১ পিতর-এ প্রেরিত পিতর বশীভূত থাকা সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন। যে ব্যক্তি ঈশ্বরের প্রকৃত অনুগ্রহ অনুভব করেন, তিনি যেখানেই যান না কেন, সর্বদা কর্তৃত্বের কাছে বশীভূত হয়ে থাকবেন। বশীভূত হয়ে থাকতে তার কোনও সমস্যা হবে না। পাপের উৎপত্তি হয়েছিল আজ্ঞালঙ্ঘন করা থেকে, আদমকে সৃষ্টি করার অনেক আগে থেকেই। সর্বোচ্চ স্বর্গদূত ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে আজ্ঞালঙ্ঘন করেছিল এবং তৎক্ষণাৎ শয়তানে পরিণত হয়েছিল। এই কারণেই “আজ্ঞালঙ্ঘন করা মন্ত্রপাঠ জন্য পাপের তুল্য” (১ শমূয়েল ১৫:২৩) - কারণ আজ্ঞালঙ্ঘন আত্মা একজনকে মন্দ আত্মার সংস্পর্শে নিয়ে আসে, ঠিক যেমন জাদুবিদ্যা (মন্ত্রপাঠ) করে। প্রভু যীশু একেবারে বিপরীতভাবে জীবনযাপন করে শয়তানকে পরাজিত করেছিলেন। তিনি নিজেকে নম্র করেছিলেন এবং তাঁর স্বর্গীয় পিতার প্রতি নিখুঁত বশ্যতা স্বীকার করে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন; এবং এখানে পৃথিবীতে তিনি ৩০ বছর ধরে অসম্পূর্ণ যোষেফ এবং মরিয়মের কাছে আজ্ঞাবহ হয়েছিলেন, কারণ এই মানবিক কর্তৃত্বগুলি তাঁর স্বর্গীয় পিতা তাঁর উপর অর্পণ করেছিলেন। যে ব্যক্তি ঈশ্বরের প্রকৃত অনুগ্রহ অনুভব করেছেন, তিনি আজ্ঞালঙ্ঘন আত্মার থেকে তার আত্মা মুক্তির অনুভব পাবেন। যদি কর্তৃত্বের কাছে বশীভূত হতে আপনার সমস্যা হয়, তবে আপনার আত্মায় মুক্তির দরকার আছে।
খ্রীষ্টানদের সকল মানবসৃষ্ট কর্তৃপক্ষের, রাজাদের, শাসনকর্তাদের, ইত্যাদির কাছে বশীভূত হতে বলা হয়েছে (১ পিতর ২:১৩, ১৪)। সেই সময়ে রোমের সম্রাট ছিলেন নিরো, যিনি রোম শাসনকারী সবচেয়ে দুষ্ট রাজাদের একজন ছিলেন এবং খ্রীষ্টানদের তাড়না ও হত্যা করতেন। তবুও পিতর খ্রীষ্টানদের কেবল তার প্রতি বশ্যতা স্বীকার করতেই বলেন না, বরং “রাজাকে সমাদর করতে”ও বলেন (১ পিতর ২:১৭)। তিনি আরও বলেন যে আমাদের অবশ্যই “সকল মানুষকে সমাদর করতে হবে।” (১ পিতর ২:১৭)। পুরাতন নিয়মের অধীনে, আইন ছিল বয়স্ক ব্যক্তিদের সম্মান করা (লেবীয় পুস্তক ১৯:৩২)। কিন্তু নতুন নিয়মের অধীনে, আমাদের সকলকে সম্মান করতে হবে। নতুন নিয়মের অধীনে প্রতিটি ক্ষেত্রে মান উচ্চতর। পুরাতন নিয়মের অধীনে, মানুষকে ঈশ্বরের কাছে ১০% দিতে হতো। নতুন নিয়মে, আমাদের সবকিছু দিতে হবে (লূক ১৪:৩৩)। পুরাতন নিয়মের অধীনে, একটি দিন পবিত্র রাখার কথা ছিল (বিশ্রামবার)। নতুন নিয়মে, প্রতিটি দিন পবিত্র রাখার কথা বলা হয়েছে। পুরাতন নিয়মের অধীনে প্রথমজাত পুত্র সন্তানকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত হতে হতো। নতুন নিয়মে, আমাদের সমস্ত সন্তানকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গী করতে হবে। ঈশ্বরের অনুগ্রহের অভিজ্ঞতা অর্জনকারী একজন ব্যক্তির সকল মানুষকে সম্মান করতে কোনও অসুবিধা হয় না। আমাদের প্রভু যীশুর মতো দাস হতে হবে, এবং তাই আমরা সকলকে সম্মান করতে এবং “নম্রভাবে প্রত্যেক জন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ মনে করতে” খুশি হতে হবে (ফিলিপীয় ২:৩)।
তারপর তিনি বিশেষভাবে দাসদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন এবং তাদের প্রভুদের প্রতি বশীভূত হতে বলেন। সমস্ত প্রেরিত দাসদের তাদের প্রভুদের প্রতি বশীভূত থাকতে শিখিয়েছিলেন। একজন খ্রীষ্টান যার অফিস বা কারখানায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মনোভাব রয়েছে, সে খ্রীষ্টের পক্ষে খুবই খারাপ সাক্ষী। একজন খ্রীষ্টান ছাত্র যে স্কুল বা কলেজে তার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, সেও খ্রিস্টের পক্ষে খুবই খারাপ সাক্ষী। এই ধরণের একজন খ্রীষ্টান “ঈশ্বরের প্রকৃত অনুগ্রহ” মোটেও বোঝেনি। সে বোঝেনি যে যীশু ৩০ বছর ধরে অসম্পূর্ণ পার্থিব পিতামাতার কাছে এসেছিলেন এবং তাদের প্রতি আজ্ঞাবহ ছিলেন। এটি এমন একটি শিক্ষা যা আমাদের সকলের শেখা উচিত। দাসেরা, পূর্ণ শ্রদ্ধার সাথে আপনাদের প্রভুদের প্রতি বশীভূত থাকুন। যদি আপনি কোন অফিস, কারখানা, স্কুল, হাসপাতাল বা অন্য কোথাও কাজ করেন, তাহলে সেই স্থানে আপনার উপরে যারা আছেন তাদের প্রতি আপনাকে অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবে।
আমাদের সন্তানদের তাদের শিক্ষকদের সম্মান করতে শেখাতে হবে, এবং অন্য শিশুদের সাথে দল বেঁধে শিক্ষকদের উপহাস করা যাবে না। দাসদের কেবল সেইসব প্রভুদের প্রতিই নয় যারা ভালো এবং ভদ্র, বরং যারা অযৌক্তিক তাদের প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করতে শিখতে হবে। একজন ভালো প্রভুর কাছে বশ্যতা স্বীকার করা সহজ, কিন্তু একজন খ্রীষ্টান যিনি “ঈশ্বরের প্রকৃত অনুগ্রহ” অনুভব করেছেন তিনি একজন অযৌক্তিক প্রভুর কাছেও বশ্যতা স্বীকার করবেন (১ পিতর ২:১৮)। যখন আপনি একজন অযৌক্তিক প্রভুর কাছে আজ্ঞাবহ হবেন, তখনই একজন খ্রীষ্টান হিসেবে আপনার আলো জ্বলে ওঠবে। সূর্যের আলোয় জ্বলন্ত মোমবাতি সহজে দেখা যায় না। কিন্তু রাতে সবাই তার আলো দেখতে পায়। একইভাবে, একজন খ্রীষ্টানের আলো সবচেয়ে উজ্জ্বলভাবে দেখা যায়, যখন তিনি অন্ধকার পরিবেশে থাকেন।
যখন আপনি অন্যায় কাজের জন্য শাস্তি পান, তখন ধৈর্য ধরে বশ্যতা স্বীকার করার মধ্যে কোন সদ্গুণ নেই। কিন্তু যখন আপনি সঠিক কাজটি করেন, অথচ আপনি ধৈর্য ধরে দুঃখ সহ্য করেন, তখন ঈশ্বর আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হন (১ পিতর ২:২০)। অন্যায়ভাবে কষ্টভোগ করা পিতরের চিঠির অন্যতম প্রধান বিষয়। তিনি আরও বলেন যে, প্রভু যীশুও ঠিক এভাবেই কষ্টভোগ করেছিলেন। তিনি অন্যায়ভাবে কষ্টভোগ করেছিলেন এবং তাঁর পদক্ষেপ অনুসরণ করার জন্য আমাদের জন্য একটি উদাহরণ রেখে গেছেন। আমাদের এখানে আহ্বান করা হয়েছে “তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন করতে; “তিনি পাপ করেন নাই, তাঁহার মুখে কোন ছলও পাওয়া যায় নাই”। তিনি নিন্দিত হইলে প্রতিনিন্দা করিতেন না; দুঃখভোগ কালে তর্জ্জন করিতেন না, কিন্তু যিনি ন্যায় অনুসারে বিচার করেন, তাঁহার উপর ভার রাখিতেন।” (১ পিতর ২:২১-২৩)। “ঈশ্বরের প্রকৃত অনুগ্রহ” বুঝতে পেরেছেন এমন একজন খ্রীষ্টানও এভাবেই আচরণ করেন।