ঈশ্বর যে এখনও মণ্ডলীতে কাজ করছেন তার দুটি প্রমাণ হল, তিনি পূর্ণ হৃদয়ের শিষ্যদের এতে যোগ করেন এবং যারা প্রভুকে অনুসরণ করতে আগ্রহী নয় তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। আমরা শাস্ত্রে পড়ি:
“যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছিল, প্রভু দিন দিন তাহাদিগকে তাহাদের সহিত সংযুক্ত করিতেন” (সেই সময়ে, যারা শিষ্যত্বের বার্তা গ্রহণ করেছিল কেবল তাদেরই “পরিত্রাণ” হয়েছে বলে মনে করা হতো) (প্রেরিত ২:৪৭)।
প্রভু বলেন, “আমি তোমার দর্পযুক্ত উল্লাসকারী লোকদিগকে তোমার মধ্য হইতে হরণ করিব; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু (তখন) তোমার মধ্যবর্ত্তী, সেই বীর পরিত্রাণ করিবেন, তিনি তোমার বিষয়ে পরম আনন্দ করিবেন; তিনি প্রেমভরে মৌনী হইবেন, আনন্দ দ্বারা তোমার বিষয়ে উল্লাস করিবেন” (সফনিয় ৩:৮-১৭)।
আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে আমদের মণ্ডলীর শুরু থেকেই এই উভয় বিষয়ে কাজ করতে দেখেছি।
ভারতের মতো এক বিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যার দেশে, যারা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য হতে চান তাদের খুঁজে বের করা এক লক্ষ খড়ের গাদায় কয়েকটি সূঁচ খোঁজার মতো!! আমরা এই খড়ের গাদায় সারা জীবন অনুসন্ধান করে কাটিয়ে দিতে পারি, এমনকি তারপরেও মাত্র একটি বা দুটি সূঁচ খুঁজে পাই। তবে আরও কার্যকর পদ্ধতি হল এই খড়ের গাদার বাইরে খুব শক্তিশালী চুম্বক স্থাপন করা। চুম্বকগুলি তখন খড়ের গাদা থেকে সূঁচ টেনে বের করবে - ন্যূনতম প্রচেষ্টায়! এটিই সর্বোপরি হৃদয়বান ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার সবচেয়ে ভাল এবং কার্যকর উপায়। এবং ঈশ্বরও এটিই চান। প্রভু যীশু বলেছিলেন যে অন্যরা যখন আমাদের একে অপরের প্রতি প্রেম দেখবে তখন তারা জানতে পারবে যে আমরা তাঁর শিষ্য (যোহন ১৩:৩৩-৩৫)। মণ্ডলী হিসেবে আমাদের সাক্ষ্য হল অন্যদের আমাদের কাছে টেনে আনা।
আর তাই আমরা চেয়েছিলাম আমাদের মণ্ডলী (এবং প্রভু আমাদের মাধ্যমে যে সমস্ত মণ্ডলী স্থাপন করেছেন) যেন এমন চুম্বক হয় যা ভারতের হাজার হাজার খড়ের গাদা থেকে শিষ্যদের টেনে আনবে - এবং অন্যত্র থেকেও।
যেহেতু প্রভু আমাদের শিষ্য তৈরি করতে (ধর্মান্তরিত নয়) আদেশ দিয়েছেন (মথি ২৮:১৮-২০), তাই আমরা শুরু থেকেই শিষ্যত্বের তিনটি শর্ত (লূক ১৪:২৬-৩৩ পদে উল্লেখিত) প্রচার করেছি – প্রভু যীশুকে পরম প্রেম করা, প্রতিদিন নিজের জন্য মৃত্যুবরণ করা এবং আমাদের কাছে থাকা বস্তুগত জিনিসের প্রতি আসক্তি থেকে মুক্ত থাকা। আমরা আমাদের মণ্ডলীতে কেবল তাদেরই একত্রিত করতে চেয়েছিলাম যারা শিষ্যত্বের এই শর্তগুলি পূরণ করতে আগ্রহী।
তাই আমরা প্রার্থনা করেছিলাম যে প্রভু যেন আমাদের সংখ্যায় এমন লোকদের যোগ করেন যারা এই ধরণের শিষ্য হতে চান। আমরা কখনও কাউকে আমাদের মণ্ডলীতে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানাইনি। আমরা চেয়েছিলাম লোকেরা নিজেরাই আমাদের সাথে যোগ দিক। ১৯৭৫ সাল থেকে এত বছর ধরে, আমি কখনও কোনও ব্যক্তিকে আমাদের কোনও মণ্ডলীর সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাইনি। আমরা কেবল তাদেরই গ্রহণ করেছি যারা সম্পূর্ণরূপে আমাদের কাছে এসেছিল। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যে প্রভু আমাদের কাছে তাদের পাঠাবেন যাদের পালন ও পরিচর্যা করার জন্য আমাদের আহ্বান জানান হয়েছে। প্রভু নিজেই তাঁর মণ্ডলীতে লোকদের যোগ করেন। প্রভু যীশু বলেছিলেন,
পিতা আমাকে যা কিছু দেন, তা আমার কাছেই আসবে, আর যে আমার কাছে আসে, তাকে আমি অবশ্যই তাড়িয়ে দেব না (যোহন ৬:৩৭)।
আমরা বিশ্বাস করি যে পৃথিবীতে খ্রীষ্টের দেহ হিসেবে আমাদের ক্ষেত্রেও এটি সত্য হবে।
প্রভু আমাদের সাথে শিষ্য যোগ করার জন্য আশ্চর্যজনক উপায় ব্যবহার করেছিলেন। এখানে কিছু উদাহরণ দেওয়া হল।
কাছের একটি দেশে, এক যুদ্ধের ফলে অনেক মানুষকে সবকিছু ছেড়ে ছোট ছোট নৌকায় করে তাদের পরিবার নিয়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। কিছু নৌকা সমুদ্রে ডুবে যায় এবং অনেকে ডুবে মারা যায়। কিন্তু কিছু মানুষ বেঁচে গিয়ে ভারতের তীরে পৌঁছায়। ভারত সরকার এই শরণার্থীদের একটি শিবিরে আশ্রয় দেন। আমাদের দুটি মণ্ডলী এই শিবিরের কাছে অবস্থিত ছিল। তাই সেই মণ্ডলী থেকে আমাদের কিছু ভাই এই শরণার্থীদের (যারা রূপান্তরিত হয়নি এমন নামমাত্র খ্রীষ্টান) সাথে দেখা করে তাদের সাথে সুসমাচার ভাগ করেন। ফলস্বরূপ, তাদের মধ্যে অনেকেই নতুন জন্ম লাভ করে। এরপর আমাদের ভাইয়েরা তাদের শিবিরে নিয়মিত তাদের সাথে দেখা করতে যেতেন এবং তাদের দ্বারা একটি মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করেন। তারা প্রায় দুই বছর ধরে বেঙ্গালুরু এবং অন্যান্য স্থানে আমাদের বেশ কয়েকটি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের সাক্ষ্য ভাগ করে নেওয়ার আগ্রহ এতটাই ছিল যে তারা আমাদের সম্মেলনে পুলপিটে (মিম্বরে) ছুটে যেত এবং সাহসের সাথে সাক্ষ্য দিত। আমাদের অন্যান্য মণ্ডলীর সদস্যরা যখন সেখানে থাকতেন তখন সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ খুব কমই পেতেন!! তাদের উৎসাহ দেখে আমরা সকলেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলাম। এক সম্মেলনে, আমি যখন বাইবেল শিক্ষা দিয়েছিলাম যে স্ত্রীদের তাদের স্বামীদের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করা উচিত, যেমন মণ্ডলী খ্রীষ্টের প্রতি, তখন তাদের মধ্যে একজন নববিবাহিত স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যেন সে তার বিবাহের শুরু থেকেই একজন বশ্যতা স্বীকারকারী স্ত্রী হওয়ার জন্য অনুগ্রহ দান লাভ করেতে পারে। আমার জীবনে আমি কখনও কোনও স্ত্রীকে এত তীব্রভাবে কাঁদতে এবং প্রার্থনা করতে শুনিনি!!
প্রায় দুই বছর পর, ভারত সরকার তাদেরকে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ততক্ষণে, এই বিশ্বাসীরা বিশ্বাসে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছিল এবং তারা ফিরে যাওয়ার আগে আমরা তাদের মধ্যে তিনজনকে প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করতে পেরেছিলাম। তাই ঈশ্বর ভারতে তাদের থাকার সময় নিখুঁতভাবে নির্ধারণ করেছিলেন। তারা তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার কিছু সময় পরে, তাদের এলাকায় আবার যুদ্ধ শুরু হয় এবং তারা তিনটি ভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, এই তিনটি দলের প্রত্যেকের মধ্যে আমাদের নিযুক্ত প্রাচীনদের একজন করে ছিল! তাই তারা সেই প্রাচীনদের নেতৃত্বে তিনটি মণ্ডলী হিসেবে কাজ করতে পারত। সেখানে তাদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে আরও অনেককে এই মণ্ডলীগুলিতে যুক্ত হতে পেরেছিল। আমাদের একজন ভাই কয়েকবার তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে সভা করেছিলেন এবং তাদের উৎসাহিত করেছিলেন।
আমাদের আরেক ভাই নতুন জায়গায় বসতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেখানে একটি ছোট ব্যবসা শুরু করার জন্য। এখানেও, খ্রীষ্টের সময় থেকে একটিও মণ্ডলী ছিল না। এই ভাইয়ের সাক্ষ্যের মাধ্যমে, কেউ কেউ শিষ্য হয়েছিলেন এবং আজ সেখানে একটি সুন্দর মণ্ডলী আছে - ২০০০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো।
তবে, গত ৫০ বছরে ঈশ্বর আমাদের মধ্যে যে সর্বশ্রেষ্ঠ অলৌকিক কাজটি করেছেন, তা হল এমন মণ্ডলী স্থাপন করা নয় যেখানে ২০০০ বছর ধরে কোনও মণ্ডলী ছিল না, বরং অনেক মণ্ডলী পরিচালনা করার জন্য ধার্মিক প্রাচীনদের উত্থাপন করা। ভারতের মতো দেশে - কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই ঈশ্বরের মেষশাবক এবং মেষপালকদের সেবা এবং পালন করতে ইচ্ছুক আধ্যাত্মিক-মনের নেতাদের খুঁজে পাওয়া একটি আশ্চর্যজনক অলৌকিক কাজ, যেখানে বেশিরভাগ খ্রীষ্টান কর্মী বেতনভোগী কর্মী – যেখানে অর্থ মূলত বিদেশী উৎস থেকে আসে। যাইহোক, ঈশ্বর আমাদের কাছে এমন লোকেদের পাঠিয়েছেন যারা কয়েক দশক ধরে আমাদের মণ্ডলীগুলিতে প্রাচীন এবং মেষপালক হিসাবে স্বাধীনভাবে সেবা করে আসছেন। যেহেতু আমরা কোনও প্রাচীনকে বেতন দিই না, তাই আমরা অনেক “খ্রীষ্টান ধান্দাবাজ” থেকে সুরক্ষিত রয়েছি, যারা অন্যথায় আমাদের সাথে যোগ দিত। আজ আরও অনেক খ্রীষ্টান মণ্ডলী এবং সংগঠন এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।
দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমাদের চুম্বকগুলি খড়ের গাদা থেকে কিছু সূক্ষ্ম এবং খাঁটি সূঁচ বের করছে। আমরা আশা করি আগামী দিনে আরও অনেক সূঁচ বের করব।
সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক!