পারস্পরিক ক্ষমার ক্ষেত্রটি বিবেচনা করুন। যে ব্যক্তি নিজের সত্ত্বাকে অস্বীকার করে সে কখনও অন্যের প্রতি তিক্ততা বা ক্ষোভ পোষণ করতে পারে না অথবা অন্য মানুষকে ক্ষমা করতে ব্যর্থ হতে পারে না। ক্ষোভ কেবল সেইসব হৃদয়েই থাকে যেখানে নিজ-আত্মা এখনও সিংহাসনে বসে আছে।
প্রভু যীশু একবার একজন দাসের দৃষ্টান্ত বলেছিলেন যার প্রভু তার একটি বড় ঋণ ক্ষমা করেছিলেন, কিন্তু তার সহকর্মী দাসের একটি ছোট ঋণ ক্ষমা করেননি। তার মনিব এই কথা শুনে তাকে নির্যাতনকারীর হাতে তুলে দিলেন। "সুতরাং" প্রভু যীশু বললেন, "আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের প্রতি এইরূপ করিবেন, যদি তোমরা প্রতিজন অন্তঃকরণের সহিত আপন আপন ভ্রাতাকে ক্ষমা না কর" (মথি ১৮:৩৫)। শাস্তির জন্য নির্যাতনকারীদের হাতে তুলে দেওয়াকে আপনি যেভাবেই ব্যাখ্যা করুন না কেন, প্রভু যীশু ঠিক এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন যে যারা ক্ষমাহীন মনোভাব গ্রহণ করে অথবা এমনকি তাঁর সহ-বিশ্বাসীদের কারো বিরুদ্ধে ক্ষমাহীন মনোভাব পোষণ করে তাদের ক্ষেত্রেও তা ঘটবে। লক্ষ্য করুন, প্রভু যীশু জোর দিয়েছিলেন যে এই ক্ষমা হৃদয় থেকে হওয়া উচিত। অন্য কথায়, এর অর্থ ছিল এটি কোনও বাহ্যিক (ধর্মীয়) আচার-অনুষ্ঠান নয় বরং হৃদয়ের সত্য থেকে আসা ক্ষমা। যদি আপনার মনে এখনও কারো প্রতি তিক্ততা থাকে, আর বললেন যে আপনি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তাহলে তা অর্থহীন।
যখন আমরা ঈশ্বরের প্রেমের আইন লঙ্ঘন করি, তখন আমরা খ্রীষ্টের দেহের কাজকে বাধাগ্রস্ত করি। কিন্তু এটাই সব কিছু না। এতে আমরা নিজেদেরও ক্ষতি করি। 'None of These Diseases,'বইতে ডঃ এস. আই. ম্যাকমিলান বলেছেন, "যে মুহূর্তে আমি একজন মানুষকে ঘৃণা করতে শুরু করি, তখনই আমি তার দাস হয়ে যাই। এরপর আমি আমার কোনও কাজেই আনন্দ পাই না, কারণ সেই ব্যক্তি আমার চিন্তাভাবনাও নিয়ন্ত্রণ করে। আমার ঘৃণা আমার শরীরের ভেতরে এতটাই উত্তেজনার সৃষ্টি করে যে মাত্র কয়েক ঘন্টা কাজ করার পরেই আমি ক্লান্ত বোধ করি। আমি আগে যে কাজটি উপভোগ করতাম তা এখন একঘেয়েমি। এমনকি ছুটির দিনগুলিও আমাকে কোন আনন্দ দেয় না। আমি যাকে ঘৃণা করি সে আমাকে সর্বত্র অনুসরণ করে বেড়ায় এবং আমাকে যন্ত্রণা দেয়। আমি আমার মনের উপর থেকে এর অত্যাচারী দখল ঝেড়ে ফেলতে পারছি না।"
লুকানো ক্ষোভ এবং তিক্ততা আজ বিশ্বজুড়ে অনেক খ্রীষ্টান এবং খ্রীষ্টীয় দাসদের কার্যকারিতা এমনকি শারীরিক স্বাস্থ্যকেও নষ্ট করছে।
প্রভু যীশু শিক্ষা দিয়েছিলেন যে যখন কোন ভাই মনে করেন (সঠিক হোক বা ভুল) যে আমরা তাকে আঘাত করেছি, তখন আমাদেরই তার সাথে সহভাগিতা পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে।
"যদি তুমি তোমার নৈবেদ্য বেদীর কাছে আন," যীশু বলেছিলেন, "আর যদি মনে পড়ে যে তোমার ভাইয়ের তোমার বিরুদ্ধে কিছু আছে, তাহলে তোমার নৈবেদ্য সেখানেই রেখে যাও, প্রথমে তোমার ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাও এবং তার সাথে মিলিত হও, এবং তারপর এসে ঈশ্বরের কাছে তোমার নৈবেদ্য উৎসর্গ করো" (মথি ৫:২৩,২৪, TLB অনুবাদ)।
একইভাবে, তিনি বলেছিলেন, "তোমরা যখনই প্রার্থনা করতে দাঁড়াও, যদি তোমাদের কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকে, তাহলে তাকে ক্ষমা করো, যেন তোমাদের স্বর্গের পিতাও তোমাদের ক্ষমা করেন" (মার্ক ১১:২৫ TLB অনুবাদ)।
প্রভু যীশু আমাদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিটি পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে অস্বীকার করতে, আমাদের অহংকার ত্যাগ করতে এবং অপমানের লজ্জা গ্রাস করতে, এবং যেখানেই ভাঙা সহভাগিতা আছে সেখানে শান্তি স্থাপন করতে। কখনও কখনও, পুনর্মিলনের জন্য আমাদের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, একজন ভাইয়ের মনোভাব রূঢ় এবং ক্ষমাহীন থাকতে পারে। কিন্তু যদি আমরা সত্যিকারের হৃদয় দিয়ে চেষ্টা করে থাকি, তাহলে আমরা ঈশ্বরের সামনে আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।
প্রভু যীশুর কথা স্পষ্ট করে দেয় যে, যদি আমরা তাঁর শরীরের কোন অংশে আঘাত করে থাকি এবং তার সাথে মিলিত হওয়ার কোন চেষ্টা না করি, তাহলে ঈশ্বর আমাদের উপাসনা, আমাদের সেবা বা আমরা যা বলি উৎসর্গ করি তা তিনি গ্রহণ করবেন না। মাঝে মাঝে আমি ভাবি যে কতজন খ্রীষ্টান প্রভু যীশুর এই কথাগুলিকে গুরুত্ব সহকারে নেয়। অনেক মানুষ ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলিকে হালকাভাবে নেয় এবং এর ফলে খ্রীষ্টের দেহে আধ্যাত্মিক মৃত্যু ডেকে আনে।
পৌল আমাদের বলেন, 'ক্ষমা করার আরেকটি কারণ' "হলো আমাদের নিজেদেরকে শয়তানের চক্রান্তে না পড়ার হাত থেকে রক্ষা করা" (২ করিন্থীয় ২:১১- TLB অনুবাদ)।