বাস্তব সত্য

    Download Formats:

অধ্যায় 1
মন্দ সম্পর্কে বাস্তব সত্য

বিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলির মধ্যে একটি যা মানুষ বোঝার যথেষ্ট চেষ্টা করেছে তা হল মন্দের রহস্য। সর্বজ্ঞানী ও সর্বোত্তম ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্ট এই বিশ্বে মন্দের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল?

পৃথিবীর প্রতিটি স্থানে সবার ওপরে মন্দের প্রভাব এত কেন? সর্বস্থানে এত অসুস্থতা, দারিদ্রতা, দুঃখ ও যন্ত্রণা কেন? ঈশ্বর কি আমাদের সাহায্য করতে আগ্রহী নন? এইরকম প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তরের প্রয়োজন। আর বাইবেল আমাদের সেগুলির উত্তর দেয়।

এ বিষয়ে আলোচনা করার আগে, ঈশ্বর সম্পর্কিত নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে আমরা স্পষ্ট হই।

ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনন্তকাল থেকেই আছে। তাঁর কোন শুরু ছিল না, সময় সীমা সম্পর্কে আমাদের যা ধারনা রয়েছে তিনি তার পূর্ব থেকে বিদ্যমান। এই বিষয়টি বুঝতে আমাদের পক্ষে হয়তো কঠিন হতে পারে। কারন আমাদের এই ছোট্ট মস্তিষ্কে আমরা ঈশ্বরের মহান জ্ঞানকে ধারণ করতে পারি না - যেমন একটি কাপে সমুদ্রের সমস্ত জল ধরতে পারে না।

বাইবেলের প্রথম পদের আরম্ভ এই ভাবে-

"আদিতে ঈশ্বর..." (আদিপুস্তক ১ অধ্যায়, ১ পদ)। (ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের ৬৬টি বইয়ের মধ্যে আদিপুস্তক হল প্রথম বই। এই পুস্তিকাটিতে বন্ধনী দেওয়া সমস্ত প্রসঙ্গ বাইবেলের বিভিন্ন বই থেকে উল্লেখ করা হয়েছে)।

ঈশ্বরের অস্তিত্ব যে আদি-অনন্তকাল থেকেই রয়েছে বাইবেল এই ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেনি কিন্তু বাইবেল বলেছে এটিই সত্য।

বাইবেলে ঈশ্বর এমন এক ব্যক্তি হিসাবে প্রকাশিত যিনি মানুষের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপনে ইচ্ছুক। যেভাবে আমরা কোন মানুষ বলতে বুঝি, সেই রকম তিনি কোন মানুষ নন। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল, তিনি আত্মা, সর্ববিষয়ে অসীম, এবং সর্বকালে অপরিবর্তনীয়। তিনি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞাতা, অসীম জ্ঞানী, অসীম প্রেমময় এবং অসীম বিশুদ্ধ।

ঈশ্বরের অসীম ভালবাসা সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ। তাই শুরু থেকেই তিনি অন্যদের সাথে তাঁর আনন্দ এবং তাঁর শুভেচ্ছা ভাগ করতে চেয়েছিলেন।

তিনি তাই জীবন্ত প্রাণীর সৃষ্টি করেছিলেন। প্রথমত, তিনি লক্ষ লক্ষ স্বর্গদূতের সৃষ্টি করেন, যাতে তিনি তাদের সাথে তাঁর মহিমাময় ও আনন্দযুক্ত সহভাগিতা করতে পারেন। এসব ছিল কোনও মনুষ্য সৃষ্টি করার অনেক আগের ঘটনা।

সকল স্বর্গদূতের মধ্যে, ঈশ্বর তাদের অধিনায়ক হিসাবে একজনকে সৃষ্টি করেন। তার নাম ছিল লুসিফার। এই নাম যা বর্তমানে একটি মন্দ নাম হিসাবে বিবেচিত হয়, কিন্তু কোন এক সময়ে এই নামটি ছিল প্রচুর মহিমান্বি, সকল স্বর্গদূতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ও সবচেয়ে বেশি সুন্দর। স্বর্গদূতের মধ্যে সে ছিল প্রধান।

লুসিফারের বিষয়ে প্রভু বলেছেনঃ "তুমি পূর্ণজ্ঞান, তুমি সৌন্দর্যে সিদ্ধ ছিলে, ... আমি তোমাকে অভিষিক্ত আচ্ছাদক স্বর্গদূত রুপে স্থাপন করিয়াছিলাম, ... তোমার সৃষ্টির দিন অবোধি তুমি আপন আচারে সিদ্ধ ছিলে; শেষে তোমার মধ্যে অন্যায় পাওয়া গেল" (যিহিস্কেল ২৮ অধ্যায়, ১২-১৫ পদ)।

ঈশ্বর গাছপালা বা নক্ষত্রদের মতো করে লুসিফার বা অন্য দূতেদের সৃষ্টি করেননি। ঈশ্বরের বাধ্য বা অবাধ্য হওয়ার সিদ্ধান্তটি বেছে নেওয়ার জন্যে তাদের তিনি পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।

একজন ব্যক্তির নৈতিক হওয়ার জন্য প্রথম অপরিহার্য বিষয় হল তার মুক্ত ইচ্ছা। গাছপালা বা নক্ষত্ররা ভাল কি মন্দ কিছুই করতে পারে না, কারন তারা নিজেদের জন্য এই বিষয়গুলি নির্বাচন করতে সক্ষম নয়। তারা নিখুঁত ভাবে ঈশ্বরের আইন মান্য করে, কারণ তাদের কিছু মনোনয়ন করার স্বাধীনতা ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে। অতএব তারা কখনই ঈশ্বরের সন্তান হতে পারে না। একজন বৈজ্ঞানিকের তৈরী করা একটি রোবট তাঁর প্রতিটি নির্দেশ মেনে চলে, এটি কখনো কোন অভিযোগ করে না যেমনটি তাঁর নিজের সন্তান করে থাকে। কিন্তু তবুও এই রোবটটি কখনো তাঁর সন্তান হতে পারে না!

একজন ব্যক্তির নৈতিক হওয়ার জন্য দ্বিতীয় প্রয়োজনীয় বিষয়টি হল বিবেক। পাখি এবং প্রাণীরা স্বেচ্ছায় কাজ করতে পারে। কিন্তু তবুও তারা নৈতিক প্রাণী নয় কারণ তাদের বিবেক নেই। তাই তারা পবিত্র বা পাপী হতে পারে না। অতএব তারা ঈশ্বরের সন্তানও হতে পারে না, কারণ ঈশ্বর হলেন নৈতিক।

প্রকৃতপক্ষে, এই পশুপাখিরা আপনারও সন্তান হতে পারে না।

আপনি একটি কুকুরকে আপনার প্রতিটি নির্দেশ পালন করার প্রশিক্ষণ দিতে পারেন, কিন্তু তবুও সেই কুকুরটি আপনার সন্তান হতে পারে না। কারণ আপনার সন্তানদের মধ্যে আপনার নিজস্বভাব ও প্রকৃতি বিদ্যমান থাকে, যা আপনার কুকুরটির মধ্যে থাকতে পারে না।

ঈশ্বর মানুষকে তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন। যা আমাদের তাঁর সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা প্রদান করে।

বিবেক হচ্ছে আমাদের মধ্যে বিদ্যমান এমন একটি কণ্ঠস্বর যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমরা নৈতিক প্রাণী, এবং আমরা যখন ঈশ্বরের আইন উল্লঙ্ঘন করি তখন এই বিবেক আমাদের অপরাধ বোধ করায়।

স্বর্গদূতদের মুক্ত ইচ্ছা এবং বিবেক উভয় বিষয়ের সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছিল। এভাবে তারা ঈশ্বরের সৃষ্টিতে সেই সময়ে অনন্য ছিল, কারণ তারা নৈতিক প্রাণী ছিল। তবে তাদের নেতা লুসিফার, খুব শীঘ্রই এমন কিছু চিন্তা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা করা শুরু করেছিল সেগুলি ভাল ছিল না।

এখান থেকেই মহাবিশ্বে প্রথম মন্দের সূচনা হয়।

শুধু লুসিফারের ভাবনাই যে ভাল ছিল না তা নয়, সেগুলি ছিল অহংকারী, বিদ্রোহী, ও অসন্তোষের চিন্তা ভাবনা।

মহাবিশ্ব তখনও পর্যন্ত পুরোপুরি বিশুদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন মন্দ তার কদাকার মস্তিস্ক প্রতিপালিত হচ্ছে একটি নির্দোষ সৃষ্ট প্রাণীর হৃদয়ে, যাকে ঈশ্বর একটি মুক্ত ইচ্ছা দান করে সৃষ্টি করেছিলেন।

মনে রাখবেন যে মন্দের প্রথম সূচনা হয় একটি হৃদয়ের মধ্যে। প্রাথমিক ভাবে সেখানে কোন বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া ছিল না। এমনকি আজও মন্দের সূচনা হয় সেই হৃদয়ের মধ্য থেকেই।

এটাও মনে রাখা দরকার যে, প্রথম পাপ যা পৃথিবীতে মন্দ এনেছিল তা ছিল অহংকার। তারপর ঈশ্বর অবিলম্বে তাঁর উপস্থিতি থেকে লুসিফারকে নিক্ষেপ করলেন, এবং সেই মুহূর্ত থেকেই লুসিফারকে শয়তান বলা হয়।

বাইবেল শয়তানের পতন কে এইভাবে বর্ণনা করেছে - "কিভাবে তুমি স্বর্গ ভ্রষ্ট হইয়াছ হে লুসিফার, প্রভাতি তারা! ঊষা নন্দন! তুমি তো জাতিগনের নিপাতকারী ছিলে, কিভাবে তুমি ছিন্ন ও ভূপাতিত হইয়াছ? ...... তুমি মনে মনে বলিয়াছিলে, আমি স্বর্গারোহণ করিব, ও স্বর্গদূতদের ওপর শাসন করিব, আমি উর্ধে আমার সিংহাসন উন্নত করিব। আমি মেঘরূপ উচ্চস্থলীর উপর উঠিব, আমি পরাৎপরের তুল্য হইব। কিন্তু তার পরিবর্তে তোমাকে তো পাতালে, গর্তের গভীরতম তলে নামান হইবে" (যিশাইয় ১৪ অধ্যায়, ১২-১৫ পদ)।

কিন্তু লুসিফারের পতনের সময় সে আরো অনেক স্বর্গদূতের যোগার করেছিল তার সাথে তার বিদ্রোহে সামিল হওয়ার জন্যে। তার সাথে মিলিত হয় লক্ষ লক্ষ স্বর্গদূতেরা-প্রকৃতপক্ষে স্বর্গের সমস্ত স্বর্গদূতের এক-তৃতীয়াংশ (যেমন আমরা প্রকাশিত বাক্য ১২ অধ্যায় ৪ পদে পাঠ করি)। তাই ঈশ্বর লুসিফার এবং তাদের কে নিক্ষেপ করেছিলেন। এই পতিত স্বর্গদূতেরাই হল মন্দ আত্মা যারা আজ মানুষকে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দেয় ও হয়রানি করে।

সম্ভবত আপনি নিজেই এই সকল মন্দ আত্মা দ্বারা কষ্ট পাচ্ছেন বা অন্যেরা আপনার পেছনে কালো জাদু দ্বারা আপনাকে বিরক্ত করছে। যদি তাই হয় বাইবেলে আপনার জন্য সু-সংবাদ আছে, আপনি চিরকালের জন্য তাদের হয়রানি থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেন।

এই বইটি যত্নসহকারে পড়ুন এবং অবশেষে আপনি দেখতে পাবেন যে ঈশ্বর আপনার জন্য কি অলৌকিক কাজ করতে পারেন।

কেউ কেউ এখন যে প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করতে পারেন তা হল, - "যদি শয়তানই বিশ্বের সমস্ত মন্দের কারণ হয়ে থাকে তবে কেন ঈশ্বর এই শয়তানকে এবং সমস্ত মন্দ আত্মা গুলিকে ধ্বংস করেননি?"

ঈশ্বর নিশ্চয়ই এক মুহূর্তে তা করতে পারেন, যদি তিনি চান।

কিন্তু তিনি তা করেননি।

এটি প্রমান করে যে, এই শয়তান ও মন্দ আত্মাগুলির অস্তিত্ব বজায় রাখার পেছনে অসীম জ্ঞানী ঈশ্বরের এক উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটির একটি অংশ হল এই পৃথিবীতে মানুষের জীবনকে কঠিন, অসুরক্ষিত এবং বিপজ্জনক করে তোলার জন্য শয়তানকে ব্যবহার করা, যাতে মানুষ এই পৃথিবীতে জাগতীক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য খোঁজার পরিবর্তে ঈশ্বরের প্রতি ফেরে এবং অনন্তকালের জন্য চিন্তা করে।

যদি এই পৃথিবীতে কোন অসুস্থতা, দুঃখ কষ্ট, দারিদ্রতা এবং দুর্দশা ছাড়াই মানুষের জীবন খুব আরামদায়ক হতো তবে কেউ হয়তো ঈশ্বর সম্পর্কে কখনও চিন্তা করত না। তাই ঈশ্বর মানুষের জীবনে এই জাগতীক দুঃখ কষ্ট, নিরাপত্তাহীনতা, ইত্যাদি বিষয়গুলিকে ব্যবহার করেছেন যাতে আমরা তাঁর কথা চিন্তা করি এবং আমাদের প্রয়োজনে তাঁর কাছে ফিরে আসি।

এমনকি সমস্যা, অসুস্থতা এবং বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন যা শয়তান আপনার জীবনে নিয়ে আসে এই সকলই এক প্রেমময় ঈশ্বর দ্বারা অনুমোদিত হয়, যাতে আপনি ঈশ্বরের পথে ফেরেন। এটি আপনার জন্য ঈশ্বরের ভালবাসার প্রকাশ। এটি হল বাইবেলের বার্তা।

আমি একজন ব্যবসায়ীর একটি গল্প শুনেছি যিনি একসময় ঈশ্বরের নিকটবর্তী ছিলেন। তিনি তার ব্যবসায় যখন উন্নতি করেছিলেন তখন ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। মণ্ডলীর প্রাচীনেরা বার বার তার সাথে কথা বলেছিলেন এবং তাকে প্রভুর কাছে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। একদিন তার তিন ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছেলেটিকে এক বিষাক্ত সাপ কামড়ায় এবং শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমনকি ডাক্তারেরা সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারপর সেই বাবা সত্যিই খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন, এবং মণ্ডলীর এক প্রাচীনকে তার সন্তানের জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানান। সেই প্রাচীন একজন জ্ঞানীব্যক্তি ছিলেন। তিনি আসেন এবং প্রার্থনা করেন, "প্রভু, এই সন্তানকে দংশন করার উদ্দেশ্যে সাপটিকে পাঠানোর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ- কারণ আমি এই পরিবারকে তোমার বিষয়ে চিন্তা করাতে এবং তোমার পথে ফেরাতে পারিনি। কিন্তু ছয় বছরে আমি যা সম্পন্ন করতে পারিনি এই সাপটি এক মুহূর্তে তা করেছে। এখন তাদের শিক্ষা হয়েছে। প্রভু, এই সন্তানকে সুস্থ করো। এবং সাহায্য করো যেন তোমার কথা স্মরণ করতে এদের আবার অন্য কোন সাপের প্রয়োজন না হয়।"

এমন অনেক মানুষ আছে যারা ঈশ্বর সম্পর্কে একেবারেই চিন্তা করে না, যতদিন পর্যন্ত না তারা হঠাৎ করে ক্যানসারে বা অন্য কোন গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এই সব ঘটনার মধ্যে দিয়ে হঠাৎ তারা ঈশ্বরের বিষয়ে চিন্তা করা শুরু করে এবং পরিত্রাণের জন্য তাঁর প্রতি ফেরে। অনেক সময় ঈশ্বর এই পৃথিবীতে দুরারোগ্য ব্যাধি, অসুস্ততা, দারিদ্রতা, এবং অন্যান্য অনেক মন্দ বিষয়গুলিকে ব্যবহার করে থাকেন মানুষকে তার পাপময় জীবন থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য। এইভাবে ঈশ্বর তাদের স্বর্গীয় অনন্তনিবাস অন্বেষণের পথে তাদেরকে পরিচালনা করেন। এইভাবে ঈশ্বর মানুষকে শয়তানের কবল থেকে মুক্ত করে অনন্তজীবনে নিয়ে আসার জন্য অনেক সময় শয়তানের ব্যবহৃত পন্থাগুলিকেই ব্যবহার করে থাকেন।

এইভাবেই ঈশ্বর শয়তানকে বারবার মূর্খ প্রমাণিত করেন।

শয়তান নিজেই সেই গভীর গর্তে পতিত হয় যা সে অন্যদের জন্য খনন করে থাকে।

শয়তানকে বিদ্যমান থাকতে দেওয়ার পেছনে ঈশ্বরের আরেকটি কারণ হল তাঁর সন্তানগণকে শুদ্ধ বা খাঁটি করে তোলা। আগুনের উদাহরণটি বিবেচনা করুন। আমরা জানি যে পৃথিবীর ইতিহাসে অগ্নিকাণ্ডের মধ্য দিয়ে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। কিন্তু এই কারণে আগুনের ব্যবহার কেউ বন্ধ করে দেয়নি, কেন? কারণ আগুনের মাধ্যমে অধিকাংশ খাবার তৈরি হয় এবং অটোমোবাইল, উড়োজাহাজ, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালানো হয়। এমনকি স্বর্ণকেও অগ্নি দ্বারা শুদ্ধ করা হয়। তাই এটি ক্ষতিকারক ও বিপদজনক হলেও এটিকে আবার ভাল কাজে ব্যবহার করা হয়।

এইভাবে যদিও শয়তান মন্দ এবং লোকেদের বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করে, তথাপি ঈশ্বর শয়তানের মন্দ পন্থাগুলিকে তাঁর ভাল উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন। বিভিন্ন অগ্নিময় পরীক্ষা এবং প্রলভনের মাধ্যমে ঈশ্বরের সন্তানদের পরীক্ষা করার অনুমতি শয়তানকে দেওয়া হয়, যাতে ঈশ্বরের সন্তানেরা শুদ্ধ এবং পবিত্র হতে পারে, যেমন স্বর্ণকে আগুনে শুদ্ধ করা হয়।

তাই আমরা দেখতে পাই যে, যদিও ঈশ্বর এক মুহূর্তে বিশ্বের সব মন্দ বিষয়গুলি দূর করতে পারেন, তথাপি তিনি তা করেন না, কারণ তিনি তাদের মাধ্যমে তাঁর মহিমাময় উদ্দেশ্য সম্পন্ন করে চলেছেন।

অধ্যায় 2
পাপ সম্পর্কে বাস্তব সত্য)

কিছু মানুষ অনেক সময় পশুদের মত আচরণ কেন করে?

উত্তর হলঃ কারণ তারা শুধুমাত্র তাদের শারীরিক চাহিদা এবং এই পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কেই আগ্রহী।

একটি পশুর আগ্রহ কিসের ওপর থাকে? খাদ্য, ঘুম ও যৌন সন্তুষ্টি। আর এটাই সব। এবং যখন একজন মানুষ শুধুমাত্র এইসব বিষয়ে আগ্রহী হয় তখন আমরা বলতে পারি যে সে পশুদের স্তরে অবতরণ করেছে।

কিন্তু ঈশ্বর মানুষকে পশুদের মত করে সৃষ্টি করেননি। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা তাঁর মতো হই - নৈতিক, ও ন্যায়সঙ্গত, সৎচরিত্র এবং আত্মনিয়ন্ত্রিত, তবে পাশবিক প্রবৃত্তির দাস হওয়ার জন্য নয়।

আমরা পশুদের তুলনায় বেশি চতুর এবং শিক্ষিত এই বৈশিষ্টগুলি প্রমাণিত করে না যে আমরা তাদের তুলনায় বেশি ভাল। কারণ চতুর ও শিক্ষিত মানুষেরাও লোভ, স্বার্থপরতা, যৌনতা, রাগ ইত্যাদির দাস হয়ে থাকেন।

আমাদের মধ্যে এমন একটি অংশ রয়েছে যা আমাদের মনের থেকেও গভীরতম, এটি হল আমাদের আত্মা। এই আত্মা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সচেতন করে তোলে। এই বিষয়টি পশুদের থাকে না।

যেভাবে আগের অধ্যায়টিতে দেখেছি, ঈশ্বর আমাদের অবাধ নির্বাচন করার ক্ষমতাসহ নৈতিক প্রাণী হিসাবে তৈরি করেছেন। কিন্তু এই নির্বাচন-স্বাধীনতার ঝুঁকিটি হল যে, আমরা নিজেদের খুশি করার এবং ঈশ্বরের আইনগুলিকে অমান্য করার জন্য সেই স্বাধীনতা ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু ঈশ্বর সেই ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক ছিলেন - কারণ তিনি এমন সন্তানদের চেয়েছিলেন যারা তাঁকে স্বাধীনভাবে চয়ন করবে।

বিশ্বের সব বিশৃঙ্খলা, বিভ্রান্তি, রোগ এবং মন্দ এই সব হল মানুষের দ্বারা ঈশ্বরকে অমান্য করার এবং শয়তানের কথা শোনার ফল।

ঈশ্বর যে প্রথম পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করেছিলেন, তারা আদম ও হবা নামে পরিচিত। যখন তাদের সৃষ্টি করা হয়েছিল তখন তারা ছিল নির্দোষ। তারা পবিত্র হয়ে থাকবে কি না এই বিষয়টি তাদের মনোনয়ন করতে হতো। এই বিষয়টিতে তাদের প্রলোভিত হতে হয়েছিল, যাতে তারা মন্দকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তার পরিবর্তে ঈশ্বরকে চয়ন করে। তাই ঈশ্বর শয়তানকে অনুমতি দিয়েছিলেন যাতে সে একান্তে এসে তাদের প্রলোভিত করতে পারে।

আমরা বাইবেলের প্রথম বইটিতে, আদিপুস্তকের ২ এবং ৩ অধ্যায়ে এই বিষয় সম্পর্কে পাঠ করে থাকি।

নির্দোষ এবং পবিত্রতার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, নির্দোষ হল যা আপনি একটি শিশুর মধ্যে দেখতে পান। যদি আপনি জানতে চান যে আদমকে যখন ঈশ্বর সৃষ্টি করেছিলেন তখন সে কেমন ছিল, তবে একটি শিশুর দিকে তাকান, নির্দোষ, এবং ভাল-মন্দ সম্পর্কে অজ্ঞাত। কিন্তু সেই ছোট শিশুটি পবিত্রও নয় এবং নিখুঁতও নয়। নিখুঁত হওয়ার জন্য সেই শিশুটিকে বড় হতে হবে এবং কিছু বিষয় মনোনয়ন করতে হবে অর্থাৎ মন্দকে প্রত্যাখ্যান করে ঈশ্বরকে মনোনীত করতে হবে।

যখন আমরা আমাদের মনের ভেতর প্রলোভনের উৎপত্তি ঘটার পথে বাধা সৃষ্টি করি তখন আমাদের চরিত্রের উন্নতি হয়।

দীর্ঘ সময় পূর্বে আপনি নিজের জীবনে যা কিছু মনোনয়ন করেছিলেন তার ভিত্তিতেই আপনার আজকের পরিচয়টি প্রতিষ্ঠিত।

যদি আপনার পার্শ্ববর্তী লোকেরা আপনার চেয়েও ভাল থেকে থাকেন তবে এর কারণ হবে তারা এক সময় তাদের জীবনে আপনার চেয়েও ভাল বিষয়গুলি মনোনয়ন করেছিলেন। আমরা প্রতিদিন কিছু না কিছু মনোনয়ন করে থাকি - এই মনোনীত বিষয়গুলিই নির্ধারিত করে যে ভবিষ্যতে আমরা কি অবস্থায় থাকব।

যখন ঈশ্বর প্রথম পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করেন তখন শয়তানকে তাদের জীবনে প্রলোভন নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বাস্তবে তাদের নিজেদের জীবনকে পবিত্র করে রাখার একটি সুযোগ দিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে একটি বাগানে রেখেছিলেন এবং তাদের বলেছিলেন যে, শুধুমাত্র একটি বৃক্ষ ব্যাতিরিকে সেই বাগানের প্রতিটি বৃক্ষের ফল তারা খেতে পারে। এটি একটি পরীক্ষা ছিল।

প্রকৃতপক্ষে এটি একটি অত্যন্ত সহজ পরীক্ষা ছিল- কারণ তাদের এমন একটি বাগানে পাঠানো হয়েছিল যেখানে হাজার হাজার আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু ফলদায়ক বৃক্ষ ছিল এবং তাদের বলা হয়েছিল যে তারা একখানি বৃক্ষের ফল ব্যাতিরিকে সবই খাবে। কিন্তু তারা বাধ্যতার এই সহজ পরীক্ষাটিতে ব্যর্থ হয়েছিল।

শয়তান সেই বাগানে এসে আদম ও হবাকে এই বলে প্রলোভিত করেছিল যে যদি তারা সেই নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খায়- তবে তারা ঈশ্বরের তুল্য হয়ে যাবে।

এ সময় আদম ও হবা যে প্রলোভনের মুখোমুখি হয়েছিল তা কেবল একটি গাছের ফল খাওয়ার সাধারন একটি বিষয় ছিল না, বরং বিষয়টি ছিল যে তারা চাইলেই ঈশ্বরের তুল্য হয়ে উঠতে পারতো।

শয়তান নিজেই একসময়ে যা (ঈশ্বরের তুল্য) হতে চেয়েছিল এবং এটাই সে আদম ও হবাকে বলেছিল যে তারাও হতে পারে। অবশ্যই, শয়তান তাদেরকে যা বলেছিল তা মিথ্যা ছিল - ঠিক সেই মিথ্যাগুলোর মতো, যেগুলির দ্বারা সে আজকেও মানুষের সাথে প্রতারণা করে। যে ভাবে মানুষ আজও শয়তানের মিথ্যা প্রতারনায় পরে যাচ্ছে, আদম ও হবাও পড়ে গিয়েছিল। তারা ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল এবং পূর্বে শয়তান যে পরিণতি ভোগ করেছিল তেমনটি তাদেরও ভোগ করতে হয়েছিল। ঈশ্বরের উপস্থিতি থেকে তাদের নির্বাসিত করা হয়েছিল।

এই ঘটনার সমস্ত বিবরণ বাইবেলের প্রথম বই - আদিপুস্তক ৩ অধ্যায়ে আমরা পাঠ করতে পারি।

আদম এবং হবা ভেবেছিল যে ঈশ্বরের আজ্ঞা অমান্য করে তারা সর্বশক্তিমান ও মুক্ত হয়ে যাবে; ঠিক ঈশ্বরের তুল্য। কিন্তু তারা কি আদৌ মুক্ত হয়েছিল? না! বরং তারা শয়তানের দাস হয়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র ঈশ্বরের আজ্ঞা পালনের দ্বারাই আমরা প্রকৃত মুক্ত হতে পারি।

এইভাবে শয়তান অনেক মানুষকে ভ্রান্ত করে। সে তাদেরকে বলে যে তারা যদি জীবনকে সত্যিই উপভোগ করতে চায় তবে তাদেরকে ঈশ্বরের আইনগুলি উপেক্ষা করা উচিত।

এখন আমরা দেখলাম যে কিভাবে মানবজাতির মধ্যে পাপের উদ্ভব হয়েছিল।

এদন বাগানে সেই দিনে আদম ও হবা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটি তাদের নিজেদের জন্য এবং তাদের সন্তানদের জন্য সারাজীবনের পরিণতির জন্ম দিয়েছিল।

আমরা জীবনে যে সমস্ত সিদ্ধান্তগুলি গ্রহন করি, সেগুলি কিছু ফলাফল উৎপন্ন করে। যা আমরা বপন করেছি তাই আমাদের কাটতে হবে। অনেক সময় আমাদের বপন করা কিছু তিক্ত ফল আমাদের সন্তানদের কাটতে হয়। আদমের ক্ষেত্রে, তাকে ও তার স্ত্রীকে বাকি জীবনের জন্য ঈশ্বরের উপস্থিতি থেকে বাইরে পাঠানো হয়েছিল।

তাই আমাদের কখনও এটা কল্পনাও করা উচিত নয় যে আজকে যে সামান্য বিষয় আমরা মনোনয়ন করেছি তা গুরুত্বহীন বা আমরা আজকে যা বপন করছি ভবিষ্যতে কখনও তার ফসল কাটব না। বিভিন্ন মানুষের এবং বিভিন্ন পরিস্থিতির দ্বারা আমাদের পরীক্ষিত ও প্রলোভিত হওয়ার অনুমতি ঈশ্বর দিয়ে থাকেন, যাতে আমরা নিজেদেরকে তাঁর কাছে প্রমাণিত করতে পারি যে পৃথিবীর অন্যান্য সকল বিষয় অপেক্ষা আমরা অধিক ঈশ্বরের আকাঙ্ক্ষী। এই উদ্দেশেই আমাদেরকে জীবনে অনেক পরীক্ষা-প্রলোভনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, এটাই যাচাই করার জন্য যে আমরা সকল সৃষ্ট বস্তু অপেক্ষা সৃষ্টিকর্তাকে অধিক মূল্য দিই।

ঈশ্বরের ঊর্ধ্বে নিজেদেরকে এবং সৃষ্ট বিষয়গুলিকে চয়ন করাটাই হল সব পাপের উৎস। এটিই হল ঈশ্বরের পথের পরিবর্তে আমাদের নিজস্ব পথ নির্বাচন করা এবং ঈশ্বরকে খুশি করার পরিবর্তে নিজেদেরকে খুশি করার চেষ্টা করা।

পাপ শুধু ব্যাভিচার, খুন বা চুরি করা নয়। স্বেচ্ছাচারী হওয়াটাও পাপ। পাপের সূচনা আমরা একটি ছোট শিশুর জেদী স্বভাবের মধ্য দিয়ে দেখতে পাই। জন্ম থেকেই প্রত্যেকটি শিশুর স্বভাবের মধ্যে পাপ বাস করে, এবং সে যত বেড়ে উঠতে থাকে ততই নিজের মতো করে চলার জন্য দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে ওঠে এবং অন্যান্য শিশুদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া বা লড়াই করার মাধ্যমে নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে চায়।

শৈশবকাল থেকে পূর্ণবয়স হওয়া পর্যন্ত আমাদের স্বভাবের খুব বেশি কিছু পরিবর্তন হয় না। আমরা কেবল একটু বেশি চতুর হয়ে উঠি এবং আমাদের পদ্ধতিগুলির পরিবর্তন করি! এমনকি সভ্য মানুষেরাও একই রকম হয়ে থাকেন। তারা শুধু তাদের স্বার্থপরতা, লোভ, এবং লালসাপূর্ণ স্বভাবকে একটি বাহ্যিক উদারতার আবরন দ্বারা এমনকি ধর্মের আবরণেও ঢেকে রাখে।

আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি কোষে পাপ অন্তর্নিহিত আছে। আমরা উপবাস প্রার্থনা, তীর্থযাত্রা, আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি ধর্মীয় অনুশীলনের মাধ্যমে পাপ থেকে পরিত্রান পেতে পারি না। ঈশ্বরই কেবল আমাদের পাপ থেকে রক্ষা করতে পারেন।

কিন্তু মন্দই যে পাপ এটা আমাদের স্বীকার করা পর্যন্ত ঈশ্বরকে অপেক্ষা করতে হয়। যীশু একবার বলেছিলেন যে তিনি "ধার্মিকদের" নয় কিন্তু পাপীদের উদ্ধার করতে এসেছেন। এর মানে এই নয় যে, পৃথিবীতে কিছু লোক ধার্মিক ও অন্যরা সব পাপী ছিল। তিনি এটি ব্যাঙ্গ করে তাদের উদ্দেশে বলেছিলেন যারা নিজেদের দৃষ্টিতে নিজেদেরকে ধার্মিক এবং পবিত্র বলে বিবেচিত করে। যীশু বলতে চেয়েছিলেন যে যারা নিজেদেরকে "ধার্মিক" হিসাবে দেখে তাদের তিনি রক্ষা করতে পারেন না।

শুধুমাত্র যারা নিজেদেরকে অসুস্থ মনে করবে তারা ডাক্তারের কাছে যাবে। তাই আমাদের প্রথম প্রয়োজন হল স্বীকার করা যে আমরা পাপী।

আমাদের ধর্ম যাইহোক না কেন, আমরা সবাই পাপী। আমরা সকলেই ঈশ্বরের পবিত্র আইনের বিরুদ্ধে পাপ করেছি, আমাদের চিন্তায়, বাক্যে, কার্যে, ব্যবহারে এবং অভিপ্রায়ে আমরা পাপ করেছি।

আমরা ঈশ্বরের পবিত্র মানদণ্ডের নিম্নস্তরে এসে গিয়েছি।

রোগব্যাধি আমাদের শরীরে যতটা ক্ষতি করে তাঁর চেয়ে অনেক বেশী পাপ আমাদের অন্তঃকরনের ক্ষতি করে।

কিন্তু আমরা কি এটা উপলব্ধি করতে পারি?

এইডস সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কি - আজকের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ভয়ঙ্কর যৌন সংক্রামক ব্যাধি?

এইডস এতটাই সংক্রামক, যে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে লোকেরা যে কোনও জায়গায় যেতে ভয় পায়। পাপ আসলে তার চেয়েও খারাপ- শুধুমাত্র পার্থক্য হল যে পাপ আমাদের অন্তঃকরনের ক্ষতি করে। সুতরাং এটি বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান নয়। পাপের প্রভাব এইডস-এর চেয়েও বেশী মারাত্মক। তাই পাপ আমাদের জীবনকে ধ্বংস করে, এই জগতে আমাদের অসুখী করে তোলে, এবং অবশেষে আমাদের অনন্তজীবনকে ধ্বংস করবে- যদি আমরা এর থেকে রক্ষা না পাই।

অধ্যায় 3
বিবেক সম্পর্কে বাস্তব সত্য

আমাদের প্রত্যেকেই বিবেক সহ সৃষ্টি করা হয়েছে যা ক্রমাগত মনে করিয়া দেয় যে আমরা নৈতিক প্রাণী।

বিবেক হচ্ছে আমাদের মধ্যে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর, যা আমাদের বলে যে আমরাই আমাদের কর্মের জন্য দায়ী। আমরা যে ভাবে আমাদের জীবনযাপন করছি তার জন্য একদিন আমাদেরকে ঈশ্বরের কাছে জবাব দিতে হবে।

আমরা পশুদের মতো নই, যাদের কোন বিবেক নেই। পশুরা নৈতিক প্রাণী নয়, তাই তাদের কোন কিছুর জন্য ঈশ্বরের কাছে জবাব দিতে হবে না। যখন একটি পশু মারা যায়, তখন সেখানেই তার সমাপ্তি। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তেমনটি নয়। মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মানুষ হচ্ছে অনন্ত প্রাণী।

আমাদের জন্য বিচারের একটি দিন থাকবে। তারপর আমাদের সমস্ত জীবনে যা কিছু করেছি, বলেছি, এবং চিন্তা করেছি সেই সব বিষয় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে এবং ঈশ্বর সেগুলির মূল্যায়ন করবেন। তিনি বাইবেলে উল্লেখিত তাঁর পবিত্র আইনের নিয়ম অনুযায়ী আমাদের বিচার করবেন। তারপর আমাদের প্রতিটি কর্মের, বাক্যের ও চিন্তার জন্য ঈশ্বরের কাছে উত্তর দিতে হবে।

বাইবেল বলে, "মনুষ্যের নিমিত্ত একবার মৃত্যু, তৎপরে বিচার নিরূপিত আছে"। (ইব্রীয় ৯ অধ্যায়, ২৭ পদ)

অনেক মানুষ পৃথিবীতে তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি ভোগ থেকে এড়িয়ে যায়। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত যখন ঈশ্বরের বিচার-আসনের সামনে দাঁড়াবে তখন তারা সমুচিত শাস্তি পাবে। অনুরূপভাবে, অনেক মানুষ অন্যদের মঙ্গলের জন্য অনেক ভাল ভাল কার্য করে থাকে কিন্তু এই পৃথিবীতে তাদের সম্মানিত বা পুরস্কৃত করা হয় না। খ্রীষ্ট যখন এই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন তখন তাদের পুরস্কৃত করা হবে।

যেহেতু আমরা যা কিছু করি তার জন্য আমাদের ঈশ্বরকে এক দিন উত্তর দিতে হবে, তাই আমাদের বিবেকের কণ্ঠস্বর সর্বদা শোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিবেক হল মানুষের জন্য ঈশ্বর দত্ত একটি বড় উপহার। এটা আমাদের দেহে "যন্ত্রণা"র উপহারের মতো। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই আমরা যন্ত্রণাকে কেবলমাত্র একটি বিরক্তিকর বিষয় হিসাবে চিন্তা করি। কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না যে আমাদের জীবনের জন্য যন্ত্রণা হল একটি অসাধারণ আশীর্বাদ। যন্ত্রণা দ্বারা শরীর আমাদের সতর্ক করে যে কোথাও কিছু ভুল আছে। অসুস্থতা সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করার জন্য এটা শরীরের প্রথম সংকেত। যদি যন্ত্রণা না হয়, তবে কখন যে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়েছি তা বুঝতেই পারব না, এর ফলে আমরা মারাও যেতে পারি। তাই যন্ত্রণা আমাদের অকাল মৃত্যু থেকে বাঁচায়।

কুষ্ঠ রোগী ব্যথা অনুভব করে না, কারণ কুষ্ঠ রোগ স্নায়ুগুলিকে মেরে ফেলে এবং সমস্ত অনুভুতি নষ্ট করে দেয়। একটি কুষ্ঠ রোগীর পায়ে পেরেক ফুটলেও সে কখনও যন্ত্রণা অনুভব করে না। এমনকি পা'টি সংক্রামিত হয়ে যাবে তবুও সে তা জানতে পারবে না। অবশেষে তার পায়ের অবস্থা এত খারাপ হয়ে যাবে যে এটি কেটে ফেলতে হবে। এই সব কিছুর কারণ হল তার "যন্ত্রণার আশীর্বাদ" নেই।

বিবেক হল যন্ত্রণার তুল্য। এটা আমাদের সতর্ক করে দেয় যখন আমরা ঈশ্বরের আইন উল্লঙ্ঘন করি- যখন আমরা পাপ করার বিষয়ে চিন্তা করি বা যখন আমরা ইতি মধ্যে পাপ করে ফেলি। যদি আমরা তার সতর্কতা উপেক্ষা করি এবং এটির বিরুদ্বে যাই, তবে আমরা ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে পাপের অনুভূতিকে মেরে ফেলব। তারপর এমন একটি দিন আসবে যখন আমরা কখনই পাপের কোন সংবেদনশীলতা অনুভব করব না। তারপর আমরা এক মৃত বিবেক বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক কুষ্ঠরোগীতে পরিণত হব। অবশেষে আমরা পশুদের মত হয়ে উঠবো, যাদের কোন বিবেক নেই। এ কারনেই কিছু মানুষ পশুদের চেয়েও খারাপ আচরণ করে। এই প্রকার জীবনের চূড়ান্ত ফলাফল হল ঈশ্বরের দ্বারা অনন্ত শাস্তি।

আমরা সবাই জানি আমরা পাপী, কারণ আমাদের বিবেক আমাদের তাই বলে। অপরাধের এই অনুভূতিকে কখনও আমাদের অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ অপরাধের অনুভূতিটি "ব্যথার আশীর্বাদ"-এর মত। এটা আমাদেরকে বলে দেয় যে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ এবং আমাদের সুস্থ হওয়া প্রয়োজন। বিবেক হল মানুষের জন্য ঈশ্বরের দেওয়া সেরা উপহার।

যীশু বিবেককে চোখের সাথে তুলনা করেছিলেন (লুক ১১ অধ্যায়, ৩৪ থেকে ৩৬ পদে)। চোখ হচ্ছে আমাদের শরীরের পরিষ্কার অংশ, কারণ তারা প্রতিদিনই অসংখ্য বার আমাদের অশ্রুজল দ্বারা ধৌত হয়।

প্রতিটি সময় আমাদের চোখের পলক পড়তে থাকে (দিনে হাজার হাজার বার এমনটি ঘটে, এমনকি আমাদের অনুভূতি ছাড়াই ঘটে), এবং আমাদের চোখের সব ধূলিকণা ধৌত হয়। এমনকি একটি ক্ষুদ্র ধূলিকণাই যথেষ্ট চোখকে জ্বালাতন করার জন্য এবং আমাদের সমস্ত কাজ বাতিল করার জন্য, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা আমাদের চোখ ধুয়ে পরিষ্কার করি।

এভাবেই আমাদের উচিৎ আমাদের বিবেককে সবসময়ে পরিষ্কার রাখা।

কেবল মাত্র ঈশ্বরই পারেন আমাদের পাপ ক্ষমা ও শুচি করতে। এর একমাত্র উপায় হল যেন আমাদের বিবেক তার অপরাধবোধ সম্পর্কে স্পষ্ট হয়।

কিন্তু পাপের ক্ষমা বিষয়টা সহজলভ্য নয়।

অধ্যায় 4
ক্ষমা সম্পর্কে বাস্তব সত্য

কিভাবে ঈশ্বর আমাদের পাপ ক্ষমা করতে পারেন?

ঈশ্বর হলেন একজন ন্যায়নিষ্ঠ এবং ধার্মিক ঈশ্বর এবং তিনি একটি মানুষের পাপ উপেক্ষা করে তাঁকে ক্ষমা করতে পারেন না। এটা অন্যায় হবে।

ঈশ্বর হলেন পবিত্র এবং ন্যায়পরায়ণ ঈশ্বর। তাই তাঁকে পাপের দণ্ড দিতেই হবে।

কিন্তু যেহেতু তিনি একজন প্রেমময় ঈশ্বর, তাই তিনি আমাদের পাপ ক্ষমা করার জন্য একটি উপায় করেছেন।

সকল ধর্মই আমাদের ভাল, দয়ালু, এবং সত্যবাদী হতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু এই সব বিষয়গুলি নির্দেশ করে যে, আমাদের পাপের ক্ষমা পাওয়ার পর আমাদের কিভাবে জীবনযাপন করতে হবে।

ধার্মিকতা, উদারতা এবং সত্যতা এই সমস্ত বিষয়গুলি হল একটি অট্টালিকার উপরিকাঠামোর মত। পাপের ক্ষমা হল সেই অট্টালিকার ভিত্তিস্বরূপ।

একটি অট্টালিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল তার ভিত্তি।

আমাদের পাপ ক্ষমা করার জন্য ঈশ্বরকে এমন কিছু করতে হয়েছিল যা করা তাঁর জন্য জগৎ সৃষ্টি করার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন ও বেদনাদায়ক ছিল।

কারণ জগৎ সৃষ্টির জন্য, ঈশ্বরকে কেবল একটি করে শব্দ বলতে হয়েছিল, এবং অবিলম্বে জগতের অস্তিত্ব রচিত হয়েছিল।

কিন্তু একটি শব্দ বলার মাধ্যমে তিনি আমাদের পাপ ক্ষমা করতে পারতেন না।

মানুষের পাপ ক্ষমা করার জন্য, শুধুমাত্র একটি পথ ছিল।

ঈশ্বরকে আমাদের মতই একজন মানুষ হতে হয়েছিল।

তাঁকে বিভিন্ন পরীক্ষা, প্রলোভন এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে হয়েছিল, ঠিক যেমন মানবজাতি হিসাবে আমরাও এইসব বিষয়ের সম্মুখীন হই। এবং আমাদের পাপের দণ্ড নিজের উপর তুলে নিয়ে আমাদের পরিবর্তে তাঁকে এক বলি রূপে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল।

আমাদের পাপের দণ্ড কোন কষ্টভোগ, অসুস্থতা বা দারিদ্রতা নয়, অথবা পৃথিবীতে পুনরায় সামাজিক কোন নিম্নস্তরে জন্মগ্রহণ করা বা এই প্রকার কোন বিষয়ও নয়। এটি হল অনন্ত মৃত্যু- যা ঈশ্বরের থেকে চিরদিনের জন্য বিছিন্ন হওয়ার তুল্য।

শরীর থেকে বিছিন্ন হওয়াই হল শারীরিক মৃত্যু। তেমনি ভাবে আধ্যাত্মিক মৃত্যু হল ঈশ্বর থেকে বিছিন্ন হওয়া, যিনি সমস্ত জীবনের উৎস।

ভবিষ্যতে আপনি যা ভাল কাজ করেন সেগুলি আপনার অতীতে কৃত মন্দ কাজগুলির প্রতিকার কখনই করতে পারে না। পাপ হল একটি ঋণ যার দ্বারা আমরা ঈশ্বরের আইনের কাছে ঋণগ্রস্থ হয়ে পরি। খাজনা বা কর (ট্যাক্স) প্রদানে প্রবঞ্ছনা করার মাধ্যমে যদি আমরা দেশের আইন অমান্য করি, তবে ভবিষ্যতে খাজনা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও আমাদের ক্ষমা করা হবে না। ভবিষ্যতে যদিও আমরা আমাদের কর প্রদান করি, তবুও অতীতে ঋণ হয়ে থাকা করগুলি আমাদের পরিশোধ করতেই হবে। এটা পাপেরই সমরূপ।

যদিও বা ভবিষ্যতে আমরা অনেক ভাল কাজ করতে পারি, তবুও অতীতে আমরা যে পাপগুলো করেছি তার জন্য এখনও আমাদের মূল্য দিতে হবে।

এছাড়াও বাইবেল বলে যে, "আমাদের সকল ধার্মিকতার কার্যগুলি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মলিন বস্ত্রের মতো" (যিশাইয় ৬৪ অধ্যায়, ৬ পদ )।

ঈশ্বর ভাল কাজের প্রশংসা করেন। কিন্তু আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সেরা কার্যগুলিও তাঁর পবিত্রতার মানদণ্ড পূরণ করে না, কেননা তিনি অসীম পবিত্র। তাই আমরা একটি হতাশাজনক অবস্থায় আছি, কারণ আমাদের ভাল কাজও যথেষ্ট ভাল নয়। কোন উপায় নেই যার দ্বারা আমরা ঈশ্বরের উপস্থিতে প্রবেশ করতে পারি।

আমরা আশাহীন হয়ে হারিয়ে গেছি।

কিন্তু এখনও ঈশ্বর তাঁর মহান প্রেমের মাধ্যমে এমন একটি উপায় তৈরী করেছেন যার দ্বারা আমাদের পাপ ক্ষমা হতে পারে।

ঈশ্বর হলেন এতটাই জটিল যে মানুষের মন তাঁকে সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারেনা। বাইবেলে প্রকাশিত আছে যে ঈশ্বর এক, কিন্তু সেই একতার মধ্যে তিনটি ব্যক্তিত্ব আছে- যে ভাবে আমরা জানি পিতা, পুত্র (অর্থাৎ তাঁর এবং পিতার প্রকৃতি একই, তার মানে এই নয় যে তিনি পিতার মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছেন) এবং পবিত্র আত্মা, সবাই এক অপরের সমান।

আমাদের মানুষের মনে এই বিষয়টি উপলব্ধি করা অসম্ভব যে কিভাবে তিনটি পৃথক ব্যক্তিত্ব এক ঈশ্বর হতে পারে। আমরা তিনটি ব্যক্তিত্ব বলতে কেবল তিনটি দেহধারী ব্যক্তির কথাই চিন্তা করতে পারি। কিন্তু ঈশ্বর হলেন আত্মা। আমাদের মন সীমাবদ্ধ, তাই আমরা ঈশ্বরের জটিল প্রকৃতি বুঝতে পারি না।

যেমন একটি কুকুর সেইসব বিষয় বুঝতে পারে না যা মানুষ বুঝতে পারে। এমন কিছু ঈশ্বর সম্পর্কেও আছে যা আমরা মানুষেরা বুঝতে পারি না। আমরা কেবল সেইসব বিষয় জানতে পারি যা কিছু ঈশ্বর বাইবেলের মাধ্যমে আমাদের কাছে প্রকাশ করার জন্য নির্বাচিত করেছেন। এর থেকে বেশি কিছু নয়।

উদাহরণ স্বরূপ, আপনি একটি চতুর কুকুরের সামনে তিনটি হাড় রেখে সেগুলিকে এক একটি করে তুলে আনার মাধ্যমে তাকে যোগ করার বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে পারেন - যেমন ১+১+১ = ৩ হয়।

কিন্তু সেই কুকুরটিকে গুণ করার বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করুন - যেমন ১×১×১ =১

আপনি দেখবেন যে সবচেয়ে চতুর কুকুরটিও তা বুঝতে পারবে না!

আমরা মানুষেরা কিন্তু এটা খুব ভাল ভাবে বুঝতে পারি যে তিনটি '১' কে আবার '১' কে পরিণত করা যায় যদি তিনটি '১' কে পরস্পর গুণ করি!

আমরা কুকুরের চেয়ে যতটা ঊর্দ্ধে তার তুলনায় ঈশ্বর আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ঊর্দ্ধে।

গুণ করার বিষয়টি বোঝার জন্য একটি কুকুরকে মানুষ হতে হবে।

ঈশ্বরকে সম্পূর্ণ রূপে বোঝার জন্য আমাদেরও ঈশ্বর হতে হবে।

তাই এটা বিস্ময়কর নয় যদি আমরা বুঝতে পারি না যে ঈশ্বরের তিনটি ব্যক্তিত্ব তবুও ঈশ্বর এক। যদিও আমরা এটা বুঝতে পারছি না, তবুও আমরা জানি এটাই সত্য, কারণ ঈশ্বর তাঁর বাক্যের মাধ্যমে তাই বলেছেন।

একই ভাবে, অনেকে মানবীয় যুক্তি ব্যবহার করে এবং বলে যে ঈশ্বর যদি সর্বত্র থাকেন, তাহলে প্রত্যেক মানুষ, পশু ও উদ্ভিদ এবং প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়েও নিশ্চয় তিনি থাকবেন। এটা মানুষের সীমিত মনের যৌক্তিকতা যার দ্বারা ঐশ্বরিক সত্যকে বোঝা যায় না।

কিন্তু এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ঈশ্বর সর্ববিদ্যমান এর অর্থ হল যে সর্বত্র কি ঘটে চলেছে সে সম্পর্কে তিনি সবকিছুই জানেন। কিন্তু তিনি নিশ্চয়ই নরকে নেই, তথাপি তিনি জানেন যে সেখানে কি ঘটে চলেছে।

নরক (পাপীদের জন্য অনন্তজীবনের শাস্তি) এর অর্থ "এমন একটি স্থান যেখানে ঈশ্বর অনুপস্থিত"। এটাই নরকে পাপীদের দুর্দশাকে দুঃসহ করে তোলে।

অতএব ঈশ্বর নিশ্চিতভাবে সকলের মধ্যে বাস করেন না।

মানবজাতিকে তার পাপের অনন্ত শাস্তি থেকে রক্ষা করার জন্য প্রায় ২০০০ বছর আগে পবিত্র আত্মার অদ্ভুত প্রক্রিয়ার দ্বারা ঈশ্বর পিতা তাঁর পুত্রকে এক কুমারীর মাধ্যমে শিশু হিসাবে জন্ম গ্রহণ করতে পাঠান।

তাঁর নাম রাখা হয়েছিল যীশু খ্রীষ্ট।

তিনি শৈশব কাল থেকে প্রাপ্ত বয়সকাল পর্যন্ত বেড়ে ওঠার পথে সেই সমস্ত পরীক্ষা ও প্রলোভনের সম্মুখীন হন, যে সমস্ত পরীক্ষা ও প্রলোভনের সম্মুখীন মানব জাতি হয়ে থাকে এবং সেই সব প্রলোভনে তিনি জয়লাভ করেন।

তিনি কখনই কোন পাপ করেননি।

ঈশ্বর পিতা পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে ৩৩ বছর বয়সে দুষ্ট লোকদের কাছে সমর্পণ করেছিলেন ও ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটিকে অনুমোদন করেছিলেন। ক্রুশের উপরে তিনি আমাদের জন্য একটি অভিশাপ স্বরূপ হয়েছিলেন, এবং মানবজাতির পাপের জন্য শাস্তি গ্রহন করেছিলেন। সেখানে আমরা ঈশ্বরের মহান প্রেম দেখতে পাই।

যখন যীশু খ্রীষ্ট ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁর রক্ত বইয়ে দেন, তখনই আমাদের পাপের জন্য ধার্মিকতার দেনা সম্পূর্ণরূপে শোধ করা হয়েছিল।

ন্যায়বিচারের সমস্ত দাবি মিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

কবরস্থ হওয়ার তিন দিন পরে ঈশ্বর মৃত্যু থেকে যীশুকে উত্থাপন করেন, যাতে জগতের কাছে প্রমাণিত হয় যে ক্রুশের উপরে তাঁর আত্মত্যাগ গ্রাহ্য করা হয়েছে।

শুধুমাত্র যে এক ঈশ্বর আছেন এবং পৃথিবীতে ঈশ্বরের একমাত্র অবতার হয়েছেন প্রভু যীশু খ্রীষ্ট, এই বিষয়টি দুইটি কারণ দ্বারা প্রমাণিত হয়ঃ

১) বিশ্বজগতের পাপের জন্য এক মাত্র প্রভু যীশু খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

২) প্রভু যীশু খ্রীষ্টই একমাত্র যিনি মৃত্যুর পর জীবিত হয়ে উঠেন, আবার কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। এটি প্রমাণ করে যে মানুষের সব চেয়ে বড় শত্রু, মৃত্যুকে তিনি জয় করেছিলেন।

জীবিত হওয়ার পর আরও চল্লিশ দিন পৃথিবীতে থাকার পর যীশু স্বর্গে ফিরে যান, যেখানে তিনি আজও রয়েছেন।

পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন যে, জগতের বিচার করতে এবং ধার্মিকতা ও শান্তির দ্বারা এর উপরে শাসন করতে তিনি আবার ফিরে আসবেন। তিনি আমাদের কিছু নির্দিষ্ট চিহ্ন দিয়েছেন যেগুলি তাঁর পৃথিবীতে পুনরাগমনের আগেই দেখা যাবে।

যেহেতু আমরা এখন সেই চিহ্নগুলির অনেকাংশই সম্পূর্ণ হতে দেখছি, তাই আমরা জানি যে খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমন খুব, খুব সন্নিকট।

তিনি এই পৃথিবীতে ফিরে আসার আগে আপনার পাপের ক্ষমা লাভ করাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা ঈশ্বর আপনাকে খ্রীষ্টের মাধ্যমে দিতে চান।

অধ্যায় 5
অনুতাপ সম্পর্কে বাস্তব সত্য

পাপের দণ্ড হল আধ্যাত্মিক মৃত্যু - এর মানে হচ্ছে ঈশ্বরের উপস্থিতি থেকে চিরতরে বঞ্চিত হওয়া, ক্রুশের উপরে যীশু যা অনুভব করেছিলেন, যা আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি। তাঁর পিতা তাঁকে পরিত্যাগ করেছিলেন।

যীশু হলেন ঈশ্বর, তাই তাঁর আভ্যন্তরীণ ব্যক্তিত্ব হল অনন্ত, কেবল তিনিই পারতেন পিতার সাথে অনন্ত বিচ্ছেদের সাময়িক যন্ত্রণা ভোগ করতে - ক্রুশে তিন ঘণ্টা পুরো অন্ধকারের মধ্যে তিনি যে অনন্ত নরকের যন্ত্রণা ভোগ করেন, সেই যন্ত্রণা যা অনন্তকালের জন্য আমাদের ভোগ করা উচিত ছিল।

আমাদের পাপের শাস্তি তাঁর দ্বারা গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু আমরা ততক্ষণ ক্ষমাপ্রাপ্ত হতে পারি না এবং পাপের দণ্ড থেকে মুক্ত হতে পারি না যতক্ষণ না আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করি। এই কারণে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এখনও ঈশ্বরের ক্ষমা প্রাপ্ত হয়নি, যদিও খ্রীষ্ট তাদের জন্যেও মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

খ্রীষ্ট সমগ্র বিশ্বের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন, প্রত্যেক ধর্মের মানুষের জন্য, শুধুমাত্র খ্রীষ্টানদের পাপের জন্য নয়।

যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর দ্বারা ঈশ্বর আপনার জন্য যা কিনেছেন তা পাওয়ার জন্য আপনার অবশ্যই প্রথমে নিজের সমস্ত পাপের জন্য অনুতাপ করা আবশ্যক, এর অর্থ হল আপনি নিজ পাপী কাজের জন্য সত্যিই দুঃখিত এবং আন্তরিক ভাবে আপনার জানা প্রতিটি পাপ থেকে ফিরতে ইচ্ছুক।

প্রথমেই আপনার বিবেক যথেষ্ট সংবেদনশীল থাকবে না যে কিসে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন আর কিসে হন না। তাই আপনার জীবনে যে সব বিষয় ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এমন সব কিছু থেকে পুরোপুরি ফিরে আসা আপনার পক্ষে অসম্ভব। এবং ঈশ্বর তা দাবিও করেন না, কারণ তিনি বাস্তববাদী। তিনি কেবল আপনার ইচ্ছুক মনটি চান, যা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এমন সবকিছু ছেড়ে দিতে আগ্রহী।

আপনার বিবেক আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করে এমন বিষয়গুলির থেকে মুখ ফিরিয়ে আপনি একটি সূচনা করতে পারেন।

আপনার মন্দ অভ্যাসগুলি ছেড়ে দেওয়ার শক্তি আপনার মধ্যে নাও থাকতে পারে। এখানেও ঈশ্বর আপনার দুর্বলতাগুলি সম্পূর্ণ ভাবে বোঝেন। তিনি আপনার সেই শক্তির জন্য আশাও করেন না। তিনি কেবল আপনাকে জিজ্ঞাসা করেন "আপনি কি সেই কুঅভ্যাসগুলো ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক?" যখন তিনি দেখেন যে আপনি সচেতন এবং সত্যিই সমস্ত পাপপূর্ণ বিষয়গুলি ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক, তখন তিনি আপনাকে গ্রহন করবেন, আপনি যেমন আছেন তেমন অবস্থাতেই, যদিও আপনি এখনও অনেক মন্দ অভ্যাসের দ্বারা পরাজিত হচ্ছেন।

কি চমৎকার এই সুসংবাদটি!

অতীতে আপনি যে ভুলগুলি করেছেন সেগুলি শোধরানোর জন্য আপনার পুরানো পাপপূর্ণ বিষয়গুলি ত্যাগ করতে যে আপনি ইচ্ছুক, তা আপনার সেই ইচ্ছা প্রকাশের মাধ্যমে প্রমানিত হয়। এমনকি এখানেও, ঈশ্বর আপনার সীমাবদ্ধতা বোঝেন।

হাজার হাজার ভুল এবং পাপ যা অতীতে হয়তো আপনি করেছেন এবং কঠিন প্রচেষ্টা করেও সেগুলিকে হয়তো আপনি আর সঠিক করতে পারবেন না। কিন্তু কিছু বিষয় আছে যা আপনি পারবেন। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যতটা সম্ভব ভুল বিষয়গুলিকে সঠিক করে নেওয়া, শুধু এইটুকুই ঈশ্বর আপনার কাছে আশা করেন।

উদাহরণ স্বরূপ, আপনি যদি কারো কাছ থেকে অর্থ চুরি করে থাকেন তবে যত টাকা আপনি তার থেকে সঞ্চয় করেছেন, তা যথাশীঘ্র ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা অবশ্যই আপনার থাকা উচিৎ। যদি কখনও আপনি আপনার বাক্যের দ্বারা কাউকে আঘাত করেছেন এবং তা আপনার স্মরণে আসে, তবে আপনার অবশ্যই তার কাছে গিয়ে (বা তাকে লিখে) আপনি যা বলেছেন তার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। এই ধরনের কর্মের দ্বারা ঈশ্বর আপনার আন্তরিকতা ও নম্রতার পরীক্ষা করে থাকেন। তিনি শুধু নম্রদের সাহায্য প্রদান করেন।

ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়া আমরা সংরক্ষিত হতে পারি না।

বাইবেলে সত্য অনুতাপ বলতে বোঝায় প্রতিমাগুলির থেকে ঈশ্বরের প্রতি ফেরা (১ থিষলনীকীয় ১ অধ্যায়, ৯ পদ)

মূর্তিপূজা কি? মূলত এটি হল কিছু সৃষ্ট বিষয়গুলিকে স্রষ্টার ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া। এই সৃষ্ট বিষয়গুলি হতে পারে আমাদের অর্থ, আমাদের খ্যাতি, অথবা একটি সুন্দরী মহিলা বা অন্য কিছু।

এই ধরনের যে কোন সৃষ্ট বিষয়কে নির্বাচন করাই হল মূর্তি পূজা - কারণ এটি হল সৃষ্টিকর্তার পরিবর্তে সৃষ্ট বস্তুর উপাসনা করা - এবং এটিই হল সব পাপের মূল। ঈশ্বর যে কোন ধরনের মূর্তি পূজা ঘৃণা করেন, কারণ মানুষের হৃদয়ে তাঁর (ঈশ্বর) জন্য যে স্থান থাকা উচিৎ, এই সৃষ্ট বিষয়গুলি সেই স্থান দখল করে নেয় এবং এটাই মানুষকে ধ্বংস করে।

প্রতিমাগুলি মানুষের তৈরি করা শারীরিক আকৃতি বিশিষ্টও হতে পারে, তাদের আরাধ্য দেবতাদের প্রতিরূপ হিসাবে স্থাপন করার জন্য। কিন্তু সমগ্র বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের মহানতা ও সৌন্দর্যকে দূর থেকে অনুরূপভাবে অঙ্কন করা বা হাত দিয়ে গঠন করা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। ঈশ্বরের সৃষ্টি করা বিষয়গুলির সমরূপে ঈশ্বরের (সৃষ্টিকর্তা) প্রতিমা নির্মাণ করা হল তাঁকে অসম্মান করা।

ঈশ্বর একটি আত্মা এবং খালি চোখে তিনি অদৃশ্য। দিবা-রাত্র তাঁর বিষয়ে স্মরণ করানোর জন্য তিনি আমাদের সকলকে বিবেক দিয়েছেন। কিন্তু ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ এবং তীর্থযাত্রা সমূহ প্রায়ই বিবেকের কণ্ঠস্বর শোনার ক্ষেত্রে আমাদের বিকল্প হয়ে দাঁড়ায়।

যখন মানুষ ঈশ্বরের আইন উল্লঙ্ঘন করে, এবং ভবিষ্যতেও এইভাবে আইন উল্লঙ্ঘন ক্রিয়াটি চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে, তখন তারা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে তাদের বিবেকের কণ্ঠস্বর বন্ধ করার চেষ্টা করে। তারা কল্পনা করে যে ঈশ্বর তাদের বলিদান এবং তীর্থযাত্রার কারণে তাদের অনেক পাপ ক্ষমা করবেন। কিন্তু এটি একটি ভ্রান্তি।

ঈশ্বর আমাদের ধর্মীয় রীতিনীতি এবং ক্রিয়াকলাপ সমূহ দেখেন না। তিনি আমাদের হৃদয়ের অনুসন্ধান করেন এবং দেখেন যে আমরা আমাদের বিবেকের কণ্ঠস্বর শুনছি কি না।

তাই অনুতাপ করার বিষয়টি হল সবরকম প্রতিমা পূজা থেকে ফিরে আসা। সত্যিকারেই অনুতপ্ত হলে আমরা সব সৃষ্ট বস্তু থেকে মুখ ফিরিয়ে স্রষ্টার কাছে ফিরে আসি এবং তাঁকে বলি, "সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তুমিই কেবলমাত্র উপাসনা ও সেবা পাওয়ার যোগ্য। আমি এতদিন ধরে সৃষ্ট বস্তুগুলির উপাসনা করার জন্য দুঃখিত। এখন থেকে আমার জীবনে শুধু তুমিই সর্বোচ্চ হবে"।

অনুতাপ মানে এই নয় যে আমাদের চাকরী ছেড়ে দিতে হবে বা আমাদের পরিবার ছেড়ে কোন বনে জঙ্গলে বা পাহাড়ে গিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে যেতে হবে। তা নয়।

ঈশ্বর চান আমাদের সবারই পরিবার হোক, এবং আমাদের জীবিকা উপার্জনের জন্য আমরা যেন কাজকর্ম করি।

অর্থ উপার্জন করা পাপ নয়। কিন্তু ঈশ্বরের থেকে অর্থকে বেশি ভালবাসা এটি একটি পাপ।

আধুনিক যুগ আমাদের যে সকল আরামদায়ক বিষয়বস্তু প্রদান করে, সেগুলি ব্যবহার করা পাপ নয়। কিন্তু ঈশ্বরের চেয়ে বেশি এইসব আরামদায়ক বিষয়কে ভালবাসা এটি একটি পাপ।

ঈশ্বর মানব দেহকে এমন ভাবে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা খাদ্য, ঘুম ও যৌন সন্তুষ্টি উপভোগ করতে পারে।

এর কোনটির মধ্যেই ভুল কিছু নেই।

আমরা প্রায়ই ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত হয়ে থাকি এবং এর কারনে আমরা লজ্জাবোধ করি না, তেমনি আমাদের যৌন ইচ্ছার কারণেও আমাদের লজ্জিত হতে হবে না!! কিন্তু যখন আমরা ক্ষুধার্ত থাকি তখন আমাদের খাদ্য চুরি করা উচিৎ নয়, এবং আমাদের কার্যক্ষেত্রে কাজ করার সময় আমাদের ঘুমিয়ে থাকা উচিত নয়!!

একইভাবে, আমাদের যৌন ইচ্ছাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাদের কাউকে ধর্ষণ করা উচিত নয়। ঈশ্বর বিবাহকে নির্ধারণ করেছেন - তিনি চান একটি পুরুষের একটি স্ত্রী হোক - যাতে তাদের যৌন বাসনা পূর্ণ হয়। বিবাহের বাইরে কোন যৌন সম্পর্ক হল পাপ। আমাদের সমস্ত যৌন পাপের জন্য অনুতাপ করে এগুলিকে ত্যাগ করা উচিত। এবং প্রকৃতভাবে ঈশ্বরের প্রতি ফেরা উচিৎ।

অন্য আরেকটি পাপের জন্য আমাদের অনুতপ্ত হওয়া উচিত এবং ত্যাগ করা উচিত সেটি হল অন্যদের ক্ষমা না করার মনোভাব। যদি আপনি চান যে ঈশ্বর আপনার পাপ ক্ষমা করবেন তবে আপনাকেও তাদের সকলকে ক্ষমা করতে হবে যারা যে কোন ভাবে আপনার ক্ষতি করেছে।

ঈশ্বর আপনার প্রতি যা করেছেন আপনাকেও অন্যদের প্রতি তাই করতে হবে - যদি তা করতে ইচ্ছুক না হন, তবে ঈশ্বর আপনাকেও ক্ষমা করবেন না।

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন, "যদি তোমরা অন্যদের ক্ষমা না কর, তবে তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তোমাদেরও ক্ষমা করবেন না" (মথি ৬ অধ্যায়, ১৫ পদ)।

আপনার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন মনে হতে পারে তাদের ক্ষমা করা যারা আপনার চরম ক্ষতি করেছে। তখন আপনি প্রার্থনায় ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চাইতে পারেন তাদের ক্ষমা করার জন্য।

আপনাকে সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরের মহান শক্তি সর্বদাই উপস্থিত থাকে। যদি ঈশ্বর আপনাকে তাঁর মহান শক্তি দিয়ে সাহায্য করেন তাহলে কোন কিছু করা আপনার পক্ষে অসম্ভব হবে না!

ঈশ্বর আমাদের সব পাপ ক্ষমা করতে পারেন, সেগুলি যতই বড় বা মন্দ হোক না কেন। কিন্তু কেবল যদি আমরা সেইসব পাপের জন্য অনুতাপ করি - অর্থাৎ যদি আমরা আমাদের পাপের জন্য সত্যিই দুঃখিত হই এবং আন্তরিকভাবে আমাদের পুরাতন পাপপূর্ণ বিষয়গুলি ত্যাগ করতে চাই।

অধ্যায় 6
বিশ্বাস সম্পর্কে বাস্তব সত্য

যখন একবার আমরা অনুতপ্ত হই, তখন ঈশ্বরের ক্ষমা পাওয়ার জন্য পরবর্তী প্রয়োজনীয়তাটি হল বিশ্বাস।

বাইবেল বলে, "কেননা অনুগ্রহেই, বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ" (ইফিষীয় ২ অধ্যায়, ৮ পদ)।

ঈশ্বর আমাদের সাহায্য ও আশীর্বাদ প্রদানের জন্য যখন হাত বিস্তারিত করেন তখন সেটাই হল তাঁর অনুগ্রহ। এবং আমরা যখন ঈশ্বরের হাত থেকে সেই সাহায্য ও আশীর্বাদ গ্রহন করার জন্য হাত উত্তোলন করি তখন সেটাই হল আমাদের বিশ্বাস।

যেমনটি আমরা আগে দেখেছি, ঈশ্বর কখনই তাঁর কার্য সম্পন্ন করার জন্য হৃদয়হীন রোবটদের চান না, যারা শুধু এই জন্যই কাজ করে থাকে কারন ঈশ্বর তাদের তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। না। তিনি চান যেন আমরা নিজ ইচ্ছায় বিষয়গুলি নির্বাচন করি।

আপনি কি বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বর একজন ভালো ঈশ্বর যিনি আপনাকে খুব ভালবাসেন?

আপনি কি বিশ্বাস করেন যে আপনার পাপের জন্য ঈশ্বর তাঁর পুত্র প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে ক্রুশের উপরে মৃত্যুবরণ করতে পাঠিয়েছিলেন এবং তিন দিন পরে মৃতদের মধ্য থেকে তাঁকে উত্থাপিত করেছিলেন এবং তিনি আজ স্বর্গে জীবিত আছেন?

যদি তা বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনি এখনই পাপের ক্ষমা পেতে পারেন যা ঈশ্বর আপনাকে দিতে চান। আপনাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না।

যীশু খ্রীষ্টের নাম ব্যতিত পৃথিবীতে আর অন্য কোন নাম নেই - যে নামে পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়। যদি আপনি তাঁকে আপনার পালনকর্তা ও পরিত্রাতা হিসাবে গ্রহন করতে চান, তবে "অন্য সকলকে ত্যাগ কর এবং তাঁরই নিকটবর্তী হও" যেমন বিবাহের ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য। বিবাহে, একজন মহিলাকে তার পুরাতন সকল প্রেমিকদের ছেড়ে দিতে হয় এবং স্বামী হিসাবে একজন পুরুষের কাছে তাকে সমর্পিত হতে হয় তার অবশিষ্ট জীবনের জন্য।

বাইবেলে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটিকে একটি আধ্যাত্মিক বিবাহের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যেখানে শুধু তিনি একমাত্র আমাদের স্বর্গীয় স্বামী। তাই আপনি বলতে পারেন না যে আপনি খ্রীষ্টকে গ্রহন করতে ইচ্ছুক এবং এখনও অন্য দেবদেবীর উপাসনা করে চলেছেন। আপনাকে যে কোন একজনকে মনোনীত করতে হবে।

যদি আপনি সেটি মনোনীত করতে চান, তবে এখনই হচ্ছে সেই সময়।

এই মুহূর্তে শুধু হাঁটু পেতে বসুন, চোখ বন্ধ করুন এবং ঈশ্বরকে এই কথাগুলি বলুন। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন তিনি আপনার কথা শুনতে পাচ্ছেন, এবং তিনি আপনার কথা শুনতে আগ্রহী। এই কথাগুলি অর্থপূর্ণ ভাবে ও ধীরে ধীরে বলুনঃ

"প্রভু যীশু খ্রীষ্ট, আমি একজন পাপী এবং আমি সত্যিই আমার সমস্ত পাপ থেকে ফিরে আসতে চাই। আমি বিশ্বাস করি যে তুমি আমার সমস্ত পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছ এবং তুমি মৃত্যু থেকে আবার জীবিত হয়ে উঠেছ এবং তুমি আজও জীবিত আছ। দয়া করে আমার সমস্ত পাপের জন্য আমাকে ক্ষমা করো। আমার হৃদয়ে ও জীবনে এসো, এবং আজ থেকে আগামী দিনে তুমি আমার জীবনের প্রভু হও। আমি অন্যান্য সমস্ত দেবতাদের ত্যাগ করে এখন থেকে শুধু তোমার উপাসনা করতে চাই।"

এটি একটি খুব সাধারণ প্রার্থনা যা করার জন্য আপনার এক মিনিটেরও কম সময় লাগবে। কিন্ত যদি আপনি এই প্রার্থনাটি সম্পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে করেন তবে আপনার হৃদয় অনন্তকালের জন্য সংরক্ষিত হবে। আপনি অবিলম্বে ঈশ্বরের একটি সন্তান হয়ে যাবেন।

এটি কোন জাদুকারী সূত্র নয় যে যারা এটিকে টিয়াপাখির মতো পুনরাবৃত্তি করবে তারা সবাই আশীর্বাদ পাবে। এটি সম্পূর্ণ ভাবে আপনার হৃদয়ের আন্তরিকতার উপর নির্ভর করে। আপনি যদি বাস্তবিক এর অর্থ বুঝে এটি বলে থাকেন, তাহলে ঈশ্বর আপনার পাপ ক্ষমা করবেন, আপনাকে গ্রহন করবেন এবং আপনাকে তাঁর সন্তান করে নেবেন। যদি আপনি কপট বা আন্তরিকহীন হয়ে থাকেন তাহলে আপনি অপরিবর্তিত হয়েই থাকবেন।

ঈশ্বর কখনই কাউকে তার জীবনে খ্রীষ্টকে গ্রহন করার জন্য বাধ্য করবেন না। এবং কোন প্রকৃত খ্রীষ্টান ব্যক্তিও অন্য কাউকে বাধ্য করবে না খ্রীষ্টকে গ্রহন করার জন্য। বলপূর্বক পরিবর্তন আসলে কোন পরিবর্তনই নয়।

আমরা সত্যই ক্ষমা পেয়েছি এবং ঈশ্বরের দ্বারা গৃহীত হয়েছি এবং তিনি যে আমদের তাঁর সন্তান করে নিয়েছেন, এই আশ্বাস পাওয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বর চান না যে আমরা এই আশ্বাসবিহীন হয়ে থাকি। ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মা দ্বারা আমাদের এই আশ্বাস প্রদান করেন, তিনি আমাদের অন্তরে আসেন এবং বলেন আমরা ঈশ্বরের সন্তান। ঈশ্বর তাঁর লিখিত বাক্যে (বাইবেল) যে সকল প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়ে গিয়েছেন সেই সকল দ্বারাও তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়ে থাকেন।

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন, "যে আমার কাছে আসে তাকে আমি কোনমতে প্রত্যাখ্যান করব না"। (যোহন ৬ আধ্যায়, ৩৭ পদ)

খ্রীষ্টের এই প্রতিশ্রুতির উপর আমরা সম্পূর্ণ নির্ভর করতে পারি, অনন্তকালের জন্য।

আপনি কি এইমাত্র প্রভু যীশু খ্রীষ্টের কাছে এই প্রার্থনাটি আন্তরিকতার সাথে নিবেদন করেছেন? তাহলে বাস্তবিক আপনি তাঁর কাছে এসেছেন। তাই আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে ঈশ্বর আপনাকে প্রত্যাখ্যান করেননি। তিনি আপনাকে গ্রহন করেছেন। ঈশ্বরের কাছে নিজেকে নিয়ে আসার কর্তব্যটি যদি আপনি পালন করে থাকেন, তবে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনাকে গ্রহন করার জন্য ঈশ্বরও তাঁর কর্তব্যটি পালন করেছেন।

এখন আপনার অনুভূতির উপর আপনাকে আর নির্ভর করতে হবে না, যে আপনি ঈশ্বরের দ্বারা গৃহীত হয়েছেন কিনা।

অনুভূতিগুলি আমাদের শারীরিক দেহের সাথে সম্পর্কিত, এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ে এগুলি সর্বদাই ভ্রান্তিজনক হয়ে থাকে।

অনুভূতি গুলির উপরে আমাদের আস্থা রাখার বিষয়টি হচ্ছে ঠিক যেন একটি বাড়ির ভিত্তিমূল বালির উপরে স্থাপন করার মতো।

ঈশ্বরের বাক্যের প্রতিজ্ঞাগুলির উপরে আমাদের বিশ্বাস রাখা উচিৎ। এবং এই বিষয়টি হচ্ছে একটি শিলার উপরে গৃহ নির্মাণের মতো।

যখন একবার আপনি এই সত্যের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যাবেন যে আপনি ঈশ্বরের সন্তান হয়েছেন, তখন আপনার এই সত্যটিকে প্রকাশ্যে স্বীকার করা উচিৎ।

বাইবেল বলে যে আপনি হৃদয়ে যা বিশ্বাস করেন তা আপনার জিহ্বায় স্বীকার করা আবশ্যক। তাই যীশু খ্রীষ্ট যে আপনার ত্রাণকর্তা এবং প্রভু, তা আপনার ওষ্ঠাধরে স্বীকার করা আবশ্যক। আপনার বন্ধুদের ও আত্মীয়দের জানান উচিত যে, খ্রীষ্ট আপনার পাপ ক্ষমা করেছেন এবং তিনি এখন আপনার জীবনের একমাত্র প্রভু।

তারপর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে খ্রীষ্টের সঙ্গে আপনার সম্পর্কটি স্বীকার করা আবশ্যক। আপনার হৃদয় ও জীবন খ্রীষ্টকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার বাপ্তিস্ম গ্রহন করা উচিৎ। বাপ্তিস্ম কোন একটি ধার্মিক রীতি নয়। এটি হল ঈশ্বরের কাছে, মানুষের কাছে, স্বর্গদূতেদের এবং শয়তানের কাছে একটি প্রকাশ্য সাক্ষ্য যে আপনি এখন কেবল যীশু খ্রীষ্টেরই অন্তর্গত।

বাপ্তিস্মের সময়, অন্য খ্রীষ্ট বিশ্বাসী আপনাকে পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মার নামে সম্পূর্ণ রূপে জলে নিমজ্জিত করবেন (নদীতে বা জলাসয়ের মধ্যে), এবং তারপর জল থেকে আপনাকে আবার উত্তোলন করবেন। এই সাধারণ কার্যের মাধ্যমে আপনি এই বিষয়টির সাক্ষ্য দেবেন যে আপনার পুরাতন ব্যক্তিত্বটি মারা গেছে, প্রতীকস্বরূপ জলে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত হওয়ার মাধ্যমে আপনি তাকে কবরস্থ করেছেন।

জল থেকে উত্তোলিত হওয়ার মাধ্যমে আপনি স্বীকার করবেন যে আপনি এখন একজন নতুন ব্যক্তি (মৃত্যু থেকে জীবিত, আধ্যাত্মিক ভাষায়), শুধুমাত্র ঈশ্বরকে খুশি করতে চান।

আপনি এখনও নিখুঁত হয়ে যান নি। নিখুঁত হতে আপনার সারাজীবন সময় লাগবে। কিন্তু আপনি আপনার জীবনের দিক পরিবর্তন করেছেন। এখন, আপনি আর পাপ করতে চান না বা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করতে চান না।

আপনি এখন স্বর্গের একজন নাগরিক এবং ঈশ্বরের সন্তান হয়েছেন।

অধ্যায় 7
পরিত্রাণ সম্পর্কে বাস্তব সত্য

"যীশু" নামের অর্থ "ত্রাণকর্তা"।

এই নামেই তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন, কারণ লোকদের পাপ থেকে বাঁচানোর জন্য - তিনি এটাই করতে এসেছিলেন।

পরিত্রাণ হল ক্ষমার চেয়ে আরও বেশি কিছু।

পার্থক্যটি পরিষ্কার করে বোঝার জন্য একটি দৃষ্টান্ত ব্যবহার করি।

মনে করুন যে আমার বাড়ির বাইরের রাস্তাটি মেরামত করা হচ্ছে, এবং সেখানে একটি গভীর খাদ খনন করা হয়েছে। আমি আমার ছোট ছেলেকে সতর্ক করে বললাম, "সেই খাদের কাছে যেও না, কারণ তুমি তার মধ্যে পড়েও যেতে পার"। কিন্তু মনে করুন যে সে আমার আদেশ অমান্য করে সেই গর্তের কাছে চলে গেল ভেতরটি দেখার জন্য। এবং সে পিছলে গিয়ে সেই গর্তে পড়ে গেল। তারপর সেই ১০ ফুট গভীর গর্ত থেকে ক্রন্দন করে সে আমায় ডাকতে থাকে।

যখন আমি সেখানে আসি, তখন সে আমাকে বলল, সে আমার আদেশ অমান্য করার জন্য সত্যই দুঃখিত, এবং তাঁকে ক্ষমা করার জন্য আমাকে অনুরোধ করল। ধরুন আমি তাকে বললাম, "ঠিক আছে পুত্র, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। এবার আমি চললাম"। তবে আমি তার প্রতি কি করলাম? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু আমি তাকে বাঁচালাম না।

পরিত্রাণ ক্ষমার চেয়েও অনেক বেশি একটি বিষয়। পরিত্রাণ সাধিত হতো আমার সেই গর্তের ভেতর থেকে তাকে টেনে তুলে বের করার মাধ্যমে।

যীশু আমাদের জন্য এটাই করতে এসেছিলেন। এমনটি যথেষ্ট নয় যে তিনি শুধু আমাদের পাপ ক্ষমা করেন। তিনি পাপ থেকে আমাদের পরিত্রাণও করতে এসেছিলেন।

বার বার আমাদের বিবেককে অমান্য করার ফলে আমরা সকলেই পাপের গভীর গর্তে পতিত হয়েছি। এখন যদি ঈশ্বর আমাদের ক্ষমা করেন, তাহলে এটি নিজেই একটি বিস্ময়কর খবর হবে। কিন্তু খ্রীষ্টের সুসমাচার হল যে তিনি কেবল আমাদের ক্ষমা করবেন তাই নয়, বরং পাপের শক্তি থেকেও আমাদের বাঁচাবেন।

পরিত্রাণ আমাদের তিনটি কালেই অনুভব করতে হবে - অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতে। আমাদের অবশ্যই সর্বপ্রথমে পাপের শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে হবে। তারপর পাপের ক্ষমতা থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হবে। তারপর অবশেষে, আমাদের পাপের উপস্থিতি থেকে রক্ষা পাব, যখন আমরা স্বর্গলাভ করব।

পরিত্রাণের প্রথম অংশটির বিষয়বস্তু হল - আমাদের পাপের ক্ষমা, যা আমাদের অতীতের অপরাধ অপসারণ করে।

কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। ভবিষ্যতেও সৎভাবে জীবন যাপন করার জন্য আমাদের ঈশ্বরের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। এই জন্য ঈশ্বর আমাদের তাঁর শক্তি দিয়ে থাকেন।

আমি একটি মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রের একটি গল্প শুনেছি যেখানে মানসিকভাবে অসুস্থ লোকেরা চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিল। সেই ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ সুস্থ হয়েছে কিনা তা জানার জন্য তাদের একটি পরীক্ষা করা হতো। তাদের এক এক করে এমন একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হতো যেখানে একটি নল থেকে ক্রমাগত জল প্রবাহিত হতো। তারপর একটি হাতল যুক্ত ন্যাকড়া এবং একটি বালতি দিয়ে সেই ঘরের মেঝেটিকে শুকনো করতে বলা হতো। এমনটি করতে গিয়ে যদি কেউ প্রথমে সেই নলটি বন্ধ না করেই সেই কাজ করার চেষ্টা করতো তবে সেটাই ইঙ্গিত করতো যে সে এখনও তার স্বাভাবিক জ্ঞানে আসে নি।

এই একই সমস্যা আমাদেরও। আমাদের মধ্যে এমন একটি নল আছে যা ক্রমাগত পাপ প্রবাহিত করছে। যীশু খ্রীষ্ট কেবলমাত্র আমাদের কৃত পাপ সমূহ মুছেই ফেলেন না। তার সাথে তিনি আমাদের সেই নলকে ভালভাবে বন্ধ করার ক্ষমতাও দিয়েছেন। তা না হলে খ্রীষ্টের সুসমাচার কখনই একটি ভালো সংবাদ হতো না।

এই সুসমাচারটি (খুশির খবরটি) বাইবেলে এইভাবে বর্ণিত হয়েছে "পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের শক্তি" (রোমীয় ১ আধ্যায়, ১৬ পদ)।

শক্তির প্রথম উৎস হল ঈশ্বরের বাক্য। বাইবেল একটি শক্তিশালী অস্ত্র যা আমাদের প্রলোভনকে পরাস্ত করতে সাহায্য করতে পারে। আমরা বাইবেলে পড়ি যে যীশু খ্রীষ্ট নিজেই ঈশ্বরের বাক্যের শক্তির মাধ্যমে শয়তানের প্রলোভনকে পরাজিত করেছিলেন (মথি ৪ আধ্যায়, ১ থেকে ১১ পদ)।

তাই আমাদের প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যাতে ঈশ্বর এটির মাধ্যমে আমাদের সাথে কথা বলতে পারেন এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবন যুদ্ধের সম্মুখীন হওয়ার জন্য আমাদের শক্তি যোগাতে পারেন।

বাইবেল যুবকদের বলছে, "তোমরা বলবান, এবং ঈশ্বরের বাক্য তোমাদের অন্তরে বাস করে, আর তোমরা সেই পাপ আত্মা (শয়তান) কে জয় করিয়াছ" (১ যোহন ২ অধ্যায়, ১৪ পদ)।

শক্তির দ্বিতীয় উৎস হল ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা যিনি আমাদের মধ্যে বাস করতে আসেন। আমাদের সাথে প্রতিদিন কথা বলার জন্য, জীবন সংগ্রামের সম্মুখীন হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের শক্তি যোগানোর জন্য এবং যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য হিসাবে তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ করে চলতে আমাদের সাহায্য করার জন্য পবিত্র আত্মা স্থায়ীভাবে আমাদের মধ্যে বাস করতে চান। ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করতে হবে যেন তিনি ক্রমাগত আমাদের পবিত্র আত্মায় পূর্ণ করেন।

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন, "যদি পাপী ব্যক্তিরা তাদের সন্তানদের যা প্রয়োজন তা তাদের দিতে পারেন, তবে এটা কত অধিক নিশ্চয় যে স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে তাদেরকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন"। (লুক ১১ অধ্যায়, ১৩ পদ)

শক্তির তৃতীয় উৎস হল- খ্রীষ্টীয় স্বভাবের অন্যান্য ব্যক্তিদের সাথে সহভাগিতা।

যখন অনেকগুলি কয়লাকে আগুনে একত্রিত করা হয় তখন সবকটি উজ্জ্বলভাবে জ্বলতে থাকে। কিন্তু যদি একটি কয়লাকে তুলে নেওয়া হয় (এমনকি এটি যদিও সবচেয়ে উজ্জ্বলভাবে জ্বলছিল) তবে তা খুব শীঘ্রই নির্বাপিত হবে। এভাবেই একই ঘটনা আমাদের সাথেও ঘটবে যদি আমরা অন্য খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের সাথে সহভাগিতা না করে নিজেরা নিজেদের মতো করে, ঈশ্বরের জন্য জীবন যাপন করার চেষ্টা করি।

কিন্তু এখানে আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যারা নিজেদেরকে "খ্রীষ্টান" বলে তারা সকলেই সত্য খ্রীষ্টান নয়।

প্রকৃতপক্ষে, এটাই বলা ঠিক হবে যে ৯০% যারা নিজেদেরকে খ্রীষ্টান বলে পরিচয় দেয় তারা ঈশ্বরের সন্তান নয় (তারা যে কোনও খ্রীষ্টীয় দলের সদস্য হতে পারে)। তারা তাদের পাপ পরিত্যাগ করার মাধ্যমে, নিজের জীবনের প্রভু হিসাবে খ্রীষ্টকে গ্রহন করার একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। তারা নিজেদের "জন্মের আকস্মিক ঘটনার" কারণে নিজেদের খ্রীষ্টান বলে মনে করে - অর্থাৎ, তারা খ্রীষ্টীয় পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিল।

আমাদের এমন লোকদের এড়িয়ে চলতে হবে যারা নামমাত্র খ্রীষ্টান এবং আমাদের সেইসব ব্যক্তিদের সাথে সহভাগিতা করা উচিৎ যারা তাদের অভিজ্ঞতা দ্বারা খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হয়েছেন এবং তাদের প্রতিদিনের জীবনে যীশু খ্রীষ্টের অনুসরন করে চলতে চান।

যখন আমরা খ্রীষ্টকে আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্তা রূপে গ্রহণ করি তখন বাইবেল বলে যে আমরা উর্দ্ধ থেকে জন্মলাভ করি, কারণ তখন আমরা ঈশ্বরের সন্তান হয়ে যাই। ঈশ্বর এখন আমাদের পিতা। ঠিক জাগতিক পিতাদের মতো ঈশ্বরও পৃথিবীতে আমাদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু প্রদান করতে আগ্রহী হন - আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক উভয় বিষয়ে।

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন যে আমরা যদি আমাদের জীবনে প্রথমে ঈশ্বরীয় বিষয়গুলির অনুসন্ধান করি তবে পৃথিবীতে আমাদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সমস্ত জিনিস আমাদেরকে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, "তোমার স্বর্গীয় পিতা খুব ভালভাবে জানেন যে তোমার কি প্রয়োজন এবং তিনি তোমাকে সেই সমস্তই দেবেন- যদি তুমি তাঁকে তোমার জীবনে প্রথম স্থান দাও, এবং তাঁর ইচ্ছা মতো জীবন যাপন করো" (মথি ৬ অধ্যায়, ৩৩ পদ)।

ঈশ্বরের সন্তানদের প্রার্থনার অধিকারটি হল একটি বিশেষাধিকার - সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সাথে কথা বলার এবং তাঁর আত্মার দ্বারা ঈশ্বর যা বলেন তা শোনার অধিকার। ঈশ্বর সাধারণত একটি কণ্ঠস্বরে আমাদের সাথে কথা বলেন না যে আমরা তা আমাদের কানে শুনতে পাই, কিন্তু আমাদের আন্তরিক আত্মার এক অনুভূতির মাধ্যমে, যা একটি শ্রবণ যোগ্য কণ্ঠস্বরের মতোই বাস্তব। যীশু আমাদের উৎসাহিত করেছেন আমাদের হৃদয়ের সমস্ত বোঝাস্বরূপ বিষয় ঈশ্বরকে বলার জন্য।

অনেক মানুষ নীরবে যন্ত্রণা ভোগ করছেন কারণ তাদের দুঃখের সহভাগী হওয়ার জন্য তাদের পাশে কেউ নেই। কিন্তু ঈশ্বরের সন্তানদের এক স্বর্গীয় পিতা আছেন, যাঁর সাথে তারা সব কিছু ভাগ করতে পারে। এই পৃথিবীতে তার যা প্রয়োজন সেই সমস্ত সরবরাহ করার জন্য তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতাকেও বিশ্বাস করতে পারেন।

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আমাদের শিখিয়েছেন, ঈশ্বরের কাছে নিবেদনের মাধ্যমে কোন বিষয় বা পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে। এটাই হল প্রার্থনার অলৌকিক কাজ। আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটে সেই সব কিছুকে অদৃষ্টবাদী হয়ে গ্রহণ করার কোন দরকার নেই (শুধু এই কথা বলে যে, যা কিছু হয়েছে ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই হয়েছে), যদি সেই বিষয়গুলি কোন ভাবে আমাদের বা আমাদের পরিবারের ক্ষতি করে থাকে। ঈশ্বরের ইচ্ছার বশীভূত হওয়া এবং অদৃষ্টবাদ এই দুটি ভিন্ন বিষয়। আমাদের যা কিছু প্রয়োজন তা ঈশ্বরের কাছে চাইতে আমরা উৎসাহীত।

বাইবেলের মধ্যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে "ঈশ্বর তোমাদের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকার পূর্ণরূপে সাধন করিবেন" (ফিলিপীয় ৪ অধ্যায়, ১৯ পদ)

তবে প্রত্যেক জ্ঞানবান পিতার মতো ঈশ্বরও আমাদের সব কিছু দিয়ে দেবেন না যা পাওয়ার জন্য আমরা তাঁর কাছে নিবেদন করি। তিনি শুধুমাত্র আমাদের যা প্রয়োজন তাই দেবেন এবং তাঁর দৃষ্টিতে আমাদের জন্য যা উত্তম তাই দেবেন।

ঈশ্বর হলেন মঙ্গলময় ঈশ্বর, এবং তিনি কখনো চান না যে কোন মন্দ বিষয় কখনও তাঁর সন্তানদের কাছে আসুক। তাই আমরা সাহসের সাথে তাঁর কাছে যেতে পারি এবং তাঁকে নিবেদন করতে পারি যেন তিনি আমাদেরকে সমস্ত মন্দ বিষয় থেকে উদ্ধার করেন।

পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা কষ্ট ভোগ করছে কারণ কিছু মানুষ তাদের উপর মন্ত্র-তন্ত্র বা কালো যাদু করেছে। যদি আপনি আপনার হৃদয় ও জীবন খ্রীষ্টকে দান করেন, তবে এই ধরনের শয়তানের কার্যক্রম আপনাকে আর ক্ষতি করতে পারবে না। শয়তানকে দূর করার জন্য আপনি প্রভু যীশু খ্রীষ্টের (যিনি শয়তানকে পরাজিত করেছেন) নাম ব্যবহার করতে পারেন।

কোন যাদুবিদ্যা বা কালোযাদু আপনাকে কখনও কোন ক্ষতি করতে পারবে না এমনকি আপনাকে ও আপনার সন্তানগণকে স্পর্শও করতে পারবে না যদি আপনি যীশু খ্রীষ্টের নামে এটিকে প্রতিহত করেন। আপনার উপর সম্পন্ন যেকোন জাদুবিদ্যার ক্ষমতা এখন এই মুহুর্তেই সম্পূর্ণ ভাবে নিষ্ফল করা যেতে পারে যদি আপনি নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে আহ্বান করেন।

বাইবেল বলে যে, যীশু যখন ক্রুশে মারা গিয়েছিলেন, তখন তিনি শয়তানকে পরাজিত করেছিলেন এবং তার ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছিলেন। সেটা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়ে গেছে। কিন্তু আপনার পাপের ক্ষমার ক্ষেত্রে, এখনও, শয়তানের পরাজয়ের বিষয়টি আপনার জীবনে একটি বাস্তবতা হতে পারে না, যতক্ষণ না আপনি নিজে এটিকে স্বীকার করবেন।

"মৃত্যু দ্বারা, তিনি (যীশু) শয়তানের ক্ষমতাকে চূর্ণ করেছেন। কেবল এভাবেই তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল সেই সব মানুষদের উদ্ধার করা, যারা সারা জীবন ক্রীতদাসের মতো শয়তানের ভয়ে জীবন যাপন করেছিল" (ইব্রীয় ২ অধ্যায়, ১৪ এবং ১৫ পদ)।

"নিজেকে নম্র ভাবে ঈশ্বরকে দাও এবং শয়তানের প্রতিরোধ কর, এবং সে তোমাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাবে" (যাকোব ৪ অধ্যায়, ৭ পদ)।

আমরা ঈশ্বরের সন্তান হওয়ার পরেও ঈশ্বর এখনও শয়তানকে আমাদের প্রলোভিত করার অনুমতি দিয়ে থাকেন - কারণ আমরা এইভাবে শক্তিশালী হতে থাকব। কিন্তু এখন শয়তানের প্রতিরোধ করার জন্য এবং তার সকল আক্রমনের উপর জয়লাভ করার জন্য আমাদের মধ্যে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার শক্তি রয়েছে।

ঈশ্বর এই প্রতিশ্রুতি দেন নি যে তাঁর সন্তানদের পার্থিব জীবন পরীক্ষা ও সমস্যা মুক্ত থাকবে। না।

ঈশ্বর চান যেন আমরা পরিশ্রমী এবং দৃঢ় হতে পারি এবং সমৃদ্ধশালী পিতা-মাতার নষ্ট সন্তানদের মতো নয় যারা জন্ম থেকেই অতিরিক্ত প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। আমাদের শক্তিশালী করার জন্য তিনি অন্যান্য মানুষদের মতই আমাদেরকেও পরীক্ষা এবং সমস্যার সম্মুখীন করে থাকেন।

কিন্তু এই গুলি সেই পরীক্ষা যার মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরকে আরও ভাল ভাবে জানতে পারি প্রতিটি পরিস্থিতিতে তাঁর আশ্চর্যজনক সাহায্য লাভের মাধ্যমে।

অধ্যায় 8
অনন্তকাল সম্পর্কে বাস্তব সত্য

যে ব্যক্তি ঈশ্বরের সন্তান হয়েছেন তার জন্য অনন্তকালের বিষয়গুলি সময়ের চেয়ে বেশি মূল্যবান। তার কাছে এই পার্থিব বিষয় ও সময়ের তুলনায় স্বর্গের মূল্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

২০০০ বছর আগে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হওয়ার পর স্বর্গারোহণের সময় এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি এই পৃথিবীতে আবার ফিরে আসবেন।

এটাই "খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমন" হিসাবে উল্লেখিত।

এই বিশ্বের ইতিহাসে এটাই পরবর্তী মহান ঘটনা।

ঈশ্বরের একটি সন্তান উপলব্ধি করতে পারে যে, সেদিন তাকে তার সমগ্র জীবনের হিসেব ঈশ্বরকে দিতে হবে, যেদিন খ্রীষ্ট এই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।

এই পৃথিবী হল অনন্তকালের দিকে আমাদের যাত্রায় অগ্রগতির একটি ধাপ। আমরা এখানে এখন একটি কালের মধ্যে রয়েছি। আমরা স্বর্গীয় অনন্তকালের বিষয়গুলিকে না কি ক্ষণস্থায়ী এই পার্থিব বিষয়গুলিকে মনোনয়ন করছি তা দেখার জন্য ঈশ্বর আমাদের জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতির মাধ্যমে পরীক্ষা করে চলেছেন।

যদি আমরা জ্ঞানবান হই তাহলে আমরা এমন বিষয়গুলি বেছে নেব যেগুলি অনন্তকালের ক্ষেত্রে মূল্যবান হবে।

একটি ছোট শিশু ৫০০ টাকার নোটের পরিবর্তে একটি চকচকে, রংযুক্ত কাগজ পছন্দ করবে কারণ শিশুর কাছে মূল্যের কোন জ্ঞান নেই। যখন আমরা স্বর্গীয় অনন্তকালীন বিষয়গুলির তুলনায় এই পার্থিব জিনিসগুলিকে প্রাধান্য দিই, তখন আমরা শিশুর মতই আচরণ করি।

আমাদেরকে ঈশ্বর খুব স্পষ্টভাবে বাইবেলে বলেছেন যে এই জগৎ এবং এর মধ্যে সব কিছু শেষ হবে।

এই পৃথিবীর অস্থায়ী বিষয়গুলির জন্য জীবন যাপন করার অর্থ হল এমন একটি ব্যাঙ্কে সম্পদ সঞ্চয় করা যা খুব শীঘ্রই বিপর্যস্ত হতে চলেছে।

একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এমন একটি ব্যাঙ্কে অর্থ সঞ্চয় করবে যা স্থায়ী এবং সুরক্ষিত। একইভাবে যারা প্রকৃতই জ্ঞানী তারা অনন্তকালীন মূল্যবান বিষয়গুলির জন্য জীবন যাপন করবে, এমন কিছু বিষয় যা আমাদের চরিত্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত যেমন বিশুদ্ধতা, ভালবাসা, ধার্মিকতা, ক্ষমা, নম্রতা ইত্যাদি, এই পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ায় সময় কেবল মাত্র এই বিষয়গুলিকেই আমরা সঙ্গে নিয়ে যেতে পারব।

বাইবেল আমাদের বলে যে প্রতিটি মানুষ যারা তাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত না হয়েই মারা যাচ্ছে তাদের শেষ পরিণতি খুবই ভয়ানক হতে চলেছে।

"আর মানুষের জন্য একবার মৃত্যু এবং তারপর বিচার নিরূপিত আছে" (ইব্রীয় ৯ অধ্যায়, ২৭ পদ)।

একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার জীবন পরিবর্তনের আর কোন সুযোগ থাকতে পারে না। ঈশ্বরও এমন ব্যক্তির পরিবর্তন করতে পারেন না, কারণ ঈশ্বর কোন ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে পরিবর্তন করেন না। এটা শুধুমাত্র যখন আমরা এই পৃথিবীতে পরিবর্তন হতে ইচ্ছুক হই তখনই ঈশ্বর আমাদের পরিবর্তন করতে পারেন।

ভবিষ্যতে একটি আসন্ন দিনে, প্রতিটি মানুষ যারা কখনও এই পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন, মৃত্যু থেকে উত্থাপিত হবেন ঈশ্বরকে তাদের সমগ্র জীবনের হিসাব দেওয়ার জন্য। বাইবেল বলে যে দুটি পুনরুত্থান হবে- অর্থাৎ ধূলিমিশ্রিত মৃতদেহগুলি পুনরায় দেহ ধারণ করে পুনরুত্থিত হবে ঈশ্বরের অলৌকিক ক্ষমতা দ্বারা।

প্রথম পুনরুত্থান হবে তাদের জন্য যারা ধার্মিক, যারা তাদের পরিত্রাতা হিসাবে খ্রীষ্টকে গ্রহণ করেছিল এবং যারা তাদের পাপের ক্ষমা পেয়ে এই পৃথিবীতেই ঈশ্বরের সন্তান হয়েছিল।

দ্বিতীয় পুনরুত্থান হবে তাদের জন্য যারা ঈশ্বরের ক্ষমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল যা তিনি প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে তাদের দিতে চেয়েছিলেন এবং ক্ষমা প্রাপ্ত না হয়েই মারা গেছে। একজন ব্যক্তি যদি তার পাপের অনুশোচনা না করে এবং খ্রীষ্টের দ্বারা পাপের ক্ষমা না পেয়ে মারা যায়, তবে সে একদিন ঈশ্বরের বিচার সিংহাসনের সামনে বিচারিত হবে, যেখানে তার সমস্ত জীবন পর্যালোচনা করা হবে। তারপর এটি সমগ্র মহাবিশ্বের কাছে প্রমাণিত হবে যে সে তার পাপের জন্য অনন্তকালীন দণ্ড প্রাপ্য।

শয়তান যে মহাবিশ্বে সমস্ত মন্দ বিষয় শুরু করেছিল এবং মানুষকে পাপের পথে পরিচালিত করেছে সেই সময়ে সেও অনন্ত শাস্তি পাবে।

তবে যারা নিজেদেরকে নত করে এবং তাদের পাপ সম্পর্কে সচেতন হয়ে তা স্বীকার করে ও পাপ ত্যাগ করে, এবং ক্রুশের উপরে যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর মাধ্যমে ঈশ্বর দত্ত ক্ষমা গ্রহণ করে, তারা ঈশ্বরের উপস্থিতিতে প্রবেশ করবে এবং চিরদিনের জন্য তাঁর সাথে বাস করবে।

স্বর্গ একটি বিশুদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, এবং আনন্দময় জায়গা, যেখানে স্বর্গদূতেরা এবং সেই সকল মানুষেরা যারা পাপের মুক্তি পেয়েছে তারা সকলে ঈশ্বরের প্রশংসা ও উপাসনা করবে এবং অনন্তকালের জন্য বিভিন্ন ভাবে তাঁর সেবা করবে।

এটি এমনই একটি আনন্দদায়ক স্থান হবে যেখানে আমরা আমাদের প্রিয়জনদের সাথে পুনর্মিলিত হতে পারব যারা আমাদের পূর্বে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, যদি তারা যীশু খ্রীষ্টের উপরে বিশ্বাস দ্বারা পরিত্রাণ লাভ করে ঈশ্বরের সন্তান রূপে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

ঈশ্বরের প্রকৃত সন্তান সেই মহিমান্বিত দিনটির প্রত্যাশা করে যখন তিনি চিরকাল ঈশ্বরের সাথে থাকবেন।

এখন যেহেতু আপনি প্রকৃত সত্য জানেন, আপনার প্রতিক্রিয়া কি হতে চলেছে? আপনি কি প্রভু যীশুর কাছে সেই প্রার্থনা করেছেন যেন তিনি আপনার পাপ ক্ষমা করে আপনাকে ঈশ্বরের সন্তান করে তোলেন? এখনই সেই প্রার্থনা করার সময় যখন ঈশ্বর আপনার হৃদয়ে কথা বলছেন। আমরা কেউ বলতে পারি না যে আমরা কখন মারা যাব এবং এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব। এই দিনগুলির কোন এক দিন পৃথিবীতে আমাদের শেষ দিন হবে। সেই দিন আসার আগে, নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার পাপসমূহের ক্ষমা হয়েছে এবং আপনি ঈশ্বরের সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত।