“ধন্য যাহারা শোক করে, কারণ তাহারা সান্ত্বনা পাইবে” (মথি ৫:৪)। “সান্ত্বনা” (comfort) শব্দের অর্থ “শক্তিশালী”। এর ঠিক মাঝখানে “f-o-r-t” ছোট্ট শব্দ আছে। “দুর্গ” হল একটি বিশাল সামরিক সুরক্ষিত এলাকার ছবি - একটি দুর্গ, যা শক্তিশালী। “ধন্য যাহারা শোক করে, কারণ তাহারা সান্ত্বনা পাইবে।” পৃথিবীর মানুষ সকল ধরণের জিনিসের জন্য শোক করে। বেশিরভাগ মানুষ ব্যক্তিগত ক্ষতির কারণে শোক প্রকাশ করে। হয় তারা অর্থ হারিয়েছে, অথবা তারা প্রিয়জনকে হারিয়েছে, অথবা তারা তাদের খ্যাতি হারিয়েছে, অথবা তারা এই পৃথিবীর কিছু হারিয়েছে, যেমন তাদের মর্যাদা, পদ, চাকরি, অথবা এই জাতীয় কিছু। কিন্তু প্রভু যীশু এখানে যে ধরণের শোকের কথা বলছেন তা এই ধরণের শোক নয়। এই শোক কেউ আমাকে আঘাত করেছে বলে নয়, অথবা নিজের ক্লেশের জন্য কান্নাকাটিও নয়।
প্রভু যীশু কখনও তাঁর কষ্টের জন্য কাঁদেননি, বরং অন্যদের জন্য কাঁদতেন। আমরা পড়ি যে তিনি যিরূশালেমের জন্য কেঁদেছেন (লূক ১৯:৪১) এবং তিনি লাসারের কবরে কেঁদেছেন (যোহন ১১:৩৫), কিন্তু তিনি কখনও মানুষের আচরণের জন্য কাঁদেননি, তারা তাঁকে শয়তান বলে ডাকুক বা তাঁর উপর থুথু ফেলুক। তিনি কখনও নিজের জন্য কাঁদেননি। শুধু তাই নয়, যখন তিনি ক্রুশ বহন করছিলেন এবং ক্রুশের পথে হোঁচট খাচ্ছিলেন, তখন আমরা লূক ২৩:২৭ পদে পড়ি যে, যখন তিনি ক্রুশ বহন করছিলেন, তখন এক বিরাট জনতা তাঁর পিছনে পিছনে চলছিল, আর কিছু মহিলা যখন তাঁকে বেত্রাঘাত ও প্রহার করতে দেখে বিলাপ করছিল এবং হাহাকার করে কাঁদছিল, আর যখন তিনি এই ভারী ক্রুশ বহন করছিলেন, তখন তাঁর মাথা ও পিঠ থেকে রক্ত ঝরছিল, আর তাঁর মাথায় কাঁটার মুকুট ছিল। আপনারা কি জানেন প্রভু যীশু তাদের দিকে ফিরে কী বললেন? “ওগো যিরূশালেমের কন্যাগণ, আমার জন্য কাঁদিও না, বরং আপনাদের এবং আপন আপন সন্তান-সন্ততিদের জন্য কাঁদ। আমি ঠিক আছি; হ্যাঁ, আমার পিঠ ছিঁড়ে গেছে, আমার মাথায় কাঁটার মুকুট আছে, এবং আমি একটি ভারী ক্রুশ বহন করছি। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আমাকে হত্যা করা হবে, কিন্তু আমি পুরোপুরি ঠিক আছি কারণ আমি ঈশ্বরের ইচ্ছার কেন্দ্রবিন্দুতে আছি” (লূক ২৩:২৮)!
আপনি যখন সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন, তখন কি আপনি এই মনোভাব রাখতে পারেন? “আমার জন্য কেঁদো না, আমি ঠিক আছি, কিন্তু যদি কাঁদতে চাও, নিজের জন্য এবং তোমার সন্তানদের জন্য কাঁদো - তাদের আধ্যাত্মিক অবস্থা দেখো।” তারা হলো ফরীশীরা, যারা পোশাক পরে এবং দেখতে খুবই জাঁকজমকপূর্ণ। কিন্তু তাদের আধ্যাত্মিক অবস্থা দেখুন। যেদিন খ্রীষ্ট ফিরে আসবেন এবং তারা পাহাড়গুলোকে বলবে, “আমাদের উপর পড়; এবং আমাদিগকে ঢাকিয়া রাখ”, সেদিন কী ঘটবে (লূক ২৩:৩০)? এই হলো প্রভু যীশুর মনোভাব। গানে যেমন বলা হয়েছে, তাঁর দুঃখের জন্য তাঁর কোন অশ্রু ছিল না, কিন্তু আমার দুঃখের জন্য তাঁর রক্তের ঘামের ফোঁটা ছিল।
প্রভু যীশুর একজন প্রকৃত শিষ্য শোক করেন কারণ তিনি খ্রীষ্টের মতো নন; তিনি যখন পাপ করেন এবং যখন ব্যর্থ হন তখন শোক করেন। লোকেরা তার সাথে কীভাবে আচরণ করে তা নিয়ে তিনি শোক করেন না। তিনি বিশ্বাস করেন যে এই পৃথিবীতে তার আহ্বান হল খ্রীষ্টের জন্য অপমান সহ্য করা। কিন্তু যখনই তিনি পাপ বা ব্যর্থতার মাধ্যমে প্রভুকে অসম্মান করেন তখন তিনি শোক করেন। যখন তিনি আধ্যাত্মিকভাবে উচ্চতর স্তরে পৌঁছান, তখন তিনি অন্যদের পাপের জন্য, অন্যদের ব্যর্থতার জন্যও শোক করেন, ঠিক যেমন প্রভু যীশু যিরূশালেমের জন্য কেঁদেছিলেন। এটি সেই একই শোকের কথা যা প্রভু যীশু বলেছিলেন। “ধন্য যাহারা শোক করে, কারণ তাহারা শক্তিশালী হবে।” হয়তো আমাদের মধ্যে কেউ কেউ শক্তিশালী হচ্ছে না, কারণ আমরা আমাদের পাপের জন্য শোক করছি না।
আরও উচ্চতর স্তর হল অন্যের পাপের জন্য শোক করা। প্রেরিত পৌল সেই উচ্চতর স্তরে পৌঁছেছিলেন। তিনি করিন্থীয়দের বলেন, যারা এত শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল, “আমার ভয় হয়, আমি পুনর্ব্বার আসিলে আমার ঈশ্বর তোমাদের কাছে আমাকে নত করেন” (২ করিন্থীয় ১২:২১)। ঈশ্বর কেন পৌলকে নত করেছিলেন? তিনি অত্যন্ত সৎ জীবনযাপন করেছিলেন এবং তিনি নিজের বিরুদ্ধে কোনও পাপের কথা জানতেন না। কিন্তু তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে যাহারা অতীতে পাপ করিয়াছিল, তথাপি আপনাদের কৃত অশুচি ক্রিয়া, ব্যভিচার ও লম্পটাচার বিষয়ে অনুতাপ কপ্রে নাই,এমন অনেক লোকের জন্য আমাকে বিলাপ করিতে হয়।” তিনি তাঁর মণ্ডলীর মধ্যে যা ছিল তার তালিকা করেছেন (পদ ২০): বিবাদ, ঈর্ষা, রাগ, প্রতিযোগিতা, পরনিন্দা, কাণ-ভাঙ্গানি, দর্প, গণ্ডগোল, ইত্যাদি। যারা নিজেদের ঈশ্বরের লোক বলে দাবি করত তাদের পাপের কথা স্মরণ করে তিনি রোদন করেছিলেন, কারণ তিনি ছিলেন তাদের আধ্যাত্মিক পিতা। এটা ঠিক যেন একজন জাগতিক পিতা যখন তার ছেলে খুব অসুস্থ থাকে তখন কাঁদেন। যদি পিতা আধ্যাত্মিকভাবে চিন্তা করতেন, তাহলে তিনি খুব দুঃখিত হতেন যে তার ছেলে মাদক বা খারাপ অভ্যাসের দিকে ঝুঁকছে।
পৌল ছিলেন করিন্থীয়দের একজন আধ্যাত্মিক পিতা, এবং প্রতিটি প্রকৃত খ্রীষ্টান মেষপালক বা পালককে তার পালের জন্য একজন আধ্যাত্মিক পিতা হওয়া উচিত। একজন আধ্যাত্মিক পিতার একটি লক্ষণ হল যে তিনি কেবল পালের সমালোচনা করবেন না, বরং তাদের জন্য কাঁদবেন যেমন পৌল করিন্থীয়দের জন্য কাঁদতেন। কেবলমাত্র এই ধরণের ব্যক্তিই আধ্যাত্মিক নেতা হওয়ার যোগ্য। যিশাইয় ৪৯:১০ (যিশাইয় ৪৯ আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের উপর একটি মহান অধ্যায়) বলে, “যিনি তাহাদের প্রতি দয়াকারী, তিনি তাহাদিগকে চরাইবেন।”
আধ্যাত্মিক নেতা হওয়ার যোগ্য কে? এমন একজন ব্যক্তি যার মানুষের প্রতি করুণা থাকে। আর তাই মথি ৫:৪ পদে “শোক” বলতে নিজের জন্য, নিজের পাপের জন্য, খ্রীষ্টের সাথে নিজের অযোগ্যতার জন্য এবং অন্যদের জন্য শোক করা বোঝায়। আমরা যদি এটা করি তাহলে আমরা শক্তিশালী হব, এবং এভাবে এগিয়ে গেলে আমরা অন্যদেরও শক্তিশালী করার শক্তি পাব।