WFTW Body: 

রোমীয় ৮ অধ্যায় আত্মার অন্তর্গত জীবন সম্পর্কে কথা বলে। যখন আমরা পবিত্র আত্মার অধীনে এই জীবনে প্রবেশ করি, তখন আমাদের পিতা আমাদের জীবনের সমস্ত পরিস্থিতিতে কাজ করতে শুরু করেন যাতে আমাদের অনন্তকালীন মঙ্গলার্থে সকলই একসঙ্গে কার্য্য করে। এমনকি যদি অন্যরা আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, ঈশ্বর সেটিকে আমাদের ভালোর জন্য কার্য্য করেন এবং আমরা জানি যে, ঈশ্বর সব কিছুকে তাদের পক্ষে একসঙ্গে মঙ্গলার্থে কার্য্য করেন যারা ঈশ্বরকে প্রেম করেন, যাদেরকে তাঁর সঙ্কল্প অনুসারে আহ্বান করা হয়েছে তাদের জন্য (রোমীয় ৮:২৮)। যাদেরকে তিনি পূর্বেই জেনেছিলেন, যাদেরকে তিনি তাঁর পুত্রের প্রতিমূর্তির অনুরূপ হওয়ার জন্য পূর্বনির্ধারিত করেছিলেন, যাতে তিনি (প্রভু যীশু) অনেক ভাই-বোনের মধ্যে প্রথমজাত (সর্বাগ্রজ) হোন (রোমীয় ৮:২৯)। এটি সত্যিই একটি বিস্ময়কর সুসমাচার! রোমীয় ৮:২৮ নতুন নিয়মের মধ্যে অতি বিস্ময়কর প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে একটি এবং এটি প্রত্যেকটি পরিস্থিতিকে আচ্ছাদন করে যেগুলির আমরা কখনো না কখনো মুখোমুখি হতে পারি - একেবারে এবং সম্পূর্ণভাবে। তাই প্রভুকে বলুন, "প্রভু, পৃথিবীতে তোমার ইচ্ছা অনুযায়ী কার্য্য করা ছাড়া, এবং যেভাবে তুমি নিজে এই পৃথিবীতে ছিলে সেভাবে থাকা ছাড়া আর আমার কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। আমি অর্থ, বা সম্মান, বা খ্যাতি বা আরামের পিছনে ছুটতে চাই না। আমি নিজের জন্য পৃথিবীতে একটি জিনিসও চাই না। আমি শুধু প্রতিদিন তোমাকে খুশি করতে চাই। এবং আমি প্রতিনিয়ত এই বিষয়ে নিজেকে বিচার করব।" তাহলে আপনার পক্ষে সবকিছুই মঙ্গলার্থে একসঙ্গে কার্য্য করবে। এবং সেই "মঙ্গল" পরের পদে উল্লেখ করা হয়েছে - রোমীয় ৮:২৯ - আপনি অধিকরূপে স্বয়ং যীশুর মতো হয়ে উঠবেন। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আপনার জন্য এর চেয়ে বড় কোন মঙ্গল করতে পারেন না।

ইফিষীয় ১:৪, ৫ পদে আমরা পড়ি, "ঈশ্বর প্রেমে আমাদেরকে পূর্বে মনোনীত করিয়াছেন।" "পূর্বে মনোনীত" আরেকটি শব্দ যা নিয়ে অতিশয় ভুল বোঝাবুঝি হয়। ঈশ্বর কি জন্য আমাদেরকে পূর্বে মনোনীত করেছেন? এটা কি স্বর্গে বা নরকে যাওয়ার জন্য? না। তিনি কাউকে স্বর্গে বা নরকে যাওয়ার জন্য পূর্বে মনোনীত করেননি। এটি এখানে বলে, "তিনি নিজ ইচ্ছার হিতসঙ্কল্প অনুসারে আমাদিগকে যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আপনার জন্য দত্তক পুত্রতার নিমিত্ত পূর্ব্ব হইতে নিরূপণ করিয়াছেন।" তিনি আমাদের খ্রীষ্টে পরিপক্ক পুত্র হওয়ার জন্য পূর্বে মনোনীত করেছিলেন, শিশু-খ্রীষ্টান হওয়ার জন্য নয়। আপনি একজন দায়িত্বশীল সন্তান হবেন যিনি আপনার স্বর্গীয় পিতার কার্য্যের বিষয়ে আগ্রহী। তাই নিজেকে এমন একজন সন্তানের মত পরিচালনা করুন যার পিতার কার্য্য সম্পর্কে দায়িত্ববোধ আছে।

কলসীয় ১:২৮ পদে পৌল বলেন, "খ্রীষ্টকেই আমরা ঘোষণা করিতেছি, সমস্ত জ্ঞানে প্রত্যেক মনুষ্যকে সচেতন করিতেছি ও প্রত্যেক মনুষ্যকে শিক্ষা দিতেছি, যেন প্রত্যেক মনুষ্যকে খ্রীষ্টে সিদ্ধ করিয়া উপস্থিত করি।" এটাই ভাববাণী এবং শিক্ষা উভয়ই - সম্পূর্ণ প্রজ্ঞার সাথে। পৌলের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য ছিল "প্রত্যেক মনুষ্যকে খ্রীষ্টে সিদ্ধ করিয়া উপস্থিত করা।" যদি পৌলের একটি মণ্ডলীতে ১০০ জন ছিল, তাহলে সেই ১০০ জন মানুষ - প্রত্যেক ভাই এবং বোন - খ্রীষ্টে নিখুঁত (সিদ্ধ) হয়ে উঠবে তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি যথাসম্ভব সবকিছু করেছিলেন। তিনি তাদের উপদেশ দিতেন, তাদের তিরস্কার করতেন, এবং তাদেরকে সমস্ত প্রজ্ঞার সাথে শিক্ষা দিতেন, কারণ একদিন তাঁকে ঈশ্বরের সম্মুখে তাদেরকে উপস্থাপন করতে হবে। খুব কম পালক এবং মেষপালক আছেন যাদের এইরকম বোঝা আছে। তারা শুধু প্রচার করেন। এই টুকুই। কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিক পরিপক্বতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পৌলের এক বোঝা ছিল। আপনি মণ্ডলীর একজন প্রাচীন হওয়ার দায়িত্ব হালকাভাবে নিতে পারেন না। যখন আমি ২৫ বছর ধরে বেঙ্গালুরুতে আমাদের মণ্ডলীর একজন প্রাচীন ছিলাম, তখন আমি আমার মণ্ডলীর প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের আধ্যাত্মিক অবস্থা জানতে চাইতাম, যাতে আমি তাদের সংশোধন করতে পারি, তাদের তিরস্কার করতে পারি, তাদের প্রজ্ঞা দিতে পারি, উৎসাহের বাক্য এবং শক্তিশালী বাক্য তাদের বলতে পারি, যাতে আমি তাদেরকে একদিন খ্রীষ্টে নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করতে পারি। আমি কখনোই তাদের কাছে নিজের জন্য কিছু চাইনি। তাদের জন্য, খ্রীষ্টের দেহের জন্য, আমার ব্যক্তিগত জীবনে আমাকে অনেক চূর্ণকরণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। ঈশ্বর অনেক উপায়ে আমার সাথে আচরণ করেছিলেন যাতে খ্রীষ্টের সুগন্ধ আমার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে এবং যাতে অন্যেরা আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়। এটাই প্রকৃত খ্রীষ্টীয় সেবাকার্য্য। কলসীয় ১:২৯ পদে পৌল আরও বলেন, "তদনুসারে প্রাণপণ (চেষ্টা) করিয়া আমি সেই অভিপ্রায়ে পরিশ্রমও করিতেছি।" তিনি কিভাবে চেষ্টা করেছিলেন? "পবিত্র আত্মার মহাশক্তিতে - ঈশ্বরের যে কার্য্যসাধক শক্তি আমাতে সপরাক্রমে নিজ কার্য্য সাধন করিতেছে।" ঈশ্বরকে সর্বদা তাঁর পবিত্র আত্মার দ্বারা প্রথমে আমাদের ভিতরে কার্য্য করতে হয় এবং শুধুমাত্র তখনই তিনি আমাদের মাধ্যমে অন্যদের আশীর্বাদ করার জন্য কার্য্য করতে পারেন। আপনারা যারা মণ্ডলীর সেবাকার্য্য করেন, এই দুটি পদকে আপনার লক্ষ্য বানান, প্রতিটি মানুষকে খ্রীষ্টে নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করা (১:২৮ পদ) এবং পবিত্র আত্মার পূর্ণতায় থাকা যার দ্বারা আপনি সেই লক্ষ্যে পৌঁছান (কলসীয় ১:২৯ পদ)।

ইফিষীয় ৪:১৩ পদে, প্রেরিত পৌল বলেছেন যে আমরা, "সিদ্ধ পুরুষের অবস্থা পর্য্যন্ত, খ্রীষ্টের পূর্ণতার আকারের পরিমাণ পর্য্যন্ত" ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাই। আমাদের লক্ষ্য হতে হবে এই পূর্ণতা পর্যন্ত নিজেদের বৃদ্ধি করা এবং অন্যদের বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করা। আমরা যেন বালকদের মতো না থাকি, "মনুষ্যদের ঠকামিতে, ধূর্ত্ততায়, ভ্রান্তির চাতুরীক্রমে তরঙ্গাহত এবং যে সে শিক্ষাবায়ুতে ইতস্ততঃ পরিচালিত না হই" (ইফিষীয় ৪:১৪)।

ইফিষীয় ৪:১৫ পদে, আমাদের আহ্বান জানানো হয়েছে যাতে, "প্রেমে সত্যনিষ্ঠ হইয়া সর্ব্ববিষয়ে তাঁহার উদ্দেশে বৃদ্ধি পাই।" এখানে সত্য এবং প্রেমের মধ্যে ভারসাম্যটি লক্ষ্য করুন। আমাদের কি সত্য কথা বলা উচিৎ? হ্যাঁ। সর্বদা। কিন্তু আমরা কি আমাদের পছন্দমত যে কোন ভাবে সেই কথা বলার অনুমতি পাই? না। আমাদের প্রেমে সত্য কথা বলতে হবে। যদি আপনি প্রেমে সত্য কথা বলতে না পারেন, তাহলে আপনার অপেক্ষা করা উচিৎ যতক্ষণ না আপনার কাছে মানুষের প্রতি সত্য কথা বলার জন্য যথেষ্ট প্রেম থাকে। প্রেম হলো সেই বোর্ড যেখানে আপনি সত্যের কলম ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি বোর্ড ছাড়া সত্য লেখার চেষ্টা করেন তবে আপনি তা পাতলা বাতাসে লিখবেন। আপনি কি লিখছেন তা কেউ বুঝতে পারবে না। প্রেমে সর্বদা সত্য কথা বলার মাধ্যমে - পুলপিটে এবং ব্যক্তিগত কথোপকথনে - আমরা "সর্ব্ববিষয়ে তাঁহার উদ্দেশে বৃদ্ধি পাই, যিনি মস্তক, তিনি খ্রীষ্ট"।

ইব্রীয় ৬:১ পদে পরিপক্কতার (সিদ্ধতার) দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি উপদেশ রয়েছে। ইব্রীয় ৫ অধ্যায়ে আমাদের দুগ্ধ পান এবং কঠিন খাদ্য খাওয়ার একটি দৃষ্টান্ত রয়েছে। সেখানে আরো দুটি দৃষ্টান্ত রয়েছে। প্রথমটি হলো, প্রাথমিক শিক্ষা এবং উন্নত শিক্ষার উদাহরণ; এবং তারপর একটি প্রাসাদের ভিত্তি এবং তার উপরিকাঠামো গঠনের উদাহরণ। এই সমস্ত শব্দ-চিত্রগুলি পরিপক্ক খ্রীষ্টানদের সাথে শিশু- খ্রীষ্টানদের বৈসাদৃশ্য বোঝানোর জন্য। এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায় প্রলোভনের সময়ে। পরিপক্ক পবিত্র ব্যক্তির প্রলোভনের সময় খ্রীষ্টের মতো প্রতিক্রিয়া থাকে, তখন শিশু- বিশ্বাসীদের জগতের মানুষের মতো প্রতিক্রিয়া থাকে। আরেকটি দৃষ্টান্ত ব্যবহার করি: পরিপক্কতার দিকে অগ্রসর হওয়া বিষয়টিকে একটি পর্বতে আরোহণের মতো ভাবুন (ধরুন ১০,০০০ মিটার উচ্চতা)। যীশু ইতিমধ্যে শীর্ষে পৌঁছেছেন। যখন আমরা নতুন জন্ম লাভ করি তখন আমরা এই পর্বতের পাদদেশ থেকে শুরু করি। আমাদের লক্ষ্য হলো প্রভু যীশুকে অনুসরণ করা এবং চূড়ার দিকে অগ্রসর হওয়া, যতই সময় লাগুক না কেন। তাহলে, আমরা আমাদের ছোট ভাই-বোনদের বলতে পারি, "যেমন আমিও খ্রীষ্টের অনুকারী, তোমরা তেমনি আমার অনুকারী হও" (১ করিন্থীয় ১০:৩৪), এমনকি যদিও আমরা মাত্র ১০০ মিটার আরোহণ করেছি।