WFTW Body: 

আদিপুস্তক ২২ অধ্যায়টি এই বাক্যাংশ দিয়ে শুরু হয়, "এই সকল ঘটনার পরে…" পরীক্ষার সেই সময়ের ঠিক আগের পরিস্থিতির দিকে তাকালে আমরা অব্রাহামকে এক বিজয়ী স্থানে দেখতে পাই। বিধর্মী লোকেরা তাঁর কাছে এসে বলল, "অব্রাহাম, আপনি যে কিছু করেন, সে সকলেতেই ঈশ্বর আপনার সহবর্ত্তী" (আদিপুস্তক ২১:২২)। সারা যে অলৌকিক উপায়ে গর্ভধারণ করেছিলেন নিঃসন্দেহে তারা সেই সম্বন্ধে শুনেছিল এবং তারা নিশ্চিত ছিল যে ঈশ্বর এই পরিবারের সঙ্গে আছেন। ইশ্মাইলকে দূরীকৃত করা হয়েছিল। ইস্‌হাক এখন অব্রাহামের হৃদয়ের প্রিয়তম ছিল। সেই সময়ে অব্রাহাম, ঈশ্বরের প্রতি তাঁর প্রথম প্রেম এবং ভক্তি হারানোর আশঙ্কার মধ্যে ছিলেন। আর তাই ঈশ্বর তাঁকে আবার পরীক্ষা করলেন, এবং বলিদান হিসেবে ইস্‌হাককে উৎসর্গ করতে বললেন। কিন্তু অব্রাহামের শোনার কান ছিল, এবং এমন একটি হৃদয় ছিল যা ঈশ্বরের আদেশ পালন করতে ইচ্ছুক ছিল। তিনি পরের দিন খুব ভোরে উঠলেন এবং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করতে অগ্রসর হলেন (আদিপুস্তক ২২:৩)। পূর্ববর্তী রাতে, ঈশ্বর তাঁর সাথে কথা বলার পরে, অব্রাহাম কি মানসিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন সে বিষয়ে নথিভুক্ত ঘটনাটি আমাদেরকে কিছুই বলে না। আমি নিশ্চিত সেই রাতে তিনি ঘুমাননি। তিনি নিশ্চয়ই জেগে ছিলেন এবং প্রিয় পুত্রের কাছে গিয়ে বারবার তাকে দেখছিলেন; এবং তাঁর চোখ দিয়ে নিশ্চয় হয়ত অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল যখন তিনি ভাবছিলেন তার প্রতি প্রতি তিনি কী করতে চলেছেন।

অব্রাহামের জন্য তাঁর বৃদ্ধ বয়সের পুত্রকে উৎসর্গ করা কতটা কঠিন ছিল! কিন্তু তিনি যে কোনো মূল্যে ঈশ্বরকে মান্য করতে রাজি ছিলেন। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে, তিনি লাঙ্গলে হাত দিয়েছিলেন যখন ঈশ্বর তাঁকে ঊর প্রদেশে ডাকলেন; এবং তিনি এখন পিছনে ফিরে তাকাবেন না। তাঁর আনুগত্যের কোন সীমা ছিল না এবং তাঁর ঈশ্বরের প্রতি আত্মত্যাগ করার ইচ্ছার কোন শেষ ছিল না। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে তিনি ঈশ্বরের বন্ধু হয়েছিলেন।

অব্রাহামের হৃদয়ে বিশ্বাস ছিল যখন তিনি ইস্‌হাককে বলি দিতে গিয়েছিলেন, ঈশ্বর কোনো না কোনোভাবে তাঁর পুত্রকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করবেন। ইব্রীয় ১১:১৯ পদ আমাদেরকে সেটাই বলে। ঈশ্বর ইতিমধ্যেই ইস্‌হাকের জন্মের মাধ্যমে অব্রাহাম এবং সারাকে তাদের শরীরের মধ্যে পুনরুত্থান-শক্তির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। নিশ্চিতভাবেই এইরকম একজন ঈশ্বরের কাছে ইস্‌হাককে জীবিত করতে কোন সমস্যা হবে না, যাকে বেদীতে বলি দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছিল। আর তাই মোরিয়া পর্বতের পাদদেশে তাদের রেখে যাওয়ার সময় অব্রাহাম তাঁর দাসদের রেখে যাওয়ার সময় তাদের বলেছিলেন, "তোমরা এই স্থানে গর্দ্দভের সহিত থাক; আমি ও যুবক, আমরা ঐ স্থানে গিয়া প্রণিপাত করি, পরে তোমাদের কাছে ফিরিয়া আসিব" (আদিপুস্তক ২২:৫)। এটা ছিল একটা বিশ্বাসের কথা। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে ইস্‌হাক তাঁর সাথে ফিরে আসবে।

আরও লক্ষ্য করুন যে তিনি তাঁর দাসদের বলেছিলেন, "আমরা ঈশ্বরের আরাধনা করতে যাচ্ছি।" তিনি অভিযোগ করছেন না যে ঈশ্বর তাঁর কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চাইছেন, বা তিনি ঈশ্বরের জন্য যে বিস্ময়কর (অমূল্য) বলিদান করতে চলেছেন তা নিয়ে গর্ব করছেন না। না। অব্রাহাম সেই ব্যক্তিদের শ্রেণীভুক্ত ছিলেন না যারা ঈশ্বরের জন্য তাদের বলিদান সম্পর্কে সূক্ষ্মভাবে অন্যদের জানান। অব্রাহাম বলেছিলেন যে তিনি তাঁর ঈশ্বরের আরাধনা করতে যাচ্ছেন। আর সেখানে আমরা আরাধনার প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে কিছু বুঝতে পারি। মনে রাখবেন কিভাবে প্রভু যীশু একবার বলেছিলেন, "অব্রাহাম আমার দিন দেখিবার আশায় উল্লাসিত হইয়াছিলেন, এবং তিনি তাহা দেখিলেন ও আনন্দ করিলেন" (যোহন ৮:৫৬)। নিশ্চয়ই সেখানে মোরিয়া পর্বতে অব্রাহাম খ্রীষ্টের দিন দেখেছিলেন। ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শনে, বৃদ্ধ পিতৃপুরুষ (অব্রাহাম) তাঁর নিজ কর্মের মধ্যে দেখেছিলেন, সেই দিনের একটি চিত্র (যদিও এটি অস্পষ্ট ছিল) যেদিন ঈশ্বর পিতা স্বয়ং তাঁর একমাত্র পুত্রকে কালভেরির পাহাড়ে নিয়ে যাবেন এবং মানবজাতির পাপের জন্য তাঁকে উৎসর্গ করবেন। এবং সেই দিন মোরিয়া পর্বতে, অব্রাহাম কিছু জেনেছিলেন যে একটি পথভ্রষ্ট জগতকে বাঁচাতে ঈশ্বরের হৃদয়কে কী মূল্য দিতে হবে। সেই প্রভাতে তিনি ঈশ্বরের হৃদয়ের সাথে এক অন্তরঙ্গ সহভাগিতায় এসেছিলেন। হ্যাঁ, তিনি ঈশ্বরের আরাধনা করেছিলেন - কেবল সুন্দর শব্দ এবং স্তোত্র দিয়ে নয়, বরং ব্যয়বহুল আনুগত্য এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে।

ঈশ্বরের গভীর ও ঘনিষ্ঠ জ্ঞান শুধুমাত্র এই ধরনের আনুগত্যের মাধ্যমেই আসতে পারে। আমরা আমাদের মনে অনেক সঠিক ধর্মতাত্ত্বিক তথ্য জমা করতে পারি; কিন্তু প্রকৃত আধ্যাত্মিক জ্ঞান তখনই আসতে পারে যখন আমরা ঈশ্বরের কাছে সবকিছু সমর্পণ করি। অন্য আর কোন উপায় নেই। অব্রাহামকে এখানে পরীক্ষা করা হয়েছিল যে তিনি দাতাকে (ঈশ্বরকে) নাকি তাঁর উপহারগুলোকে বেশি প্রেম করবেন। ইস্‌হাক নিঃসন্দেহে ঈশ্বরের দান ছিল, কিন্তু অব্রাহাম তাঁর পুত্রের প্রতি অত্যধিক স্নেহ থাকার বিপদে পড়েছিলেন। ইস্‌হাক একটি প্রতিমা হয়ে উঠেছিল, যা অব্রাহামের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে বাধা (মেঘ তুল্য) হয়ে উঠেছিল। আর তাই ঈশ্বর অব্রাহামকে এমন একটি দুঃখজনক ঘটনা থেকে বাঁচাতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন।