WFTW Body: 

নতুন-নিয়ম আমাদের শেখায় যে একজন মানুষের উদ্ধার পেতে হলে, তাকে প্রথমে অনুতপ্ত হওয়ার দরকার। অনুতপ্ত হওয়া মানে আমাদের পুরানো জীবনযাত্রার পথ থেকে ফিরে আসা। এর অর্থ হল কিছু খারাপ অভ্যাস যেমন মদ্যপান এবং জুয়া খেলা ইত্যাদি ছেড়ে দেওয়া ছাড়াও আমাদের পুরানো জীবনযাত্রায় একটি আত্মকেন্দ্রিক জীবন আছে; আর অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ হচ্ছে "প্রভু, আমি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি এবং আমি এখনই আপনার দিকে ফিরে যেতে চাই এবং আপনাতে কেন্দ্রীভূত হতে চাই"।

প্রভু যীশু পাপ থেকে আমাদের বাঁচাতে এসেছিলেন। অন্য কথায়, তিনি আমাদের আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে বাঁচাতে এসেছিলেন। নতুন-নিয়মে 'পাপ' শব্দের পরিবর্তে "আত্মকেন্দ্রিকতা" শব্দটি রাখুন এবং আপনি দেখতে পাবেন যে অনেকগুলি রচনাংশে এর অর্থ প্রকাশ পায়। "কেননা পাপ তোমাদের উপর কর্তৃত্ব করিবে না; অর্থাৎ "আত্মকেন্দ্রিকতা তোমাদের উপরে কর্তৃত্ব করিবে না" (রোমীয় ৬:১৪)। এটাই তাঁর লোকেদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা। আর আমরা যদি আমাদের জীবন যাচাই করি তবে আমরা দেখতে পাব যে আমাদের অতি পবিত্র আকাঙ্ক্ষা গুলিতেও "আত্মকেন্দ্রিকতা" রয়েছে। আমাদেরকে পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ করার জন্যে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার মধ্যেও একটি আত্মকেন্দ্রিক ইচ্ছা থাকতে পারে, যদি আমরা এই শক্তিটি একটি মহান প্রচারক, বা একজন মহান নিরাময়কারী হওয়ার জন্য চাই, তবে এটিও পৃথিবীতে মহান হওয়ার জন্য একটি আত্মকেন্দ্রিক ইচ্ছা। আপনি কি দেখছেন যে পাপ কিভাবে সর্বাধিক পবিত্র স্থানে প্রবেশ করে?

এই কারনেই প্রভু যীশু আমাদের প্রথমে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, এমন নয় যে আমরা আত্মার দ্বারা পরিপূর্ণ হই, বরং ঈশ্বরের নাম পবিত্র বলে মান্য হোক। সত্যিকারের একজন আধ্যাত্মিক মানুষ আন্তরিকতার সাথে এই প্রার্থনা করতে পারেন। অবশ্যই যে কেউ এই প্রার্থনা পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। এমনকি কোন তোতা পাখিও তা করতে পারে। তবে সত্যিকারে এটি বোঝার জন্য, আমাদের অন্তরের গভীরতা থেকে ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ নিষ্ঠার প্রয়োজন, যেখানে তিনি আমাদের জীবনের প্রথমস্থনে, যেখানে আমরা তাঁকে কেন্দ্রীভূত করে থাকি, এবং যেখানে তাঁর চেয়ে আমরা তাঁর আশীর্বাদ বেশি অনুসন্ধান করি না। তিনি যদি আমাদেরকে তাঁর উপহারগুলি দেন, তবে তা ভালই; এবং যদি তিনি আমাদের কোন উপহার নাও দেন, তাও আমাদের পক্ষে ভালই, কারণ আমরা ঈশ্বরের জন্য আগ্রহী, তাঁর উপহারগুলির জন্যে নয়। ঈশ্বর কেন ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত হৃদয় দিয়ে তাঁকে ভালবাসতে এবং প্রতিবেশীকে তাদের মতো ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন? কেবলমাত্র তাদের আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে তাদেরকে উদ্ধার করার জন্যই।

আনন্দ (JOY) শব্দের উপর একটি ছন্দোবন্ধ রয়েছে যা বলে যে, "J - (JESHU) যীশুকে প্রথমে রাখুন, O (OTHERS) - অন্যদের তারপরে এবং Y - (YOU) নিজেকে শেষ রাখুন। তাহলে আপনি আনন্দ পেতে পারেন।" ঈশ্বর সর্বদা আনন্দে পরিপূর্ণ। স্বর্গে কোন দুঃখ বা উদ্বেগ নেই, কারণ সমস্ত কিছু ঈশ্বরকে কেন্দ্রিভুত করে আছে। স্বর্গদূতেরা ঈশ্বর কেন্দ্রিক বলে তাঁরাও সর্বদা আনন্দ করছেন। আমাদের আনন্দ, শান্তি এবং আরও অনেক আধ্যাত্মিক গুণাবলীর অভাবের কারণ হল আমরা আমাদের সঠিক কেন্দ্রটিকে খুঁজে পাই না, আর আমরা আমাদের নিজেদের জন্যে ঈশ্বরকে ব্যবহার করার ইচ্ছা। এমনকি প্রার্থনাও এরকম কিছু হয়ে থাকে, "প্রভু, দয়া করে আমার ব্যবসায়ের উন্নতি হোক......আমার চাকরিতে পদোন্নতি পেতে আমাকে সহায়তা করুন.....দয়া করে আমাকে আরও ভাল বাড়ি দিন....." ইত্যাদি, আমরা চাই ঈশ্বর যেন আমাদের সেবক হয়ে উঠুক, এবং আমাদের পার্থিব জীবনকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে সহায়তা করুক - যেমনটা আলাদিন এবং তার প্রদীপের গল্পের জীনের (প্রেতের) মতো।

এটি এমন এক ঈশ্বরের প্রকার - বহু বিশ্বাসী তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন এই পৃথিবীতে তাদের নিজস্ব অগ্রগতি এবং লাভের মাধ্যম হিসাবে। তবে নতুন-নিয়মের ঈশ্বর তিনি নন, যিনি আপনাকে অলিম্পিকের ১০০ মিটার রেস জিততে বা ব্যবসায়িক চুক্তিতে আপনার প্রতিযোগীকে পরাস্ত করতে সহায়তা করবেন। আমাদের প্রার্থনাগুলি প্রকাশ করে যে আমরা কতটা আত্মকেন্দ্রিক।

বাইবেল বলছে "সদাপ্রভুতে আমোদ কর" এবং "তিনি তোমার মনোবাঞ্ছা সকল পূর্ণ করিবেন" (গীতসংহিতা ৩৭:৪)। সদাপ্রভুতে আমাদের আনন্দ করার অর্থ হচ্ছে ঈশ্বরকে আমাদের জীবনের কেন্দ্র করা। আর তাই ঈশ্বরকেন্দ্রিক ব্যক্তির অন্তরের সমস্ত আকাঙ্ক্ষাতে কেবল এটাই থাকতে পারে। "কারণ সদাপ্রভু ঈশ্বর সূর্য ও ঢাল; সদাপ্রভু অনুগ্রহ ও প্রতাপ করেন; যাহারা সিদ্ধতায় চলে, তিনি তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিবেন না। (অর্থাৎ ঈশ্বর যাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করছেন, তারাই মাথা উঁচু করে হাঁটছেন)" (গীতসংহিতা ৮৪:১১)। "ধার্মিকের বিনতি কার্যসাধনে মহাশক্তিযুক্ত"- আর ধার্মিক ব্যক্তি হলেন ঈশ্বরকেন্দ্রিক মানুষ (যাকোব ৫:১৬)। বিপরীতে, স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির আকুল প্রার্থনা, এমনকি সে যদি সারা রাত প্রার্থনা করে, তবুও তার কিছুই লাভ হবে না। এটি আমাদের জীবন যাপনের প্রার্থনা যা আমরা প্রার্থনা করি তার মূল্য দেয়।

এজন্য আমাদের জীবনের প্রথম তিনটি আকাঙ্ক্ষা হওয়া উচিত: "স্বর্গস্থ পিতা, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক, তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক"। আমাদের আরও অনেক অনুরোধ থাকতে পারে যেমন, "আমার পিঠের ব্যথা সারিয়ে তুলুন, আমাকে থাকার জন্য আরও ভাল বাড়ি খুঁজে পেতে সহায়তা করুন, আমার ছেলেকে চাকরী পেতে সহায়তা করুন" ইত্যাদি। এগুলি সব ভাল অনুরোধ। তবে আপনি যদি বলতে পারেন, "পিতা, আপনি যদি এই অনুরোধগুলি মঞ্জুর নাও করেন, তবে আমার প্রাথমিক আকাঙ্ক্ষা হল আপনার নাম মহিমান্বিত হোক" - তাহলে আপনি একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি।