“ধন্য যাহারা দয়াশীল, কারণ তাহারা দয়া পাইবে” (মথি ৫:৭)। প্রভু যীশু আমাদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, “হে আমাদের স্বর্গীয় পিতা, আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আপন আপন অপরাধীদের ক্ষমা করিয়াছি” এই প্রার্থনার অর্থ কী? এর অর্থ হল, যদি আমি কাউকে আমার বিরুদ্ধে করা পাপের জন্য ক্ষমা না করি, তাহলে প্রভুও আমাকে ক্ষমা করবেন না। আমি ঈশ্বরের কাছে যা প্রার্থনা করছি তা হল, “প্রভু, আমি যেমন অন্য ব্যক্তিকে ক্ষমা করেছি, তেমনি আমাকেও ক্ষমা করুন।” কিন্তু যদি আমি অন্য ব্যক্তিকে ক্ষমা না করে থাকি, তাহলে আমি আসলে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করছি যেন তিনি আমাকে ক্ষমা না করেন।
আপনি কি বুঝতে পারেন যে, যখন আপনি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেন, তখন আপনি প্রভুর কাছে আপনাকে ক্ষমা করতে চান, ঠিক যেমন আপনি অন্যদের ক্ষমা করেছেন? যখন আপনি অন্যকে ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি জানান, তখন আপনি প্রার্থনা করছেন, “আমি যেমন এই ব্যক্তিকে ক্ষমা করেছি, তেমনি আমাকেও ক্ষমা করো; যেহেতু আমি তাকে ক্ষমা করিনি, তুমিও আমাকে ক্ষমা করো না।” অথবা, “আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি কিন্তু সে আমার সাথে যা করেছে তার জন্য আমার তার উপর প্রচণ্ড ক্ষোভ আছে, তাই প্রভু, যখন তুমি আমাকে ক্ষমা করো, তখন তুমি আমার উপরও ক্ষোভ রাখতে পারো।”
যখনই মানুষ আমাদের কোনভাবে ক্ষতি করে বা আঘাত করে, তখনই আমাদের মনে দুটি পরস্পরবিরোধী চিন্তাভাবনা জাগে। একটি হলো করুণার চিন্তা এবং অন্যটি হলো বিচারের চিন্তা। পবিত্র আত্মা আমাদের ক্ষমা করতে এবং করুণা/দয়া করতে বলেন, কিন্তু আমাদের দেহ আমাদের সেই ব্যক্তির প্রতি কঠোর হতে এবং তাকে বিচার করতে বলে, এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে বলে যে তিনিও তার বিচার করবেন। কিন্তু যাকোব ২:১৩ পদ বলে, “কেননা যে ব্যক্তি দয়া করে নাই, বিচার তাহার প্রতি নির্দ্দয়।” আমি যদি কারো প্রতি নির্দয় হই, তাহলে ঈশ্বরও আমার প্রতি নির্দয় হবেন। আর বিচারের দিনে, আমাদের জন্য এক বিরাট আশ্চর্যের বিষয় হবে যখন ঈশ্বর সেইসব বিশ্বাসীদের উপর অত্যন্ত কঠোর বিচার আরোপ করবেন যারা অন্যদের ক্ষমা করেনি অর্থাৎ তারা ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।
যাকোব ২:১৩ আরও বলে, “দয়াই বিচারজয়ী হইয়া শ্লাঘা করে।” এর অর্থ হল, যখন আমার হৃদয়ে কারো বিচার করা এবং তার প্রতি করুণা দেখানোর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, তখন বিচার নয়, বরং করুণা/দয়া প্রাধান্য পাক। এটি ঈশ্বরের একজন দাসের লক্ষণ। বিচারের উপরে দয়া/ করুণা জয়লাভ করে।
রোমীয় ১২:১৯ পদে বলা হয়েছে, “তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না” কারণ এটা ঈশ্বরের কাজ। ঈশ্বর বলেন, “প্রতিশোধ লওয়া আমারই কর্ম। এটা তোমার নয়।” “প্রতিশোধ লওয়া আমারই কর্ম, আমিই প্রতিফল দিব,” প্রভু বলেন। তাই যদি আপনার শত্রু ক্ষুধার্ত থাকে, তাকে খাবার দেন। যদি সে তৃষ্ণার্ত থাকে, তাকে কিছু পান করান। আমাদের প্রতিশোধ নেওয়া উচিত নয়। আমাদের করুনা হওয়া উচিত এবং যেখানেই সম্ভব অন্যদের প্রতি ভালো করার চেষ্টা করা উচিত। বিচারের দিনে আমরা দেখতে পাব যে আমরা যদি অন্যদের ক্ষমা না করি, তাহলে ঈশ্বরও আমাদের ক্ষমা করবেন না। প্রভুর প্রার্থনায় এই নির্দেশটি প্রভু যীশু আবারও পুনরাবৃত্তি করেছেন।
“তোমরা যদি লোকদিগকে ক্ষমা না কর, তাহলে তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা তোমাদেরও অপরাধ ক্ষমা করিবেন না” (মথি ৬:১৫)। “তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা” এর অর্থ হল তিনি ইতিমধ্যেই আমাদের পিতা এবং আমরা ঈশ্বরের সন্তান। তিনি বলেননি, “ঈশ্বর তোমাকে ক্ষমা করবেন না।” যদি তিনি “ঈশ্বর” শব্দটি ব্যবহার করতেন, তাহলে আমরা বলতে পারতাম যে শব্দটি অবিশ্বাসীদের বোঝায়। কিন্তু লক্ষ্য করুন যে মথি ৬:১৫ পদে “তোমাদের পিতা” বলা হয়েছে। ঈশ্বর কি অবিশ্বাসীদের পিতা? না! কিন্তু যদি আপনি ঈশ্বরের নতুন জন্ম প্রাপ্ত সন্তান হোন, তাহলে ঈশ্বর আপনার পিতা। আর লেখা আছে, “তোমাদের পিতা তোমাদেরও অপরাধ ক্ষমা করিবেন না।” কেন? কারণ আপনি অন্য কাউকে ক্ষমা করেননি।
যদি আপনার পাপ ক্ষমা না করা হয়, তাহলে আপনি কিভাবে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন? আপনি কি মনে করেন আপনার মৃত্যুর পর সেগুলো ক্ষমা করা হবে? মৃত্যুর পর কি দ্বিতীয় সুযোগ আছে? যদি আপনি কাউকে ক্ষমা না করে মারা যান, তাহলে অনন্তকাল আপনার কী হবে? আমার কোন সন্দেহ নেই যে আপনি নরকে যাবেন, কারণ পৃথিবীতে কেউই তাদের পাপ ক্ষমা না করে স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে না। মৃত্যুর পর পাপ ক্ষমা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এখনই পাপ ক্ষমা করতে হবে, আর সেই কারণেই অন্যদের প্রতি সদয় হওয়া এত গুরুত্বপূর্ণ। এটা অন্য কারো প্রতি আপনার দয়া নয়। এটা আসলে আপনার নিজের প্রতি আপনার দয়া, কারণ আপনি চান ঈশ্বর আপনার প্রতি দয়া করুন।