WFTW Body: 

নতুন নিয়মে দুজন ব্যক্তি আছেন যারা বলেছিলেন, “আমাকে অনুসরণ করো।” পুরাতন নিয়মের কোন ভাববাদী কখনও বলতে পারেননি যে, আমাকে অনুসরণ করো। তাদের জীবনে অনুসরণ করার মতো কোন উদাহরণ ছিল না। না যিশাইয়, না মোশি; কেউই ছিল না। তারা কেবল প্রচার করতে পারত “আমার মাধ্যমে ঈশ্বর যা বলেন তা শোন। এগুলো ঈশ্বরের বাক্য।” কিন্তু তাদের কেউই বলতে পারত না “আমার উদাহরণ অনুসরণ করো।” মোশি তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করেছিলেন এবং তার ছেলের তক্‌ছেদ না করে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিলেন। এই সমস্ত লোক তাদের জীবনে ভালো উদাহরণ ছিল না, কিন্তু তারা সঠিকভাবে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করতে পারত এবং বলতে পারত, “সদাপ্রভু এই কথা বলেন।” কিন্তু নতুন নিয়মে, আমরা কেবল বলি না, “সদাপ্রভু এই কথা বলেন।” আমরা কেবল বলি না, “এসো এবং ঈশ্বর কী বলছেন তা শোনো।”

নতুন নিয়মে আমরা বলি, “এসো এবং ঈশ্বর কী করেছেন তা দেখো,” যা পুরাতন নিয়মের ভাববাদীদের এই কথার থেকে আলাদা, “এসো এবং ঈশ্বর কী বলছেন তা শোনো।” নতুন নিয়মের ভাববাদীরা বলেন, “এসো এবং দেখো ঈশ্বর আমার জীবনে কী করেছেন। এসো এবং দেখো ঈশ্বর আমার পরিবারে কী করেছেন। এসো এবং দেখো ঈশ্বর আমার মধ্যে কী করেছেন। এখন আমি তোমাকে প্রভু যীশুর আদেশ পালন করতে শেখাতে চাই, যাতে তিনি তোমার জীবনেও তা করতে পারেন। আমাকে অনুসরণ করো।”

বাইবেলে প্রভু যীশুই প্রথম ব্যক্তি যিনি বলেছিলেন, “আমাকে অনুসরণ করো”। তারপর আমরা পৌলকে বলতে শুনি, “যেমন আমি খ্রীষ্টের অনুকারী, তোমরা তেমনি আমার অনুকারী হও”। (১ করিন্থীয় ১০:৩৪)। তিনি ফিলিপীয় ৩:১৭ পদে আরও বলেন, “ভাতৃগণ, তোমরা সকলে মিলিয়া আমার অনুকারী হও, এবং আমরা যেমন তোমাদের আদর্শ, তেমনি আমাদের ন্যায় যাহারা চলে, তাহাদের প্রতি দৃষ্টি রাখ। তোমরাও তাহাদের অনুকারী হও, কারণ আমি খ্রীষ্টকে অনুকরী।” খ্রীষ্ট হলেন একজন ব্যক্তির মতো যিনি ১০,০০০ মিটার উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করেছেন। তিনি চূড়ায় পৌঁছেছেন, এবং আমরা তাঁকে অনুসরণ করছি। পৌল সম্ভবত আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। তিনি সম্ভবত ৩,০০০-৪,০০০ মিটার উপরে উঠেছে। তিনি তাঁর পিছনের লোকদের বলেন, “আমাকে অনুসরণ করো।” আমি হয়তো মাত্র ৫০০ মিটার উপরে উঠেছি। আমি পাহাড়ের আরও নিচে থাকা লোকদের বলতে পারি, “আমাকে অনুসরণ করো।” যারা আমার চেয়ে এগিয়ে আছেন, যারা খ্রীষ্টকে অনুসরণ করে চূড়ায় পৌঁছাচ্ছেন, আমি তাদের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি। চূড়াটি খ্রীষ্টের মতো হওয়া উচিত। এটাই লক্ষ্য। লক্ষ্য পৃথিবীর সকল অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করা নয়, বরং আমাদের জীবনে সম্পূর্ণরূপে যীশু খ্রীষ্টের মতো হয়ে ওঠা,, এবং সেই জীবন আমাদেরকে আরও বৃহত্তর পরিচর্যার দিকে পরিচালিত করবে।

আমাদের এটা বুঝতে হবে। প্রভু যীশু আমাদেরকে তাঁর মতো করে লোকেদের কাছে গিয়ে একই পরিচর্যা করতে বলার আদেশ দেননি। যদি পৌল পরিচর্যার কথা বলতেন, তাহলে আমরা “আমার অনুসরণ করো” এই বলে তাকে অনুসরণ করতে পারতাম না। তিনি আমাদের প্রেরিত হতে বলছিলেন না। সবাই কীভাবে প্রেরিত হতে পারে? সবাই কীভাবে পৌলের মতো ভাববাদী বা প্রচারক হতে পারে? তিনি বলেছিলেন, “আমার জীবন অনুসরণ করো। আমি যেমন খ্রীষ্টকে অনুসরণ করি, তেমনি আমাকেও অনুসরণ করো।” এমনকি প্রেরিত পৌলও খ্রীষ্টের সেই পরিচর্যার অনুকরণ করতে পারেননি যেখানে তিনি সমস্ত অসুস্থকে সুস্থ করেছিলেন, জলের উপর দিয়ে হেঁটেছিলেন, অথবা পাঁচটি রুটি দিয়ে ৫,০০০ লোককে খাওয়াতেন। এমনও সময় ছিল যখন পৌল বলেছিলেন যে তিনি নিজেও ক্ষুধার্ত (২ করিন্থীয় ১১:২৭)। যখন তার অভাব ছিল, তখন তিনি ঠান্ডায় কাঁপতেন এবং তীমথিয়কে একটি কম্বল আনতে বলেছিলেন (২ তীমথিয় ৪:১৩)। প্রথম দিনের খ্রীষ্টানরা নানাভাবে কষ্টভোগ করেছিলেন। সিংহের কাছে নিক্ষেপ করার সময় তারা সুরক্ষিত ছিল না, কিন্তু তারা প্রভু যীশুর অনুসরণ করেছিল যিনি তাঁর ক্রুশবিদ্ধকরণের সময় সুরক্ষা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আমাদের তাঁদের জীবন অনুসরণ করতে হবে। আমরা প্রভু যীশুর পরিচর্যায় তাঁকে অনুসরণ করতে পারি না।

এর সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ হল তাঁর পরিচর্যার সাথে জগতের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ জড়িত ছিল। এই পৃথিবীতে আমরা কীভাবে তাঁর পরিচর্যা অনুসরণ করতে পারি? আমরা তা করতে পারি না। অতএব, আমাদের তাঁর জীবন অনুসরণ করা উচিত। আমাদের প্রভু যীশুর জীবন এবং তাঁর পরিচর্যার মধ্যে পার্থক্য করা দরকার। এক বাক্যে প্রভু যীশু বলতে পারতেন যে তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করেছেন - তাঁর জীবনে এবং তাঁর পরিচর্যায় উভয় ক্ষেত্রেই। আমরা আমাদের জীবনে এবং আমাদের পরিচর্যায়ও ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে পারি। আমাদের জীবনে, আমাদের প্রভু  যীশুর উদাহরণকে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। পৌলও তাই করেছিলেন। আমাদের পরিচর্যায়, খ্রীষ্টের দেহে আমাদের যে নির্দিষ্ট কাজ দেওয়া হয়েছে তা সম্পন্ন করতে হবে। যদি আমরা প্রভু যীশুর জীবন এবং তাঁর পরিচর্যার মধ্যে এই পার্থক্যটি বুঝতে পারি, তাহলে আমরা দেখতে পাব যে আমরা প্রতারণা থেকে সুরক্ষিত এবং অনেক অবাস্তবতা এবং ভণ্ডামি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। খ্রীষ্টানদের মধ্যে অনেক ভণ্ডামি রয়েছে যারা ভান করে যে তারা প্রভু যীশুর মতোই কাজ করছে।

লোকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে, “শেষ নৈশভোজের পর যীশু যখন বলেছিলেন, ‘সত্য সত্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে আমাতে বিশ্বাস করে, আমি যে সকল কার্য্য করিতেছি, সেও করিবে, এমন কি, এ সকল হইতেও বড় বড় কার্য্য করিবে, কেননা আমি পিতার নিকটে যাইতেছি’ তখন এর অর্থ কী? ‘আমি পিতার নিকটে নিবেদন করিব, এবং তিনি এক সহায় (পবিত্র আত্মা) তোমাদিগকে দিবেন’ (যোহন ১৪:১২,১৬)?” তিনি বলেছিলেন যে যখন পবিত্র আত্মা আসবেন, তখন তোমরা তাঁর কাজ এবং আরও বড় কাজ করতে সক্ষম হবে। আমাদের এটি বুঝতে হবে।

যদি আপনি কাউকে জিজ্ঞাসা করেন যে প্রভু যীশু কী করেছিলেন, তারা অবিলম্বে অসুস্থদের সুস্থ করার, মৃতদের জীবিত করার, জলের উপর দিয়ে হাঁটার, ৫০০০ লোককে পাঁচটি রুটি খাওয়ানোর কথা বলবেন। কিন্তু আপনি প্রভু যীশুর জীবনের শেষ ১০% কথা বলছেন! জীবনের শেষ সাড়ে তিন বছরে তিনি এটাই করেছিলেন। তিনি কি শুধু এটুকুই করেছিলেন? তাঁর জীবনের বাকি ৯০% কি হবে? জীবনের সেই ৯০% সময় তিনি কী করেছেন? তাঁর সমগ্র জীবনে তিনি কী করেছেন? এক বাক্যে: তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করেছিলেন। প্রভু যীশু নিজেই যোহন ৬:৩৮ পদে বলেছেন, “আমি মৃতদের জীবিত করতে, অসুস্থদের সুস্থ করতে, অথবা জলের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে স্বর্গ থেকে আসিনি। আমার ইচ্ছা সাধন করতে আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসি নাই; কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহারই ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য।”

সংক্ষেপে বলতে গেলে “প্রভু যীশুর কার্য্য”। তিনি নিজের ইচ্ছাকে “না” বলতে এবং তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করতে এসেছিলেন। তাঁর পিতার ইচ্ছার মধ্যে ছিল পর্বতে ধর্মোপদেশ প্রচার করা, সমস্ত অসুস্থকে সুস্থ করা, কখনও কখনও এর মধ্যে ছিল বৈৎসৈদার পুকুরে মাত্র একজনকে সুস্থ করা, জলের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, পিতরকে জলের উপর দিয়ে হাঁটানো এবং পাঁচটি রুটি দিয়ে ৫,০০০ লোককে খাওয়ানো। পৌলের জন্য পিতার ইচ্ছার মধ্যে জলের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া বা ৫,০০০ লোককে পাঁচটি রুটি খাওয়ানো বা লাসারের মতো চার দিন ধরে মৃত একজন মানুষকে জীবিত করা অন্তর্ভুক্ত ছিল না, বরং এর মধ্যে পিতার ইচ্ছা পালন করা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এটাই মূল কথা। প্রভু যীশু যে কাজগুলি করেছিলেন তা এক বাক্যে ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল। পৌলও একই কাজ করেছিলেন। তাঁর কাছে, ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল ভ্রমণ করা, মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করা এবং শাস্ত্র লেখা। প্রভু যীশু কখনও কোনও শাস্ত্র/ধর্মগ্রন্থ লেখেননি, কিন্তু পৌল লিখেছিলেন। আমাদের ধর্মগ্রন্থ লেখার জন্য আহ্বান করা হয়নি। কিন্তু আমাদের পিতার ইচ্ছা পালন করার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। প্রভু যীশু তাই করেছিলেন। এর মধ্যে যোষেফ এবং মরিয়মের ঘরে তাঁর বাধ্যতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। যদি মরিয়ম তাঁকে কূপ থেকে এক বালতি জল আনতে বলেন, তাহলে যীশু এক বালতি জল পূর্ণ করে এনেছিলেন। ছোট-বড় উভয় ক্ষেত্রেই পিতার প্রতি আনুগত্য: এগুলোই যীশুর কাজ। আমরাও একই কাজ করতে পারি।