WFTW Body: 

"কিন্তু যাহা যাহা আমার লাভ ছিল, সে সমস্ত খ্রীষ্টের নিমিত্ত ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিলাম। আর বাস্তবিক আমার প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি; তাঁহার নিমিত্ত সমস্তেরই ক্ষতি সহ্য করিয়াছি, এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি, যেন খ্রীষ্টকে লাভ করি, এবং তাহাঁতেই যেন আমাকে দেখিতে পাওয়া যায়; আমার নিজের ধার্মিকতা, যাহা বব্যস্থা হইতে প্রাপ, তাহা যেন আমার না হয়, কিন্তু যে ধার্মিকতা খ্রীষ্টে বিশ্বাস দ্বারা হয়, বিশ্বাসমূলক যে ধার্মিকতা ঈশ্বর হইতে পাওয়া যায়, তাহাই যেন আমার হয়; যেন আমি তাঁহাকে, তাঁহার পুনরুত্থানের পরাক্রম ও তাঁহার দুঃখভোগের সহভাগিতা জানিতে পারি, এইরূপে তাঁহার মৃত্যুর সমরূপ হই; কোন মতে যদি মৃতগণের মধ্য হইতে পুনরুত্থানের ভাগী হইতে পারি। আমি যে এখন পাইয়াছি, কিম্বা এখন সিদ্ধ হইয়াছি, তাহা নয়; কিন্তু যাহার নিমিত্ত খ্রীষ্ট যীশু কর্ত্তৃক ধৃত হইয়াছি, কোন ক্রমে তাহা ধরিবার চেষ্টায় দৌড়িতেছি। ভ্রাতৃগণ, আমি যে তাহা ধরিয়াছি, আপনার বিষয়ে এমন বিচার করি না; কিন্তু একটি কাজ করি, পশ্চাৎ স্থিত বিষয় সকল ভুলিয়া গিয়া সম্মুখস্থ বিষয়ের চেষ্টায় একাগ্র হইয়া লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়িতে দৌড়িতে আমি খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের কৃত উর্দ্ধদিকস্থ আহ্বানের পণ পাইবার জন্য যত্ন করিতেছি"। (ফিলিপীয় ৩:৭-১৪)

এটি একজন পরিপক্ক খ্রীষ্টীয় ব্যক্তির সমৃদ্ধ এবং পূর্ণ জীবনের দিকে অগ্রসর হওয়ার সাক্ষ্য। পৌলের ধর্মান্তরের পরে ত্রিশ বছর কেটে গেছে। এই বছরগুলিতে ঈশ্বর তাঁকে বহু মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করতে ব্যবহার করেছিলেন, লক্ষণ ও অলৌকিক চিহ্ন দিয়ে তাঁর সেবাকার্য্যকে দৃঢ়তার সাথে প্রমাণ করেছিলেন। প্রথম থেকেই পৌল সুসমাচারের কাজে নিজেকে অবিচ্ছিন্নভাবে ব্যয় করেছিলেন, অবিরাম যাত্রা এবং প্রচণ্ড কষ্ট সহ্য করেছিলেন। তিনি তাঁর প্রভুর সমরূপে ক্রমাগতভাবে বেড়ে উঠার সাথে সাথে পাপের উপর বিজয়ের বাস্তবতা জানতে পেরেছিলেন। এবং তাঁর অনেক আনন্দের মধ্যে একটি অনন্য অভিজ্ঞতা ছিল, যেমনটি তিনি বলেছিলেন যে, আধ্যাত্মিক সত্যের উল্লেখযোগ্য প্রকাশগুলি পাওয়ার জন্য তিনি তৃতীয় স্বর্গে উঠেছিলেন।

তবুও এই সমস্ত কিছুর শেষে তিনি বলেছিলেন যে ঈশ্বর তাঁর জীবনের জন্য যেসব পরিকল্পনা করেছিলেন সেগুলির সবকিছু তিনি এখনও সম্পন্ন করতে পারেননি। এখানে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খ্রীষ্টীয় ব্যক্তি তাঁর জীবনের শেষের দিকে পৌঁছে বলছেন যে তাঁকে এখনও লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলতে হবে। আফসোস! বেশিরভাগ বিশ্বাসীরা মনে করে, পরিত্রাণের শুরু এবং শেষ হয় নতুন জন্মের সাথে এবং এটি ঐশ্বরিক বিচার থেকে মুক্তির আশ্বাস দেয়। এমনটি প্রেরিতের পক্ষে নয়, বা অন্য কেউ যারা প্রকৃতপক্ষে তাঁর মতো খ্রীষ্টের সত্য শিষ্য হতে চায়। এখানে এই অনুচ্ছেদে তিনি তাঁর দৃঢ় বিশ্বাসে ঘোষণা করেন যে খ্রীষ্ট তাঁকে বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য নিয়ে এসেছিলেন। বিনিময়ে, তিনি যে কোনও মূল্যে সেই উদ্দেশ্য ধরে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। এটি একটি অপূর্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ সত্য যে, যখন প্রভু রূপান্তরিত করার সময় আমাদের ধরেন, তখন আমাদের আত্মাকে কেবলমাত্র নরকের আগুন থেকে বাঁচিয়ে স্বর্গে প্রবেশ করানোর থেকেও এর উদ্দেশ্য অনেক বেশি দূর প্রসারিত। যদি প্রেরিত পৌলের মতো একজন পরিপক্ব ব্যক্তি যাকে ত্রিশ বছরের অক্লান্ত খ্রীষ্টীয় সেবার শেষে বলতে হয়েছিল যে তিনি এখনও অর্জন করেননি, তবে তাঁর জীবনে ঈশ্বরের সমস্ত উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য এখনও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে সেই উদ্দেশ্য অবশ্যই কী বিশাল!

পৌল এই উত্তরণে আরও এগিয়ে গেছেন। ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে উপলব্ধি করা এবং এটি সম্পাদন করার এই চূড়ান্ত উদ্দেশ্যটির তুলনায় জগতের কাছে মূল্যবান হিসাবে বিবেচিত হওয়া সমস্ত কিছুই তাঁর কাছে মূল্যহীন আবর্জনা। তিনি এটিকে বিশ্বের সমস্ত কিছু ত্যাগ করার একটি যোগ্য পুরষ্কার হিসাবে বিবেচনা করেছেন (পদ ১৪)। যখন আমরা আমাদের চারপাশে তাকাই এবং দেখি যে বিশ্বাসীরা পার্থিব সম্পদের প্রতি লোভ দেখায় এবং বস্তুগত জিনিসগুলিতে আঁকড়ে থাকে, ঈশ্বরের বিষয়গুলির চেয়ে তাদের জীবনে এগুলিকে একটি বৃহত্তর স্থান দেয়, তখন আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হই যে তাদের খ্রীষ্টীয় মনোভাব পৌলের থেকে খুব দূরে সরে গেছে।

নরকের অগ্নিশিখা থেকে বাঁচার জন্য পরিত্রাণকে কেবলমাত্র কোনও বীমা পলিসির শর্তগুলির মতো চিন্তা করা হল আধ্যাত্মিক শৈশবের চিহ্ন। আমরা যখন আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ক হই, তখন আমরা বুঝতে পারি যে ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করেছেন যাতে আমরা প্রতিদিনই সেই পথে চলতে পারি যা তিনি ইতিমধ্যে আমাদের প্রত্যেকের জন্য অনন্তকাল থেকে পরিকল্পনা করেছিলেন (ইফিষীয় ২:১০)। সেই পথকেই পৌল তাঁর জীবনের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য বলে অভিহিত করেছিলেন। আমরা যদি ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেয়ে সন্তুষ্ট হয়ে থাকি, কিন্তু আমাদের জীবনের জন্য তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে দায়বদ্ধ না হই, তবে আমরা যতই পরিচ্ছন্নভাবে সুসমাচার প্রচার করি না কেন, আমরা ঈশ্বরের কাছে স্থায়ী মূল্যবোধের কিছুই অর্জন না করেই জীবন যাপন করব। অবশ্যই শয়তানের প্রথম লক্ষ্য হলো যে কোন ভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের অনুগ্রহ সম্পর্কে লোকদের অন্ধ করে দেওয়া, এইভাবে তাদের উদ্ধার হওয়া থেকে বাধা দেওয়া (২ করিন্থীয় ৪:৪)। কিন্তু যদি সে সেখানে সফল না হয়, তবে তার পরবর্তী লক্ষ্য হলো সেই নতুন বিশ্বাসীকে এই বিষয়ে অন্ধ করে দেওয়া যে ঈশ্বরের কাছে তাঁর জন্য একটি খুব নির্দিষ্ট পরিকল্পনার রয়েছে। অনেকাংশেই সে এখানে সফল হয়েছে। হাজার হাজার সত্যিকারের বিশ্বাসীরা রয়েছেন যারা কখনও আন্তরিকতার সাথে ঈশ্বরের ইচ্ছার অনুসন্ধান করেন না, এমনকি তাদের জীবনে বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও।

ফিলিপীয়দের এই রচনাংশে খ্রীষ্টীয় জীবনকে চিত্রিত করা হয়েছে যার মধ্যে আমাদের ক্রমাগত এগিয়ে যেতে হবে। পৃথিবীতে প্রাপ্ত আধ্যাত্মিক পরিপক্কতার কোনও মাত্রা এই নিত্য জরুরি প্রয়োজন থেকে আমাদের কখনই মুক্ত করতে পারে না। কেননা অনেক বিশ্বাসী এই শিক্ষাকে অবহেলা করেছেন সেই কারণে তাদের কোন জীবন্ত সাক্ষ্য নেই। তাদের একমাত্র সাক্ষ্য হলো সুদূর অতীতের একটি অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত যখন কোনও আশীর্বাদময় দিনে তারা সম্ভবত হাত বাড়িয়েছিল বা কোনও প্রচারমূলক সভায় সিদ্ধান্ত-কার্ডে স্বাক্ষর করেছিল। এটি বিস্ময়কর ছিল, কিন্তু এর পরে কিছুই হয়নি! হিতোপদেশ ২৪: ৩০-৩৪ পদে, নষ্ট হয়ে যাওয়া একটি বাগানের ছবিটি, পরিত্রাণের পরে শিথিল হওয়া এক ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করে। একটি বাগানকে যদি আগাছা এবং কাঁটা গাছ থেকে রক্ষা করতে হয় তবে এটির নিয়মিত নিড়ানি এবং যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, - এবং মানুষের আত্মার ক্ষেত্রেও তাই করতে হয়।