"এই যুগের অনুরূপ হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ" (রোমীয় ১২:২)।
"তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার দাসের রবে কর্ণপাত করে? যে অন্ধকারে চলে যাহার দীপ্তি নাই, সে সদাপ্রভুর নামে বিশ্বাস করুক, আপন ঈশ্বরে নির্ভর দিউক" (যিশাইয় ৫০:১০, লিভিং বাইবেল)।
পুরাতন নিয়মের অধীনে, ঈশ্বর প্রায়শই স্বর্গ থেকে একটি কণ্ঠস্বর দ্বারা তাঁর সেবকদের কাছে তাঁর ইচ্ছা জানাতেন। কিন্তু নতুন নিয়মে, ঈশ্বর আমাদের অন্তরের মধ্যে পবিত্র আত্মার অভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য দিয়ে আমাদের পথ দেখাতে চান৷ এটি হল বিশ্বাসের পথ এবং এটি দৃশ্য-প্রমাণ দ্বারা চালিত পুরাতন নিয়মের পথের চেয়ে অধিক উচ্চ।
আর তাই, কোনো বিষয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা জানার সময়, আমরা মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হতে পারি। ঈশ্বর আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য এটির অনুমতি দেন। তিনি চান যে আমরা তাঁর কাছাকাছি যেতে পারি এবং এইভাবে তাঁকে আরও ভালভাবে জানতে পারি। এই ধরনের অনিশ্চয়তার সময়গুলিকেও ঈশ্বর আমাদের উদ্দেশ্যগুলিকে চালনা করার জন্য ব্যবহার করেন।
তাই যখন আমরা বিভ্রান্তির সম্মুখীন হই তখন আমাদের বিস্মিত বা নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়। এমনকি প্রেরিত পৌলও প্রায়শই বিভ্রান্ত হয়ে পড়তেন, কিন্তু তিনি কখনও হতাশ হননি বা হাল ছেড়ে দেননি (২ করিন্থীয় ৪:৮ পদে দেখুন)। ঈশ্বর কখনও কখনও আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঠিক আগে তাঁর ইচ্ছা দেখাতে পারেন - এবং এর আগে আমাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করাতে পারেন।
যে কোনো ক্ষেত্রে, তিনি আমাদের প্রতিটি পর্যায়ে শুধুমাত্র পরবর্তী পদক্ষেপটিই দেখাবেন। তিনি আমাদের ধাপে ধাপে চালিত করেন কারণ তিনি চান যে আমরা দিন প্রতিদিন তাঁর উপর নির্ভর করি, এবং বিশ্বাসের দ্বারা চালিত হই, দৃশ্য-প্রমাণ দ্বারা নয়। যখন তিনি আমাদের একবারে একটি মাত্র পদক্ষেপ দেখান, তখন আমরা তাঁর উপর নির্ভর করতে বাধ্য হই। তাই, আমাদের জীবনের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা খুঁজে পেতে, আমাদের যা করতে হবে তা হল পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যা ঈশ্বর আমাদের দেখান। আমরা যখন তা করি, আমরা দেখতে পাব যে ঈশ্বরের পরিকল্পনা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে।
প্রভুর প্রতিশ্রুতি হলো, "তুমি যেমন ধাপে ধাপে যাবে, তেমনি আমি তোমার সামনে পথ খুলে দেবো" (হিতোপদেশ ৪:১২ - ভাষান্তর)।
যখন আমরা কোনো বিষয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্পর্কে অনিশ্চিত, তখন নিজেদেরকে বারোটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা আমাদের জন্য ভালো। আমরা যখন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সৎভাবে দিই, তখন ঈশ্বরের ইচ্ছা কী তা আমাদের কাছে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
● এটি কি যীশু এবং প্রেরিতদের কোন শিক্ষার, বা আমি যতদূর জানি নতুন নিয়মে পবিত্র আত্মার বিপরীত?
● এটি কি এমন কিছু যা আমি শুদ্ধ বিবেক দ্বারা করতে পারি?
● এটি কি এমন কিছু যা আমি ঈশ্বরের মহিমার জন্য করতে পারি?
● এটি কি এমন কিছু যা আমি প্রভু যীশুর সাথে সহভাগীতায় করতে পারি?
● আমি কি ঈশ্বরের কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে পারি যখন আমি এটি করি?
● আমার এটি করা কি কোনোভাবেই আমার আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রকে ভোঁতা করে দেবে?
● আমার বিবেচনা অনুযায়ী এটি কি আধ্যাত্মিকভাবে লাভজনক এবং উন্নতিকর হবে?
● প্রভু যীশু পৃথিবীতে ফিরে আসার মুহুর্তে যদি আমি এই কাজটি করতে থাকি তবে আমি কি খুশি হবো?
● জ্ঞানী এবং আরও পরিপক্ক ভাইয়েরা এই বিষয়ে কী ভাবেন?
● আমার এই কাজটি কি ঈশ্বরের নামের অপমান বয়ে আনবে এবং আমার সাক্ষ্য নষ্ট করবে, যদি অন্যেরা এটি জানতে পারে?
● আমার এই কাজটি কি অন্যের হোঁচট খাবার কারণ হবে যদি এই সম্পর্কে অন্যেরা জানে?
● আমি কি আমার আত্মায় এটি করতে স্বাধীন বোধ করি?
অনেক পরিস্থিতিতে, আমাদের এক ধাপ এগিয়ে যেতে হবে, যদিও আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে পুরোপুরি নিশ্চিত নই। এটিও বিশ্বাস দ্বারা চালিত হওয়ার শৃঙ্খলার একটি অংশ - কারণ নিশ্চয়তা কখনও কখনও "দৃশ্য-প্রমাণ দ্বারা চালিত" -হওয়ার সমতুল্য হতে পারে। ঈশ্বর কখনও কখনও আমাদেরকে তাঁর ইচ্ছার সুস্পষ্ট আশ্বাস দেন। কিন্তু অন্য সময়ে, তিনি আশা করেন যে আমরা তাঁর ইচ্ছার স্পষ্ট জ্ঞান ছাড়াই এগিয়ে যাব। একবার যখন আমরা প্রার্থনায় প্রভুর জন্য অপেক্ষা করেছি এবং আমাদের সর্বোত্তম জ্ঞান অনুসারে পবিত্র আত্মার মনকে সুনিশ্চিত করেছি, সেক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা না করে আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত।
বাইবেল বলে, "আমাদের পরিকল্পনা করা উচিত - আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য ঈশ্বরের উপর নির্ভর করা উচিত" (হিতোপদেশ ১৬:৯ -লিভিং বাইবেল)। পরবর্তীতে এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলির দিকে ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাব যে, আমাদের দৃষ্টি ক্ষীণ হওয়া সত্ত্বেও, ঈশ্বর আমাদের বিপথগামী হতে দেননি। অন্য কথায়, যদিও শুরুতে অনেক অনিশ্চয়তা থাকতে পারে, শেষ পর্যন্ত অনেক নিশ্চিয়তা এবং আনন্দ থাকবে।
আর যদি, আন্তরিকতার সহিত অথচ অনিশ্চয়তার মধ্যে একটি পদক্ষেপ নেওয়ার সময়, আমরা ঈশ্বরের নিখুঁত ইচ্ছার পথটি হারিয়ে ফেলি, তবে আমরা ঈশ্বরের উপর ভরসা করতে পারি যে তিনি আমাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবেন। যিশাইয় ৩০:২১ (লিভিং বাইবেল) পদের প্রতিশ্রুতি হল, "আপনি যদি ঈশ্বরের পথ ছেড়ে বিপথে চলে যান, আপনি আপনার কর্ণপশ্চাতে একটি কণ্ঠস্বর শুনতে পাবেন, 'না, এটিই পথ; এই পথেই চল'"।
আমরা যখন তাঁর ইচ্ছাকে হারিয়ে ফেলি তখন ঈশ্বর আমাদের গতিপথ পরিবর্তন করার জন্য পরিস্থিতিকে আদেশ দেবেন। কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য দৃশ্যমান দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় আমাদের চিরস্থায়ী নিষ্ক্রিয় থাকা উচিত নয়। একটি জাহাজ যখন স্থির থাকে তার চেয়ে যখন গতিতে থাকে তখন দ্রুত ঘুরতে পারে। তাই আমরাও পারি।
প্রেরিত ১৬:৬-১০ পদে, আমরা পড়ি যে পৌল এবং সীল এশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন - প্রভুর কাছ থেকে কোনও স্পষ্ট নির্দেশনার ফলে নয় কিন্তু তবুও তাঁর ইচ্ছা পালন করার উদ্দেশ্যে। তারা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল - সম্ভবত ঈশ্বরের নির্দেশিত পরিস্থিতিতে। এরপর, যখন তারা বিথুনিয়ায় যেতে চেষ্টা করেন, তাদের পথ আবার বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেহেতু তারা সক্রিয়ভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছার অনুসন্ধান করেছিল, এবং নিষ্ক্রিয়ভাবে পথনির্দেশের অপেক্ষা করেনি, তিনি অবশেষে তাদের তাঁর পছন্দের জায়গায় নিয়ে গেলেন - মাকিদনিয়ায়।
দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট বিবরণে, নির্দেশিকা/পথনির্দেশন আবশ্যকভাবে প্রতিনিয়ত কোন সচেতন অনুসন্ধানের প্রশ্ন নয়। এটি হল আত্মার দ্বারা চলার বিষয়। প্রভুর সাথে সঠিক সম্পর্ক সঠিক কর্মের দিকে পরিচালিত করবে। এই ধরনের ছোট ছোট বিবরণে, ঈশ্বরের নির্দেশনা এমন কিছু নয় যে আমাদের সর্বদা নিখুঁতভাবে সচেতন হওয়া উচিত। এই বিষয়ে আমরা অসচেতনও হতে পারি। এটি শুধুমাত্র প্রভুর সাথে আমাদের মৌলিক সম্পর্ক যা হল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ নির্দেশিকা একটি আধ্যাত্মিক বিষয় এবং এটি কোন যান্ত্রিক কৌশল নয়।