WFTW Body: 

"তাহাদের মধ্যে এমন একজন পুরুষকে অন্বেষণ করিলাম, যে তাহার প্রাচীর সারাইবে ও দেশের নিমিত্ত আমার সম্মুখে তাহার ফাটলে দাঁড়াইবে, কিন্তু পাইলাম না" (যিহিষ্কেল ২২:৩০)। বিশ্বের ইতিহাসে, ইস্রায়েলের এবং মণ্ডলীর ইতিহাসে আমরা বেশ কয়েকটি উদাহরণ দেখতে পাই কিভাবে ঈশ্বর প্রায়শই তাঁর উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য বিশেষ পরিস্থিতিতে কেবলমাত্র একজন ব্যক্তির উপর নির্ভর করেছেন। তবে ঈশ্বরের সাথে এক ব্যক্তি সর্বদা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে থাকে।

নোহ: নোহের সময়ে যখন গোটা বিশ্ব ঈশ্বরের বিরুদ্ধে দুষ্টতা ও বিরুদ্ধাচরণে পরিপূর্ণ ছিল, যদিও তখন পৃথিবীতে আটজন ঈশ্বর-ভয়শীল ব্যক্তি ছিলেন, তবুও ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলি পরিপূর্ণতার জন্য কেবলমাত্র একজনের বিশ্বস্ততার উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করেছিল, তিনি হলেন নোহ। নোহ ছিলেন সেই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সেই সময়ে অনুগ্রহ পেয়েছিলেন (আদিপুস্তক ৬:৮)। যদি সেই একমাত্র ব্যক্তি ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বস্ত হতেন, তবে সমগ্র মানবজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত, এবং আমাদের মধ্যে কেউই আজ বেঁচে থাকত না!! আমরা অবশ্যই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে পারি যে নোহ বিশ্বস্ত ছিলেন।

মোশি: ইস্রায়েলীয়েরা যখন মিশরে ছিল, ঈশ্বর তাদেরকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পারেননি যতক্ষণ না তিনি তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার উপযুক্ত একজন ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়েছিলেন। এবং এমন ব্যক্তি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ঈশ্বর অপেক্ষা করতে প্রস্তুত ছিলেন। একবার যখন মোশি ইস্রায়েলীয়দের থেকে মাত্র ৪০ দিনের জন্য দূরে ছিলেন, তখন তাদের সমস্ত ২০ লক্ষ লোক পথভ্রষ্ট হয়েছিল (যাত্রাপুস্তক ৩২)। কেবল একবার ঈশ্বরের লোক সেই স্থান থেকে দূরে থাকায় মাত্র কয়েক দিন সময় লেগেছিল যখন পুরো জাতি সত্য ঈশ্বরকে ত্যাগ করে ভুল পথে গিয়ে প্রতিমার উপাসনা করেছিল।

যিহোশূয়: আমরা পাঠ করি ইস্রায়েলীয়েরা, "যিহোশূয়ের সমস্ত জীবনকালে, এবং যে প্রাচীনবর্গ যিহোশূয়ের মরণের পর জীবিত ছিলেন, ও ইস্রায়েলের জন্য সদাপ্রভুর কৃত সমস্ত মহাকার্য্য দেখিয়াছিলেন, তাঁহাদেরও সমস্ত জীবনকালে লোকেরা সদাপ্রভুর সেবা করিল" (বিচারকর্তৃগণ ২:৭)। যিহোশূয়ের প্রভাব ইস্রায়েলীয়দের উপর এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তারা তাঁর জীবদ্দশায় এবং তাঁর সহ-প্রাচীনদের জীবদ্দশায় প্রতিমাগুলির উপাসনা করার সাহস করেনি। কিন্তু যিহোশূয়ের মৃত্যুর পড়ে ইস্রায়েল খুব খারাপভাবে পশ্চাত্পদ হয়েছিল। এটাই একজন ঈশ্বরের ব্যক্তির জীবনের প্রভাব।

এলিয়: বাইবেল এলিয়ের বিষয়ে বলে যে, "একজন ধার্ম্মিকের বিনতি (প্রার্থনা) কার্য্যসাধনে মহাশক্তিযুক্ত" (যাকোব ৫:১৬, ১৭)। একজন ব্যক্তি একাকী সমস্ত জাতিকে ঈশ্বরের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন, দুষ্টতার বাহিনীকে অপদস্থ করেছিলেন এবং বাল দেবতার সমস্ত ভাববাদীদের হত্যা করেছিলেন।

ইলীশায়: এলিয়ের সময়ে পঞ্চাশজন "ভাববাদিগনের পুত্র" (বাইবেল-স্কুল ছাত্র) ছিলেন, যারা সকলেই একদিন ইস্রায়েলের ভাববাদী হওয়ার প্রত্যাশায় ছিলেন। কিন্তু ঈশ্বরের আত্মা তাদের সকলকে অতিক্রম করে ইলীশায়ের উপরে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন, যিনি কোনও "ভাববাদীর পুত্র" ছিলেন না (২ রাজাবলি ২:৭, ১৫)। ইলীশায় ইস্রায়েলে কেবল একজন দাস হিসাবে পরিচিত ছিলেন - "যিনি এলিয়ের হস্তের উপরে জল ঢালিতেন" (২ রাজাবলি ৩:১১)।

দানিয়েল: ঈশ্বর যখন যিহূদীদের বাবিল রাজ্য থেকে যিরূশালেমে আনতে চেয়েছিলেন তখন তাঁর একজন লোকের দরকার হয়েছিল। তিনি দানিয়েলকে পেয়েছিলেন। দানিয়েল তাঁর যুবক বয়স থেকেই বিশ্বস্ত ছিলেন এবং অতি সাফল্যের সাথে প্রতিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। বাবিল রাজ্যে এক কিশোর হিসাবে তিনি প্রভুর পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। "তিনি মনে স্থির করিলেন, আপনাকে অশুচি করিবেন না"(দানিয়েল ১:৮) - সমস্ত যুবকদের মনে রাখার জন্য একটি ভাল পদ। অন্য সমস্ত যুবক যিহূদীরা রাজার ভয়ে রাজার টেবিলে পরিবেশন করা খাবার সহজেই খেয়েছিল (ঈশ্বর লেবীয়পুস্তকে যে খাবার নিষিদ্ধ করেছিলেন), দানিয়েল একাই তা খেতে অস্বীকার করেছিলেন। সেই সময়ে সেই টেবিলে আরও তিনজন যুবক ছিলেন, তাঁরা দানিয়েলের দৃঢ় অবস্থান দেখে তাঁর সাথে যোগ দিয়েছিলেন। দানিয়েল এবং সেই তিনজন ব্যক্তি তখন বাবিলে ঈশ্বরের পক্ষে শক্তিশালী প্রভাব হয়ে উঠল।

পৌল: পৌল অন্যান্য সমস্ত মণ্ডলীর চেয়ে ইফিষে বেশি সময় কাটিয়েছিলেন। ৩ বছর ধরে প্রতিদিন,, তিনি সেখানে ঈশ্বরের সম্পূর্ণ উপদেশ প্রচার করেছিলেন (প্রেরিত ২০:৩১)। এটি সমস্ত মণ্ডলীর মধ্যে সর্বাধিক সৌভাগ্যশালী মণ্ডলী ছিল। তাদের কাছে পৌলের পত্রের শিক্ষার উচ্চমান ইঙ্গিত দেয় যে এটি আধ্যাত্মিক মনোবিশিষ্ট মণ্ডলীও ছিল। সুতরাং, যদি এমন একটি মণ্ডলী হতো যেখানে বিশ্বাসীদের নতুন নিয়মের জীবনে প্রচুর সংখ্যক প্রবেশ করা উচিৎ ছিল, তবে তা ইফিষের এই মণ্ডলীটি হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু হায়, এটি সেই রকম ছিল না। এমনকি সেখানকার প্রাচীনরাও এমন জীবনে প্রবেশ করেননি। পৌল যখন তাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন সেই প্রাচীনদের বলেছিলেন, "আমি জানি, আমি গেলে পর দুরন্ত কেন্দুয়ারা তোমাদের মধ্যে প্রবেশ করিবে, পালের প্রতি মমতা করিবে না; এবং তোমাদের মধ্য হইতেও কোন কোন লোক উঠিয়া শিষ্যদিগকে আপনাদের পশ্চাৎ টানিয়া লইবার জন্য বিপরীত কথা কহিবে" (প্রেরিত ২০:২৯, ৩০)। যতক্ষণ পৌল ব্যক্তিগতভাবে ইফিষের মণ্ডলীতে উপস্থিত ছিলেন, ততক্ষণ কোনও কেন্দুয়া (নেকড়ে) প্রবেশ করতে পারেনি, কারণ পৌল ছিলেন পালের এক সতর্ক রাখাল এবং প্রভুর গৃহের এক কঠোর দারোয়ান।

প্রত্যেক প্রজন্মের মধ্যে ঈশ্বর তাঁর নামের জন্য এক পবিত্র সাক্ষ্য চান। এমনকি আমাদের প্রজন্মেও তিনি নিজেকে সাক্ষী বিহীন রাখবেন না। আপনি কি এই প্রজন্মে ঈশ্বরের কাছে পুরোপুরি উপলব্ধ থাকার জন্য মূল্য দিবেন?