজেদের ভারবহন করেন। পৌল কিছু বিশ্বাসীদের কাছ থেকে মাঝে মধ্যে উপহার পেয়েছিলেন। তবে তিনি কখনও ব্যক্তিগত প্রয়োজন বা তাঁর নিজের পরিচর্যার জন্য কারও উপহারের উপর নির্ভরশীল ছিলেন না। তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে এই সমস্ত সরবরাহ করার জন্য বিশ্বাস করেছিলেন। এটি আমরাও গ্রহণ করেছি - এবং এটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

যারা প্রভুর পরিচর্যায় নিয়োজিত তাদের অন্যদের দ্বারা সমর্থন করা একেবারে সঠিক - কারণ ঈশ্বর স্বয়ং আদেশ করেছেন যে যারা সুসমাচার প্রচার করে তারা সুসমাচার থেকে জীবনযাপন করতে পারে (১ করিন্থীয় ৯:১৪)। কিন্তু পৌল নিজের ভার বহন করেছিলেন, কারণ তিনি তাঁর সময়ে প্রভুর নামে যে অসম্মান ঘটেছিল তা প্রচারকদের মাধ্যমে দেখেছিলেন যারা তাদের আধ্যাত্মিক উপহারগুলি নিজের জন্য সম্পদ জড়ো করতে ব্যবহার করেছিল। সুতরাং তিনি এইরকম দুর্নীতির মাঝেও প্রভুর জন্য খাঁটি সাক্ষী হতে চেয়েছিলেন।

ভারতেও আমরা একইরকম পরিস্থিতি পেয়েছি। সুতরাং সিএফসি-তে আমরা পৌলের মতো অনুভব করেছি যে আমাদের চারপাশের দুর্নীতিপরায়ন প্রচারকদের থেকে অর্থের ক্ষেত্রে আমাদের আলাদা হওয়া প্রয়োজন - আমাদের দেশে প্রভুর সাক্ষ্য হিসাবে। আমরা যে অবস্থান নিয়েছিলাম তা আমাদের বহু বালাক, গেহসি এবং দীমা থেকে রক্ষা করেছে যারা অন্যথায় আমাদের সাথে যোগ দিয়ে আমাদের মাঝে প্রভুর সাক্ষ্যকে কলুষিত করত।

আমরা কখনই সিএফসি বিশ্বাসীদের বলি না যে কীভাবে তাদের নিজস্ব অর্থ ব্যবহার করতে হয়। তারা পুরোপুরি তাদের ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারবেন - মিশন বা অনাথ আশ্রমে দেওয়া, এমনকি রাস্তার ভিক্ষুকদের উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে। কিন্তু সিএফসিতে প্রভুকে দেওয়া দানগুলি, আমরা কেবলমাত্র আমাদের দর্শন অনুসারে ব্যবহার করি - শিষ্য তৈরি এবং দরিদ্র বিশ্বাসীদের সাহায্য করার জন্য।

সেবাকার্য্য, উপাধি এবং কর্তৃপক্ষ

সেবাকার্য্য: ইফিষীয় ৪:১১ পদ বলেছে যে খ্রীষ্ট তাঁর মণ্ডলীর লোকদেরকে উপহার দিয়েছেন - প্রেরিত, ভাববাদী, প্রচারক, শিক্ষক এবং পালক হিসাবে। প্রভু তাঁর মঙ্গলানুসারে, সিএফসিতে আমাদের এই পাঁচটি সেবাকার্য্য দিয়েছেন।

তবে আমরা কোনও ভাইকে এই শিরোনাম বা আখ্যা দ্বারা সম্বোধন করি না। (পৌল কেবল নিজেকে "একজন প্রেরিত" বলেছিলেন কারণ তিনি চেয়েছিলেন লোকেরা ঈশ্বরের বাক্য হিসাবে তিনি যা লিখেছিলেন তা যেন গ্রহন করে। তবে আজ এই শিরোনামটির কোন প্রয়োজন নেই)।

আমরা তবে এই পাঁচটি সেবাকার্য্য অনুশীলনে বিশ্বাস করি - এবং আমরা দেখেছি আমাদের মধ্যে এই সেবাকার্য্যগুলি অনুশীলনের মাধ্যমে এক গৌরবময় ফলাফল এসেছে। এটিই আমাদের পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ - এবং কে কোন সেবাকার্য্য সম্পাদন করল সেই বিষয়টি নয়, কারণ আমরা প্রত্যেকেই একটি দেহ এবং কেবল একে অপরের পরিচারক।

উপাধি: প্রভু আমাদের কেবলমাত্র যে শিরোনামের অনুমতি দিয়েছেন তা হলো "ভাই" এবং "সেবক" (মথি ২৩: ৮, ১১)। আমরা সবাই "ভাই" এবং "সেবক" হতে পারি।

যীশু বলেছিলেন যে, তিনি আমাদের যে আদেশ দিয়েছেন তা আমরা যখন পালন করেছি, তখন আমরা নিজেদেরকে বলতে পারি, "অযোগ্য দাস যারা কেবলমাত্র আমাদের পালনকর্তার আদেশ অনুসারে কাজ করেছি" (লুক ১৭:১০ দেখুন)। এই শিরোনামটির জন্য আমাদের প্রত্যেকেই আকাঙ্ক্ষা করা উচিত।

কর্তৃপক্ষের কাছে বশীভূত হওয়া: বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয়, "তোমরা তোমাদের নেতাদের আজ্ঞাবহ ও বশীভূত হও" (ইব্রীয় ১৩:১৭)। আর তাই, যারা সিএফসি-র অংশ হতে চান তাদেরকে ঈশ্বরের এই আদেশের আনুগত্য হতে এবং মণ্ডলীর বিষয়ে স্থানীয় প্রাচীনদের কাছে বশীভূত হতে আমরা শিক্ষা দেই। আমরা কাউকে তা করতে বাধ্য করি না, এই ধরনের বশীভূত হওয়ার মূল্য রয়েছে যখন কেবল এটি স্বেচ্ছায় আসে।

অন্য কিছু মণ্ডলীতে, পোপ বা যাজক বা পালকের কর্তৃত্বের কাছে বশীভূত হতে লোকেদের বাধ্য করা হয়। তবে সিএফসি-তে আমরা কারও উপর কর্তৃত্ব চাপিয়ে দিই না। আমরা বিশ্বাসীদেরকে বেছে নিতে স্বাধীনতা দিই যে কার কাছে তিনি বশীভূত হতে চান। তারপরে তারা স্বেচ্ছায় কোনও প্রাচীনের কাছে বশীভূত হওয়ার জন্যে বেছে নিতে পারেন যার প্রতি তাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে, কারণ তারা এমন জ্ঞ্যান ও সুরক্ষা চায় যা তাদের কাছে এই ধরনের বশীভূত হওয়ার মাধ্যমে আসতে পারে। একজন প্রাচীনের প্রতি বিশ্বাসীদের আস্থা বৃদ্ধি হয় যখন তারা তাঁর জীবনযাত্রা, তিনি যেভাবে তাঁর পরিবারকে লালন-পালন করেছেন এবং কীভাবে ঈশ্বর তাঁর সেবাকার্য্যের সাক্ষ্য দিয়ে থাকেন সে সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করে।

প্রেরিতদের কার্য্য বিবরণীতে, সমস্ত নতুন ধর্মান্তরিতেরা স্থানীয় মণ্ডলী গুলির সাথে যুক্ত হয়েছিল। প্রেরিতরা তখন প্রতিটি মণ্ডলীর উপরে প্রাচীনদেরকে (একাধিক) নিয়োগ করেছিলেন (তীত ১:৫)। সেবাকার্য্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রতিটি মণ্ডলীতে কমপক্ষে দুজন প্রাচীন ছিলেন। এই প্রাচীনেরা আধ্যাত্মিক পিতা হয়ে বিশ্বাসীদের প্রতিপালন করেছিলেন এবং তাদের পরিপক্কতার দিকে সক্ষম করে তুলেছিলেন। প্রাচীনরা নিজেরাই পালাক্রমে প্রেরিতদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন বা (প্রেরিতের অনুপস্থিতিতে) অন্য আরও পরিপক্ক প্রাচীনদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন । এই নূতন নিয়মের ধরণটি আমরা সিএফসি-র সাথে যুক্ত সমস্ত মণ্ডলীর মধ্যেও অনুশীলন করে চলেছি।

বিশ্বাসী ও প্রচীনদের নিয়মশৃঙ্খলা: সমস্ত ভাল পরিবারে, পিতারা তাদের সন্তানদের যখন প্রয়োজন তখন অনুশাসন করেন। সিএফসি-র সঙ্গে সম্পর্কিত মণ্ডলীগুলিতেও, যারা সর্বদা পাপ কর্মে অব্যাহত রয়েছে তাদের অনুশাসন করতে আমরা বিশ্বাস করি (যেমন মথি ১৮:১৫-১৭ তে শিক্ষা দেয়), যাতে, "অল্প তাড়ী সূজীর সমস্ত তাল তাড়ীময় না করিয়া ফেলে" (১ করিন্থীয় ৫:৬-৭)।

যদি দু বা তিনজন বিশ্বাসী কোনও মণ্ডলীর প্রাচীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, তবে ঊর্ধ্বতন প্রাচীনেরা (এবং সেই মণ্ডলীর জন্য যারা প্রেরিতের দায়িত্বে নিযুক্ত) এই অভিযোগটি যত্ন সহকারে তদন্ত করবেন। যদি অভিযোগটি সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তবে তাঁরা ১ তীমথিয় ৫:১৯-২১ পদে প্রদত্ত নির্দেশাবলী অনুসরণ করবেন: দুই বা তিন জন সাক্ষী ব্যতিরেকে কোন প্রাচীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রাহ্য করিও না। যাহারা অবিরত পাপ করে, তাহাদিগকে সকলের সাক্ষাতে অনুযোগ কর; যেন অন্য সকলেও ভয় পায় … পক্ষপাতের বশে কিছুই করিও না"।

কারোর প্রতি পক্ষপাতিত্ব না দেখিয়ে এই নিয়মানুবর্তিতা অনুশীলন করা হয়। প্রাচীনকে তাঁর অপরাধের উপযুক্ত কঠোর শিক্ষা পেতে হবে - এবং পুরো মণ্ডলীকে এটির সম্পর্কে অবহিত করা হবে (যেমন উপরোক্ত পদগুলি শিক্ষা দেয়)। [এর উদাহরণ হিসাবে, আমরা দেখতে পাই ঈশ্বর প্রেরিত যোহনকে প্রকাশিত বাক্য ২ ও ৩ অধ্যায়ে নীতিপালনে পশ্চাত্পদ হত্তয়া পাঁচটি মণ্ডলীর প্রাচীনদের তিরস্কার সম্পর্কে সমস্ত মণ্ডলীকে অবহিত করার বিষয়ে বলেছিলেন]।

এই নিয়মানুবর্তিতার ক্ষেত্রে, যদি কোন ভাইকে ঈশ্বরের দ্বারা কোন মণ্ডলীর একজন প্রাচীন নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, তবে তিনি যখন প্রয়োজন হবে তখন সেই প্রাচীনকে অনুশাসন করতে এবং অপসারণের জন্য একই কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারেন। এই ধরনের প্রেরিতের কর্তৃত্বের অনুপস্থিতিতে, মণ্ডলীর অন্যান্য প্রাচীনরাও এই নিয়মানুবর্তিতাটি ব্যবহার করতে পারেন।

যাইহোক, সমস্ত অনুশাসন প্রেমের চেতনায় প্রয়োগ করা হয় (যেমন একজন পিতা করেন) অবশেষে সেই বিশ্বাসীকে (বা প্রাচীনকে) প্রভুর কাছে এবং মণ্ডলীর কাছে পুনঃস্থাপনের আশায় (২ করিন্থীয় ২:৬-১১)।

স্থানীয় মন্ডলীগুলির মধ্যে সহভাগিতা

সিএফসি-র সাথে যুক্ত মণ্ডলীগুলি কোনও সম্প্রদায়ভুক্ত নয়। আমরা একই মণ্ডলীগুলির সহভাগি যারা একসাথে কাজ করি কারণ আমাদের সবার দর্শন একই রকম। আমাদের কোনও কেন্দ্রীয় সদর দফতর নেই। নেতৃত্বের জন্য আমাদের কোন নির্বাচন হয় না। আমাদের কোনও তত্ত্বাবধায়ক বা সভাপতি নেই। আমাদের কোনও মণ্ডলীর-সম্পত্তির উপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রতিটি মণ্ডলী স্বয়ং প্রভুর অধীনে স্বাধীন। সুতরাং, সমস্ত নিযুক্ত প্রাচীনরা সর্বপরি স্বয়ং প্রভুর কাছে জবাবদিহি করবেন। [এটাই নুতন নিয়মের উত্কৃষ্ট নিদর্শন, যেমনটি আমরা দেখতে পাই প্রকাশিত বাক্য ১:২০, যেখানে "প্রত্যেকটি তারা প্রভুর হস্তে রয়েছে"]। আমাদের কোনও ডাইসিস বা মণ্ডলীর গোষ্ঠী নেই যা কোনও "বিশপ" এর আওতায় আসে - যেমন কিছু সম্প্রদায়ের রয়েছে। কোনও স্থানীয় মণ্ডলীর-প্রাচীনের নিজের মণ্ডলী ছাড়া অন্য কোনও মণ্ডলীর দায় নেই। এবং কোনও প্রাচীনকে অন্য মণ্ডলীর প্রাচীনের কাছে বশীভূত হতে বলা হয় না।

পৌল যে মণ্ডলীগুলি রোপণ করেছিলেন সেগুলি তিনি কোন ধর্মসম্প্রদায় হিসাবে তৈরি করেননি। সিএফসি এবং আমাদের সাথে যুক্ত মণ্ডলীগুলিও কোনও সম্প্রদায়ের নয়। প্রত্যেকটা মণ্ডলী প্রভু যা রোপণ করেছেন এবং সিএফসি-র সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন - সেগুলি সম্পূর্ণ স্বাধীন - এবং সেগুলির নেতৃত্ব তার নিজস্ব স্থানীয় প্রাচীনরা দিয়ে থাকেন। কেউই এই প্রাচীনদের নিয়ন্ত্রণ করেন না বা তাঁদের কী করতে হবে তা বলেন না। প্রভুই একমাত্র তাঁদের প্রধান।

প্রাচীনরা যখন তাঁদের নিজের মণ্ডলীতে সমস্যার মুখোমুখি হন তখন অন্যান্য মণ্ডলীর আরও পরিপক্ক প্রাচীনদের বা প্রেরিতের সেবাকার্য্যে থাকা ব্যক্তিদের পরামর্শ নিতে পারেন - যেমন করিন্থীয় বিশ্বাসীরা যখন তাঁদের মধ্যে সমস্যাগুলিতে সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছিল তখন তাঁরা পৌলের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। পৌলের পরামর্শ সেই সময় তাঁদের সমস্যাগুলি সমাধান করতে সহায়তা করেছিল।

প্রভুর এক পরিবার হিসাবে আমরা ক্রমাগত সিএফসি-সংযুক্ত মণ্ডলীর সঙ্গে নিজেদের সহভাগিতা গড়ে তুলতে চাই যাতে আমাদের ঐক্য আরও দৃঢ় হয়। সিএফসির সাথে যুক্ত সমস্ত মণ্ডলীর জন্য আমাদের প্রায়শই সম্মেলন হওয়ার এটি একটি কারণ।

পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব

সিএফসি-তে, পরিবারের মধ্যে ধার্মিকতাই হচ্ছে মৌলিক গুরুত্বের বিষয়। তাই আমরা প্রায়শই সভা করে পরিবারগুলিকে পারস্পরিক ভালবাসা এবং শ্রদ্ধায় স্বামী-স্ত্রীর ভাল সম্পর্ক রাখতে এবং তাদের সন্তানদের ঈশ্বরের পথে পরিচালিত করতে উত্সাহিত করি।

স্ত্রীদেরকে ঈশ্বর তাদের স্বামীদের সাহায্যকারী হিসেবে বুঝিয়েছেন। পরিবার গঠনে স্বামীদের সহায়তা করার জন্য এবং স্বামীর সেবাকার্য্যে সহায়তা করার জন্য - সিএফসি-তে, আমরা তাদের এই সহায়তাকে অপরিসীমমূল্য দিই। সিএফসি-তে আমরা স্বামীদের তাদের স্ত্রীদের সামনে প্রত্যেক ক্ষেত্রে উদাহরণ স্বরূপ ভাল পালক হতে শিক্ষা দিই।

যেহেতু ঈশ্বরের কন্যারাও এখন ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন, আমরা সিএফসি-তে সমস্ত বোনদের পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হতে এবং ভবিষ্যদ্বাণীর বরদানটি যাচ্ঞা করার জন্য উত্সাহিত করি (প্রেরিত ২:১৭, ইফিষীয় ৫:১৮, ১ করিন্থিয় ১৪:১) - এটির উদ্দেশ্য হলো এমন বাক্য পরিবেশন করা যা অন্যকে উত্সাহ এবং সান্ত্বনা এবং আশীর্বাদ দেয় (যেমন আমরা পড়ি ১ করিন্থিয় ১৪:৩) - সবার আগে নিজের ঘরে তাদের স্বামী এবং সন্তানের কাছে এবং অন্যান্য মহিলাদের কাছে।

সিএফসি-র ভবিষ্যতের নেতৃত্ব

সিএফসি-তে, আমরা আমাদের সমস্ত ছোট ভাইদের সম্পূর্ন আন্তরিক হওয়ার জন্য উত্সাহিত করি, যাতে ঈশ্বর তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আগামী দিনে মন্ডলীগুলির নেতা হয়ে উঠতে অনুগ্রহ করতে পারেন।

মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঈর্ষা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়িন তার ছোট ভাই হেবলের প্রতি ঈর্ষা করেছিল এবং শৌল তরুণ দায়ূদকে ঈর্ষা করেছিলেন। এবং খ্রীষ্টীয় ইতিহাস এমন "বড় ভাইদের", উদাহরণগুলিতে ভরা যেখানে তাঁরা প্রতিভাধর ছোট ভাইদের আগমনে ঈর্ষা করেছেন এবং তাদের দমন করেছেন। তবে সিএফসি-তে আমরা সমস্ত প্রাচীনকে নেতৃত্বের সম্ভাবনা যুক্ত ধার্মিক তরুণ ভাইদের সন্ধানের জন্য এবং তাদের উত্সাহিত করতে এবং প্রশিক্ষণ দিতে উত্সাহিত করি।

যেহেতু ঈশ্বরের কাজে অবসর বলে কোন কিছুই নেই, তাই সিএফসি-র একজন প্রাচীন ভাই কখনও অবসর গ্রহণ করেন না। তবে পিতারা যেমন তাঁদের "পুত্র"-কে পরিপক্কতায় নিয়ে আসে এবং তারপরে নিজেদের পিছিয়ে আনে এবং তাদের "পুত্রদেরকে" তাদের নিজের জীবন চালাতে দেন, সিএফসি-র জ্যেষ্ঠ প্রাচীন ভাইরাও একই কাজ করেন। এই ধরনের নম্র, ধার্মিক, পিতৃতুল্য প্রাচীনরা তাঁদের জীবনের শেষ অবধি তাঁদের "আধ্যাত্মিক পুত্রদের" দ্বারা সম্মানিত এবং শ্রদ্ধেয় হয়ে থাকবেন ও পরামর্শ বিনিময়ে অবিরত থাকবেন।

"ইহা কেমন উত্তম ও কেমন মনোরম যে, ভ্রাতারা একসঙ্গে ঐক্যে বাস করে! …… তথায় সদাপ্রভু আশীর্ব্বাদ আজ্ঞা করিলেন, অনন্তকালের জন্য জীবন আজ্ঞা করিলেন" (গীতসংহিতা ১৩৩:১, ৩)।

"তুমি প্রভুতে যে পরিচারকের পদ পাইয়াছ সে বিষয়ে দেখিও, যেন তাহা সম্পন্ন কর" (কলসীয় ৪:১৭)।