WFTW Body: 

মথি ২৪ অধ্যায়ে প্রভু যীশু যখন শিষ্যদের তাঁর পুনরাগমনের বিষয়ে কথা বলেছিলেন, তিনি একাধিকবার জোর দিয়েছিলেন যে তাদের সতর্ক থাকা উচিৎ (মথি ২৪:৪২, ৪৪; ২৫:১৩)। আধ্যাত্মিকভাবে সর্বদা সচেতন এবং প্রস্তুত থাকাই হলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - ভবিষ্যদ্বাণীমূলক তথ্যগুলির জ্ঞান নয়। মথি ২৫ অধ্যায়ে (যা মথি ২৪ অধ্যায়ের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি অনুসরণ করে), প্রভু যীশু তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন যেখানে তাঁর পুনরাগমনের জন্য প্রস্তুত থাকতে আমাদের সতর্ক ও বিশ্বস্ত হতে বলা হয়।

১. অভ্যন্তরীণ জীবনে বিশ্বস্ততা

(মথি ২৫:১-১৩)। এই দৃষ্টান্তে, প্রভু যীশু দশ কুমারীর সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। লক্ষ্য করুন, তাদের মধ্যে কেউই বেশ্যা ছিল না (আধ্যাত্মিক বেশ্যাবৃত্তির সংজ্ঞা যাকোব ৪:৪ পদে দেখুন)। তারা সবাই কুমারী ছিল। অন্য কথায়, মানুষের সামনে তাদের ভাল সাক্ষ্য ছিল। তাদের সবার প্রদীপ (দীপ্তি) উজ্জ্বল ছিল (মথি ৫:১৬)। তাদের ভাল কাজগুলি অন্যরা দেখেছিল। তবুও এই সমস্ত কুমারীর মধ্যে কেবল পাঁচজনই বুদ্ধিমতি ছিল। তবে এটি শুরুতেই সবার কাছে স্পষ্ট ছিল না। কেবল পাঁচ জন তাদের পাত্রে তৈল নিয়েছিল (মথি ২৫:৪)।

পাত্রের সেই তৈল রাত্রে দৃশ্যমান ছিল না, যেমন প্রদীপটি ছিল, এবং যা ঈশ্বরের সামনে আমাদের গুপ্ত জীবনের কথা বর্ণনা করে যা লোকেরা এই পৃথিবীর অন্ধকারে দেখতে পায় না। আমাদের সবার একটি পাত্র আছে। তার মধ্যে আমাদের কোন তৈল আছে কিনা সেটাই প্রশ্ন। পুরো বাইবেল জুড়ে পবিত্র আত্মার প্রতীক হিসাবে তৈলকে ব্যবহৃত করা হয়েছে এবং এখানে ঈশ্বরের সেই জীবনকে বোঝান হয়েছে যা পবিত্র আত্মা আমাদের আত্মার সাথে যোগাযোগ করেন। সেই জীবনের বাহ্যিক প্রকাশ হল জ্যোতি (দীপ্তি) (যোহন ১:৪)। অভ্যন্তরীণ সামগ্রী হলো তৈল। অনেকে কেবলমাত্র তাদের বাহ্যিক সাক্ষ্যের মাধ্যমে সন্তুষ্ট থাকেন। এটি তাদের বোকামি। এটি ক্লেশ এবং পরীক্ষার সময়ে আমরা দেখতে পাই যে কেবলমাত্র বাহ্যিক জ্যোতি যথেষ্ট নয়। বিজয়ের মধ্য দিয়ে চলার জন্য এক ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ বিষয়বস্তু হিসাবে ঐশ্বরিক জীবন থাকা প্রয়োজন।

"সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত" (হিতোপদেশ ২৪:১০)। জীবনের সঙ্কটগুলি আমাদের দেখায় যে আমরা কতটা শক্তিশালী বা দুর্বল। এই দৃষ্টান্তের মধ্যে, সঙ্কটটি ছিল যে বর তার আগমনকে বিলম্ব করেছিলেন। এটি এমন সময় যা আমাদের আধ্যাত্মিকতার বাস্তবতা প্রমাণ করে। যার বিশ্বাস আছে সে শেষ অবধি স্থায়ী হয় এবং রক্ষা পায়। এটি এমন সময় যা আরও প্রমাণ করে যে কার জীবনে অভ্যন্তরীণ সামগ্রী রয়েছে এবং কার নেই। অনেকে সেই বীজের মতো যা অবিলম্বে অঙ্কুরিত হয়েছিল, কিন্তু কোন অভ্যন্তরীণ জীবন পায় না। তাদের অন্তরে মাটির গভীরতা নেই (মার্ক ৪:৫)। এ কারণেই নতুন বিশ্বাসীদের আধ্যাত্মিকতা বা তাদের আন্তরিকতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করা কঠিন। সময় আমাদের সমস্ত কিছু প্রকাশ করবে, যদি আমাদের অপেক্ষা করার ধৈর্য্য থাকে। খ্রীষ্টের পুনরাগমনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার উপায় হলো ঈশ্বরের মুখের সম্মুখে বিশুদ্ধতা এবং বিশ্বস্ততার একটি অভ্যন্তরীণ জীবন থাকা - আমাদের চিন্তাভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্দেশ্যগুলিতে যা আমাদের চারপাশের লোকেরা দেখতে পায় না। আমাদের যদি এটি না থাকে আর আমরা যদি নিজেকে খ্রীষ্টের পুনরাগমনের জন্য প্রস্তুত বলে মনে করি তবে আমরা নিজেকে প্রতারিত করছি।

২. আমাদের সেবাকার্য্যে বিশ্বস্ততা

(মথি ২৫:১৪-৩০)। দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে, ঈশ্বর আমাদের যে প্রতিভা দিয়েছেন তা বিশ্বস্তভাবে ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিভা পার্থিব সম্পত্তি, অর্থ, সহজাত সামর্থ্য (যোগ্যতা), জীবনের সুযোগ, আধ্যাত্মিক উপহার, ইত্যাদি উপস্থাপন করে। এই ক্ষেত্রে সকলেই সমান নয় - কারণ আমরা এই দৃষ্টান্তে দেখতে পাই যে একজন পাঁচটি পেয়েছিল, অন্যজন দুটি এবং আর একজন মাত্র একটি পেয়েছিল। তারা যা পেয়েছিল তা দিয়ে বিশ্বস্ত থাকার জন্য সকলেরই কাছে কিন্তু একই সমান সময় ছিল। যাকে বেশি দেওয়া হয়, তার কাছ থেকে আরও বেশি চাওয়া হয়। সুতরাং যিনি তার দুই গুণকে চার গুনে পরিণত করেছিলেন, তিনি তার পুরস্কার পেয়েছিলেন ঠিক তার মতই যিনি তার পাঁচ গুনকে দশ গুনে পরিণত করেছিলেন। যিনি তার প্রতিভা 'মাটিতে সমাধিস্থ' করে রেখেছিলেন তার উপরে দণ্ডাজ্ঞা হয়েছিল (মথি ২৫:১৮) - ইনি সেই ব্যক্তি যিনি তার ঈশ্বর-প্রদত্ত প্রতিভা এই বিশ্বের জন্য ব্যবহার করেছিলেন, ঈশ্বরের জন্য নয়। কেউ বলতে পারেন না যে তিনি কিছুই পাননি - কারণ ঈশ্বরের কাছ থেকে সবাই কিছু না কিছু প্রতিভা পেয়েছেন। প্রশ্নটি হচ্ছে আমরা এই প্রতিভাগুলি কীসের জন্য ব্যবহার করি। আমরা নিজের জন্য যা ব্যবহার করি তা মাটিতে সমাধিস্থ করা প্রতিভার সমতুল্য। আমরা একমাত্র ঈশ্বরের গৌরবের জন্য যা ব্যবহার করি তা অনন্তকালীন ঐশ্বর্য (সম্পদ) হিসাবে গণ্য হবে। এই গুনমান দ্বারা আমরা বিশ্বাসীদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের দারিদ্র্যতা দেখতে পারি। আমাদের উদ্দেশ্যটি হওয়া উচিৎ "ঈশ্বরের জন্য সমস্থ কিছু এবং নিজের জন্য কিছুই নয়"। তাহলে আমরা খ্রীষ্টের পুনরাগমনের জন্য প্রস্তুত থাকব। আমরা যদি আমাদের সমস্ত কিছু ত্যাগ না করি, তবে আমরা প্রভু যীশুর শিষ্য হতে পারি না। যে ব্যক্তি প্রভুর জন্য তাঁর সমস্ত ঈশ্বর-প্রদত্ত সম্পদ এবং উপহার ব্যবহার না করেন, তিনি যদি খ্রীষ্টের পুনরাগমনের জন্য প্রস্তুত থাকার দাবি করেন তবে তিনি কেবল নিজেকে প্রতারিত করছেন।

৩. আমাদের সহবিশ্বাসীদের সেবা করার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা

(মথি ২৫:৩১-৪৬)। অন্তিম ভাগে, আমাদের সহবিশ্বাসীদের প্রয়োজনের প্রতি আমাদের মনোভাবের বিষয়ে প্রভু যীশু আলোচনা করেন। সেই প্রয়োজন আধ্যাত্মিক বা পার্থিব হতে পারে। এখানে আমরা দেখছি যে কেউ কেউ স্বর্গরাজ্যের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন কারণ তারা তাদের সহবিশ্বাসীদের সেবা করেছিলেন প্রভুর সেবা মনে করে। তাদের সেবাকার্য্যটি এতটাই গোপনে ছিল যে তাদের ডান হাত কী করছে তা বাম হাত জানত না (মথি ৬:৩)। এমন কি যখন প্রভু তাদের কৃত ভাল কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেন তখন তারা তা মনে করতে পারছেন না! (মথি ২৫:৩৮)। প্রভু যীশু এখানে আরও শিক্ষা দিয়েছিলেন যে আমরা তাঁর ভ্রাতৃগণের মধ্যে ক্ষুদ্রতমের প্রতি যেকোন সেবা করি, তা তাঁর প্রতি সেবা হিসাবে বিবেচনা করা হয় (মথি ২৫:৪০)। এটি উল্লেখযোগ্য যে তিনি এখানে ক্ষুদ্রতমের কথা বলেছেন, কারণ আমাদের প্রবণতা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাসীদের সেবা করা এবং দরিদ্র ও ঘৃণিত লোকদের উপেক্ষা করা! যারা ভোজন পান, ক্রয় বিক্রয়, নিজের জন্য বৃক্ষ রোপণ ও গৃহ নির্ম্মান করায় ব্যস্ত থাকবে, তারা প্রভু যীশুর পুনরাগমনের সময় অবশ্যই পিছনে পড়ে থাকবে (লূক ১৭:২৮, ৩৪)। কেবলমাত্র তাদের গ্রহণ করা হবে, যাদের প্রভুর প্রতি সেবাকার্য্যটি তাদের সহবিশ্বাসীদের সেবা করার ক্ষেত্রে প্রেমময় উদ্বেগের সাথে জড়িত। অন্য একটি অনুচ্ছেদে (মথি ৭:২২-২৩), যীশু অন্য দলের লোকদের কথা বলেছিলেন - যারা এই দলের বিপরীত। এই লোকেরা প্রভুর নামে যা কিছু ভাল কাজ করেছে সেগুলি তারা স্মরণে রাখে। তারাও বিচারের আসনের সামনে রয়েছে এবং তারা প্রভুকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে তারা ভূত ছাড়িয়েছে, প্রচার করেছে, যীশুর নামে অসুস্থদের সুস্থ করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তারা প্রভুর কর্তৃক অগ্রাহ্য হয়েছে, যদিও তারা এই সমস্ত কাজ করেছিল, কারণ ঈশ্বরের সম্মুখে তাদের সর্বপ্রথম প্রয়োজনীতা, অভ্যন্তরীণ জীবনে পবিত্রতার অভাব ছিল। তারা তাদের এই উপহারগুলিকেই মহান বিষয় মনে করেছিল।