WFTW Body: 

২ বংশাবলি ৩:১ পদে আমরা পড়ি, "শলোমন যিরূশালেমে মোরিয়া পর্ব্বতে সদাপ্রভুর গৃহ নির্ম্মান করিতে আরম্ভ করিলেন"। মোরিয়া পর্বত ছিল সেই জায়গা যেখানে অব্রাহাম তার পুত্র ইস্‌হাককে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করেছিলেন (আদিপুস্তক ২২)। সেখানে সেই পর্বতে অব্রাহাম ঈশ্বরের পথকে বলিদান পথ হিসেবে বুঝেছিলেন এবং তাঁর কাছে সমর্পণ করেছিলেন। ঈশ্বর সেই স্থানটিকে পবিত্র করেছিলেন এবং নির্ধারিত করেছিলেন যে ১০০০ বছর পরে সেই স্থানেই তাঁর গৃহ নির্ম্মান করা হবে। এবং সেখানেই ঈশ্বর আজও তার গৃহ (মণ্ডলী) নির্ম্মান করেন - অর্থাৎ এমন লোককে তিনি খোঁজেন যাদের মধ্যে অব্রাহামের আত্মা এবং বিশ্বাস আছে। মোরিয়া পর্বতে, প্রতীকীস্বরূপ হিসাবে এদনে আদম এবং হবা ঈশ্বরকে যা বলেছিলেন তার ঠিক বিপরীত কথা অব্রাহাম বলেছিলেন।

এদনে, আদম এবং হবার নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার কার্যকলাপ দ্বারা ঈশ্বরকে আসলে বলা হয়েছিল যে সৃষ্ট বস্তুরগুলি থেকে পাওয়া আনন্দগুলি তাদের কাছে সৃষ্টিকর্তার চেয়ে বেশি মূল্যবান ছিল। আর কোটি কোটি মানুষ আজও ঈশ্বরকে একই কথা বলছে। "তাহারা সৃষ্ট বস্তুর পূজা ও আরাধনা করিয়াছে, সেই সৃষ্টিকর্ত্তার নয়" (রোমীয় ১:২৫)। কিন্তু মোরিয়া পর্বতে, অব্রাহাম ঠিক এর বিপরীত কথা বলেছিলেন: তার ঈশ্বর ও সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে তার সবচেয়ে প্রিয় সম্পত্তির (ইসহাক) চেয়ে তার কাছে বেশি মূল্যবান ছিলেন। এবং তিনি এটা প্রমাণ করার জন্য ইস্‌হাককে বলিদান করতেও রাজি ছিলেন। যারা বলিদান করার এই নীতির অনুসারে জীবন-যাপন করেন, ঈশ্বর তাদের সম্মান করবেন। যারা এই সত্যকে আঁকড়ে ধরে নিয়েছেন তাদের দ্বারা আজও ঈশ্বরের প্রকৃত গৃহ নির্ম্মান হয়ে চলেছে।

কালভেরীর পর্বতে, এটি কেবল সত্য নয় যে যীশু জগতের পাপের জন্য মারা গেছেন। সেখানে, যীশু বলিদানের নীতি প্রদর্শন করেছেন, যার দ্বারা ঈশ্বর তাঁর সমস্ত কার্য করেন। কেউ এটি ছাড়া অন্য কোনভাবে প্রভুর সেবা করতে পারেন না। যারা এই জগতে আরামদায়ক জীবনের সন্ধান করেন এবং একই সাথে ঈশ্বরের মণ্ডলীও তৈরি করতে চান, তারা কেবল নিজেদেরকেই প্রতারিত করছেন। যারা উভয় জগতের (জাগতিক ও আত্মিক) শ্রেষ্ঠত্ব খোঁজেন তারা শয়তানের দ্বারা পুরোপুরি প্রতারিত হয়েছেন। অনেকেই বলিদান ছাড়াই ঈশ্বরের সেবা করার চেষ্টা করেছেন। তাদের শ্রম কিন্তু ব্যর্থতার পর ব্যর্থতার মুকুট পরেছে!!

"খ্রীষ্ট মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন" (ইফিষীয় ৫:২৫)। মণ্ডলী নির্মাণের জন্য আমাদের একইভাবে মণ্ডলীকে প্রেম করতে হবে। কেবলমাত্র আমাদের অর্থ বা সময় দেওয়া যথেষ্ট নয়। আমাদের নিজেদের দিতে হবে - অর্থাৎ আমাদের স্ব-জীবন।

যখন ঈশ্বর মানুষের প্রতি তার প্রেমের বর্ণনা দিতে চেয়েছিলেন, তখন তিনি তাঁর প্রেমকে শুধুমাত্র একটি পার্থিব উদাহরণের সাথে তুলনা করেছিলেন - তা হলো সদ্যজাত সন্তানের প্রতি এক মায়ের প্রেম (যিশাইয় ৪৯:১৫ দেখুন)। আপনি যদি একজন মাকে নিরীক্ষণ করেন, দেখবেন যে তার সন্তানের প্রতি তার প্রেম ত্যাগের আত্মায় পরিপূর্ণ। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এবং সাড়া রাত ধরে, একজন মা তার সন্তানের প্রতি কেবল বলিদান ও বলিদান আর বলিদান স্বীকার করেন। এবং তার বিনিময়ে তিনি কিছুই পান না। তিনি বছরের পর বছর সন্তানের জন্য আনন্দের সাথে সকল কষ্ট এবং অসুবিধা সহ্য করেন, বিনিময়ে কিছুই আশা না করে। একজন মা তার চারপাশের অন্যরা তার সন্তানের জন্য কিছু বলিদান স্বীকার করছেন কি না তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামান না। তিনি আনন্দের সাথে নিজের সবকিছু ত্যাগ স্বীকার করেন। একইভাবে, যিনি মণ্ডলীকে তার নিজের সন্তান হিসাবে দেখেছেন, তিনি বিব্রত হবেন না যে তার চারপাশের অন্যরা মণ্ডলীর জন্য কিছু ত্যাগ স্বীকার করছেন কি না।

ঈশ্বরও আমাদের এভাবেই প্রেম করেন। আর এই স্বভাবই তিনি আমাদের দিতে চান। কিন্তু পৃথিবীর কোথাও এমন সহভাগিতে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব যার সম্পর্কে সৎভাবে বলা যেতে পারে যে তারা সবাই একে অপরকে এইভাবে প্রেম করেন। অধিকাংশ বিশ্বাসী কেবল তাদেরকেই প্রেম করতে জানেন, যারা তাদের সাথে একমত এবং তাদের দলে যোগ দেয়। তাদের প্রেম লৌকিক এবং তা মায়েদের বলিদান-স্বরূপ প্রেমের থেকে বহু দূরে!!