WFTW Body: 

"এক জন অপেক্ষা দুই জন ভালো, কেননা তাহাদের পরিশ্রমে সুফল হয়। কারণ তাহারা পড়িলে এক জন আপন সঙ্গীকে উঠাইতে পারে; কিন্তু ধি্ক তাহাকে, যে একাকী, কেননা সে পড়িলে তাহাকে তুলিতে পারে, এমন দোসর কেহই নাই……আর যে একাকী, তাহাকে যদ্যপি কেহ পরাস্ত করে, তথাপি দুই জন তাহার প্রতিরোধ করিবে, এবং ত্রিগুণ সূত্র শীঘ্র ছিঁড়ে না" (উপদেশক ৪:৯-১২)। আপনি ঐশপের উপকথার গল্পটি মনে করতে পারেন, যেখানে একজন বৃদ্ধ কৃষক তার তিন সন্তানকে একতা সম্পর্কে একটি বিষয়গত শিক্ষা দিয়েছিলেন, যারা নিজেদের মধ্যে সর্বদা ঝগড়া করতো। তিনি বেশ কয়েকটি দুর্বল লাঠি নিয়ে তাদেরকে দেখালেন যে কিভাবে লাঠিগুলো খুব সহজেই পৃথকভাবে ভেঙে ফেলা যায়, কিন্তু যখন একটি বান্ডেলে (গোছা) একসঙ্গে বাঁধা হয় তখন সেটা ভাঙা প্রায় অসম্ভব। এমনকি এই জগতের শিশুরাও বুঝতে পারে যে ঐক্য এবং সহভাগিতার মধ্যে শক্তি আছে। বাইবেল বলে, "পঙ্গপালদিগের রাজা নাই, তথাপি তাহারা দল বাঁধিয়া যাত্রা করে" (হিতোপদেশ ৩০:২৭)। সেখানে তাদের নিরাপত্তা এবং তাদের শক্তি নিহিত থাকে। যীশু খ্রীষ্টের মণ্ডলীতে, আমাদের এই শিক্ষাটি পুনরায় শেখা দরকার।

নতুন নিয়ম যে ঐক্যের কথা বলে, তা হলো খ্রীষ্টের নেতৃত্বে খ্রীষ্টের দেহের সদস্যদের একে অপরের সাথে একতা, এটি কোন সাংগঠনিক নয়, এটি একটি জীবন্ত ঐক্য। এ ক্ষেত্রে তারা অন্তর্ভুক্ত নয় যারা খ্রীষ্টের দেহের বাইরে, এমনকি যদিও তারা 'খ্রীষ্টান' বলে আখ্যাত। জীবিত এবং মৃতের মধ্যে কোন মিলন হতে পারে না। যারা নতুন জন্মের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টে জীবিত হয়েছেন তারা নিজেদের আধ্যাত্মিক ঐক্য কেবল তাদের সাথেই খুঁজে পেতে পারেন যারা একইভাবে ঈশ্বর দ্বারা নতুন জন্ম লাভ করেছেন। খ্রীষ্টীয় ঐক্য পবিত্র আত্মার দ্বারা তৈরি হয়, কেবলমাত্র তিনিই আমাদের খ্রীষ্টের দেহের সদস্য করেন। বাইবেল আমাদেরকে "শান্তির যোগবন্ধনে আত্মার ঐক্য রক্ষা করার জন্য পরামর্শ দেয়" (ইফিষীয় ৪:৩)। মানুষের দ্বারা গঠিত কোন ঐক্য মূল্যহীন।

শয়তান একটি ধূর্ত শত্রু এবং সে বুঝতে পারে যে একটি ঐক্যবদ্ধ খ্রীষ্টীয় সহভাগিতাকে সে পরাজিত করতে পারবে না যা খ্রীষ্ট এবং তাঁর বাক্যের অধীনে থাকে। তাই, তার যুদ্ধযাত্রার কৌশলের সূচনাটি হয় সহভাগিতার সদস্যদের মধ্যে বিভেদ, সন্দেহ এবং ভুল বোঝাবুঝি বপনের মাধ্যমে, যাতে সে তাদের পৃথকভাবে প্রত্যেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করতে পারে। যীশু বলেছিলেন যে নরকের শক্তি তাঁর মণ্ডলীকে পরাজিত করতে পারবে না (মথি ১৬:১৮)। এটাই মণ্ডলী, খ্রীষ্টের দেহ, যাকে শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। একজন বিশ্বাসী অন্য বিশ্বাসীদের থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে নিজেকে পরাজিত রূপে দেখতে পারে। পৃথিবীতে খ্রীষ্টের জীবনকালে শয়তান ক্রমাগত খ্রীষ্টকে আক্রমণ করেছিল, কিন্তু জয়লাভ করতে অক্ষম ছিল। অবশেষে ক্রুশে, খ্রীষ্টের দ্বারা মানুষের উপর শয়তানের ক্ষমতাকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল (ইব্রীয় ২:১৪, কলসীয় ২:১৫)। আজ, শয়তান পুনরুত্থিত খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসীকে আক্রমণ করতে পারে না। তাই তার আক্রমণ খ্রীষ্টের দেহের প্রতি, অর্থাৎ মণ্ডলীর উপরে পরিচালিত হয়। শয়তানের উপর বিজয় কেবল তখনই সম্ভব যখন আমরা আমাদের প্রভুর নেতৃত্বে এক দেহ হিসাবে ঐক্যবদ্ধভাবে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াই। খ্রীষ্টীয়দের সহভাগিতায়, এমনকি যদি একজন সদস্য তার কাজ সম্পাদন না করে, তবে শরীরের শক্তি সেই পরিমাণে দুর্বল হয়ে পড়ে। শয়তান এটা জানে, তাই ক্রমাগত একটি গোষ্ঠীর প্রত্যেক সদস্যদের অথবা গোষ্ঠীকে (বা মণ্ডলীকে) উপগোষ্ঠীগুলিতে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে। যেভাবেই হোক, সে তার লক্ষ্যে সফল হয়। এজন্যই আমাদেরকে শয়তানের কৌশলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সতর্ক থাকতে হবে, পাছে সে আমাদের এবং খ্রীষ্টের দেহের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ককে দুর্বল করে দেয়।

ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে প্রত্যেক বিশ্বাসীদের ব্যাপারে প্রভু যীশু অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু মথি ১৮:১৮, ১৯ পদে, খ্রীষ্টের দেহের একটি অংশের সাথে একত্রে প্রার্থনা করার ক্ষেত্রে আমাদের এক প্রতিশ্রুতি রয়েছে: প্রভু যীশু বলেছেন "তোমরা পৃথিবীতে যাহা কিছু বদ্ধ করিবে, তাহা স্বর্গে বদ্ধ হইবে; এবং পৃথিবীতে যাহা কিছু মুক্ত করিবে, তাহা স্বর্গে মুক্ত হইবে। আবার আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, পৃথিবীতে তোমাদের দুই জন যাহা কিছু যাচ্ঞা করিবে, সেই বিষয়ে যদি একচিত্ত হয়, তবে আমার স্বর্গস্থ পিতা কর্ত্তৃক তাহাদের জন্য তাহা করা যাইবে।" ১৯ পদে "একচিত্ত" ("সম্মত") অনুবাদ করা শব্দটি হল গ্রিক শব্দ "স্যামফোনিও" ("Sumphoneo"), যেখান থেকে আমাদের ইংরেজি শব্দ "সিম্ফনি" (ঐকতান) এসেছে। প্রভু যীশু এই পদগুলিতে তাঁর দুই সন্তানের মধ্যে একটি ঐক্যের কথা উল্লেখ করেছিলেন যা একটি সঙ্গীতের ঐকতানের মতো হবে। এর অর্থ অন্যের প্রার্থনার শেষে "আমেন" বলার চেয়ে বেশি। ঐকতান মানে যারা একসাথে প্রার্থনা করছে তাদের মধ্যে আত্মার গভীর সমন্বয়। যখন খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসীদের একটি ছোট গোষ্ঠীর সহভাগিতা একটি সু-পরিচালিত সঙ্গীতদলের (অর্কেস্ট্রা) দ্বারা উত্পন্ন ঐকতানের মতো হয়, তখন (যীশু বলেছিলেন) তাদের প্রার্থনায় এমন ক্ষমতা থাকবে যে তারা যা চাইবে (যাচ্ঞা করবে) তা দেওয়া হবে। এই ধরনের একটি খ্রীষ্টীয় দলের শয়তানের শক্তিকে বাঁধতে এবং শয়তানের দ্বারা বন্দীদের মুক্ত করার কর্তৃত্ব থাকবে। এই প্রকারের সহভাগিতা কেন এই ধরনের কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারে তার কারণ যীশু ব্যাখ্যা করেছিলেন: "কেননা", তিনি বলেছিলেন, "যেখানে দুই কি তিন জন আমার নামে একত্র হয়, সেখানে আমি তাহাদের মাঝে আছি" (পদ ২০)। খ্রীষ্ট যিনি মস্তক তাঁর সমস্ত কর্তৃত্বের সাথে এই ধরনের সহভাগিতার মাঝে উপস্থিত থাকেন, এবং তাই নরকের শক্তিগুলি এর বিরুদ্ধে কখনও দাঁড়াতে পারে না। "প্রেরিতদের কার্য্য-বিবরণ"-এ বর্ণিত মণ্ডলী এই কর্তৃত্বের বাস্তবটি জানত, কারণ তাঁদের সহভাগিতায় এই ঐক্য ছিল। "তাঁহারা সকলে (১১ জন প্রেরিত) একচিত্তে প্রার্থনায় নিবিষ্ট রহিলেন……" "আর যাহারা বিশ্বাস করিল, তাহারা সকলে একসঙ্গে সমস্তই সাধারণে রাখিত……আর তাহারা প্রতিদিন একচিত্তে ধর্ম্মাধামে থাকিয়া……" "আর সকলে (প্রেরিত এবং অন্যান্য বিশ্বাসীরা) একচিত্তে ঈশ্বরের উদ্দেশে উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল……" (প্রেরিত ১:১৪; ২:৪৪, ৪৬; ৪:২৪)। যেহেতু তারা খ্রীষ্টের কর্তৃত্বের অধীনে এক দেহে সমন্বিত হয়েছিলেন, তাই তারা প্রার্থনায় প্রভুর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারতেন। তারা উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না, তাদের কোন সামাজিক প্রভাব ছিল না এবং কোন আর্থিক সাহায্য ছিল না, তবুও তারা খ্রীষ্টের জন্য তৎকালীন বিশ্বকে উল্টে দিয়েছিলেন। যখন পিতর কারাবদ্ধ হয়েছিলেন, তখন হেরোদের সমস্ত বাহিনী ঈশ্বরের সম্মুখে জানু পাতিত সেই প্রাথমিক মণ্ডলীর শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেনি (প্রেরিত ১২:৫-১১)। সেই মণ্ডলীর দ্বারা শয়তানের রাজ্যের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল যখন এটি (মণ্ডলী) একটি দেহ হিসাবে এগিয়ে এসেছিল, সমস্ত রোমীয় সাম্রাজ্যের মানুষের জীবনে খ্রীষ্টের কর্তৃত্ব এবং বিজয়ের নিবন্ধন হয়েছিল (এর একটি উদাহরণের জন্য প্রেরিত ১৯:১১-২০ দেখুন)।

আজ শয়তান একটি বিচ্ছিন্ন মণ্ডলীর মনোযোগ আকৃষ্ট করার কৌশল, বিভিন্ন যান্ত্রিক সরঞ্জাম, সম্মেলন, ধর্মতাত্ত্বিক জ্ঞান, বাক্পটুতা এবং প্রশিক্ষিত গায়কের দ্বারা তাকে (শয়তানকে) তার দুর্গ থেকে বিতাড়িত করার প্রচেষ্টাকে উপহাস করছে। এগুলোর কোনটাই শয়তানের বিরুদ্ধে কোন কাজে আসে না। মণ্ডলীকে পুনরায় খ্রীষ্টের নেতৃত্বে এক দেহে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বাস্তবতাটি জানতে হবে। খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসীদের একটি সহভাগিতা যথাযথভাবে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, একে অপরের প্রতি প্রেমে বেড়ে ওঠা এবং খ্রীষ্ট ও তাঁর বাক্যের আনুগত্যে বসবাস করা হলো পৃথিবীতে শয়তানের রাজ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। শয়তান এর থেকে বেশি কোন কিছুতে ভয় পায় না। আসুন, এটি আমাদের প্রার্থনা হোক, প্রতিদিন খ্রীষ্টের এক দেহে গৌরবময় সত্যের আলোতে বাঁচতে প্রভু আমাদের সাহায্য করবেন। বিশ্বজুড়ে যত বেশি খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসীরা এই সত্যকে বুঝে সেই অনুসারে জীবনযাপন করতে শুরু করবে, আমরা নিশ্চিতভাবে মণ্ডলীকে দেখতে পাবো, যদিও সংখ্যায় কম, তার প্রাচীন গৌরব পুনরুদ্ধার করতে, অন্ধকারের শক্তিকে পরাস্ত করার জন্য ঈশ্বরের হাতের একটি যন্ত্র হিসাবে এবং একটি অভাবী বিশ্বের জন্য আশীর্বাদের একটি প্রণালী রূপে।