"কেননা আমার ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসি নাই; কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহারই ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য " (যোহন ৬:৩৮)। প্রভু যীশু তাঁর নিজের কথায় এখানে আমাদের বলেছেন যে তিনি পৃথিবীতে কী করতে এসেছিলেন। এবং এই এক বাক্যে আমাদের কাছে বর্ণিত হয়েছে যে প্রভু যীশু কীভাবে পৃথিবীতে তাঁর সমগ্র জীবনের প্রতিটি দিন কাটিয়েছিলেন। নাসরতে প্রভু যীশুর জীবনের ত্রিশ বছরকে লুকানো বছর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এখানে যীশু সেই ৩০ বছরের প্রত্যেকটা দিনে তিনি কী করেছিলেন তা প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর নিজের ইচ্ছাকে অস্বীকার করেছিলেন এবং তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করেছিলেন।
প্রভু যীশু যখন অনন্তকাল থেকে স্বর্গে পিতার সাথে ছিলেন, তখন কখনই তাঁর নিজের ইচ্ছাকে অস্বীকার করতে হয়নি, কারণ তাঁর ইচ্ছা এবং তাঁর পিতার ইচ্ছা একই ছিল। কিন্তু যখন তিনি আমাদের মাংসময় দেহে পৃথিবীতে এসেছিলেন তখন সেই মাংসের একটি স্ব-ইচ্ছা ছিল যা প্রতিটি বিষয়ে পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছিল। যীশু কাছে তাঁর পিতার ইচ্ছা পালনের একমাত্র উপায় ছিল তাঁর নিজের ইচ্ছাকে প্রতি মুহুর্তে অস্বীকার করা। এটাই ছিল তাঁর ক্রুশ যা প্রভু যীশু তাঁর সমগ্র পার্থিব জীবন জুড়ে বহন করেছিলেন - তাঁর নিজের ইচ্ছাকে ক্রুশবিদ্ধ করেছিলেন - এবং তিনি এখন তা আমাদেরকে প্রতিদিন বহন করতে বলছেন, যদি আমরা তাঁকে অনুসরণ করতে চাই। এটি তাঁর নিজ-ইচ্ছার ধারাবাহিক অস্বীকার ছিল যা প্রভু যীশুকে আধ্যাত্মিক মানুষ করে তুলেছিল। এবং এটি আমাদের স্ব-ইচ্ছার অস্বীকার যা আমাদেরকেও আধ্যাত্মিক করে তুলবে।
আধ্যাত্মিকতা এমন কিছু নয় যা ঈশ্বরের সাথে একবারের সাক্ষাতে আসে। এটি নিজেকে অস্বীকার করার উপায় বেছে নেওয়ার এবং দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ এবং বছরের পর বছর ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ফলাফল। ধর্মান্তরের দশ বছর পরে দুই ভাইয়ের (উভয়েই একই দিনে খ্রীষ্টে রূপান্তরিত হয়েছিল) আধ্যাত্মিক অবস্থা বিবেচনা করুন। একজন এখন আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতার সাথে একজন পরিপক্ক ভাই, যাকে ঈশ্বর মণ্ডলীর অনেক দায়িত্ব দিতে পারেন। অন্যজন এখনও একটি শিশু, বিচক্ষণতাহীন এবং যাকে নিয়মিত অন্যদের দ্বারা খাওয়ানোর এবং উত্সাহিত করা প্রয়োজন। এখানে এমন কী বিষয় রয়েছে যা দুজনের মধ্যে এই ধরনের পার্থক্য তৈরি করেছে? উত্তরটি হলো: তাদের খ্রীষ্টীয় জীবনের দশ বছরের প্রতিটি দিনে তাদের নেওয়া সামান্য সিদ্ধান্তগুলি। যদি তারা একইভাবে চালিয়ে যায়, পরবর্তী ১০ বছরে তাদের মধ্যে পার্থক্য আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। এবং অনন্তকালে, তাদের গৌরবের মাত্রার ভিন্নতা ২০০০ ওয়াটের বাল্ব এবং ৫ ওয়াটের বাল্ব দ্বারা নির্গত আলোর মতোই আলাদা হবে!! "তেজ সম্বন্ধে একটি নক্ষত্র হইতে অন্য নক্ষত্র ভিন্ন" (১ করিন্থীয় ১৫:৪১)।
এমন কোন এক পরিস্থিতি বিবেচনা করুন যেখানে আপনি কোন বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন এবং উপস্থিত না থাকা কোন এক নির্দিষ্ট ভাইয়ের (যাকে আপনি পছন্দ করেন না) সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলার জন্য প্ররোচিত হচ্ছেন। আপনি কি করেন? আপনি কি সেই প্রলোভনে পড়বেন এবং নিন্দা করে যাবেন, নাকি নিজেকে অস্বীকার করবেন এবং মুখ বন্ধ রাখবেন? কারোর বিরুদ্ধে খারাপ কথা বলার কারণে ঈশ্বরের দ্বারা কেউ কখনও কুষ্ঠরোগ বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হন না। না। এবং তাই অনেকে ভাবেন যে এই ধরনের পাপ তাদের জীবনকে ধ্বংস করবে না। আফসোসের এটাই যে, কেবল অনন্তকালেই অনেক ভাই-বোন বুঝতে পারবেন যে তারা প্রতিবার কীভাবে নিজেকে সন্তুষ্ট করেছে এবং নিজেকে একটু একটু করে ধ্বংস করেছে। তারপরে তারা পৃথিবীতে তাদের জীবনকে যেভাবে নষ্ট করেছিল সেই জন্য অনুশোচনা করবে।
প্রভু যীশুও নাসরতে ৩০ বছর একইরকম পরিস্থিতিতে প্রলুব্ধ হয়েছিলেন। এটি সেই লুকানো বছরগুলি সম্পর্কে লেখা রয়েছে যে "তিনি কখনই নিজেকে সন্তুষ্ট করেননি" (রোমীয় ১৫:৩)। তিনি সর্বদা নিজেকে অস্বীকার করেছিলেন। এভাবে তিনি সর্বদা পিতাকে সন্তুষ্ট করেছিলেন। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে প্রসন্ন করা যেতে পারে - উদাহরণস্বরূপ, খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে। এমন পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করুন যেখানে আপনি ক্ষুধার্ত না হয়েও খাওয়ার জন্য কিছু সুস্বাদু খাবার কিনতে কিছু অর্থ ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে অবশ্যই কোন পাপ বা ভুল নেই। তবে এটি একটি নির্দিষ্ট জীবনযাত্রার কথা প্রকাশ করে। আপনার কাছে অর্থ আছে বলে আপনি যা চান তাই কিনতে পারেন, তা আপনার দরকারী হোক বা না হোক। আপনি তাই করেন যা আপনাকে খুশি করে। আপনার যদি কিছু কেনার ইচ্ছে হয়, তা কিনছেন। আপনার যদি কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে হয়, আপনি সেখানে যাচ্ছেন। আপনার যদি মনে হয় দীর্ঘ সময় ঘুমাবেন, আপনি দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমাচ্ছেন। আপনার নিয়মিত সভাগুলিতে যাওয়া এবং প্রতিদিন আপনার বাইবেল পড়া সত্ত্বেও এরকম জীবনযাপনের শেষ পরিণতি কী? আপনি হয়তো আপনার পরিত্রাণকে হারাবেন না, তবে ঈশ্বর আপনাকে তাঁর প্রতি জীবনযাপন করার জন্য যে জীবন দিয়েছেন তা আপনি অবশ্যই নষ্ট করবেন।
অন্য ভাই অবশ্য আলাদাভাবে কাজ করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার দেহকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য। তিনি যখন ক্ষুধার্ত নন, তখন অযথা কিছু খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন না। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে নিজের জন্য কোনও অপ্রয়োজনীয় জিনিস কখনই কিনবেন না। তিনি ঈশ্বরের সাথে সময় কাটাতে প্রতিদিন ১৫ মিনিট আগে উঠার সিদ্ধান্ত নেন। যখন কেউ তার সাথে ক্রুদ্ধভাবে কথা বলে, তখন তিনি মৃদুভাবে করে জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সর্বদা প্রেম এবং সদাচরণে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সংবাদপত্রগুলিতে এমন কিছু খবরের বিষয়ে না পড়ার সিদ্ধান্ত নেন যা তার অভিলাষকে উদ্দীপ্ত করে। প্রতিটি পরিস্থিতিতে, তিনি নিজেকে নম্র করার এবং নিজেকে ন্যায়সঙ্গত বলে প্রমাণ না করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন এমন কিছু বন্ধুত্ব ছেড়ে দেওয়ার, যা তাকে জগতের দিকে প্রভাবিত করে। ক্রমাগত নিজের ইচ্ছাকে অস্বীকার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে (যা তাকে সন্তুষ্ট করেছিল), তিনি একমাত্র ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার ইচ্ছাতে দৃঢ় হয়ে উঠেন। সেই অপ্রয়োজনীয় জিনিসটি না কিনে, বা ১৫ মিনিট আগে বিছানা থেকে নামার মাধ্যমে, বা তার মানবীয় মর্যাদাবোধ ছেড়ে দিয়ে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার মাধ্যমে তিনি কী হারিয়েছেন? কিছুই না। তবে তিনি কী লাভ করেছেন তা ভেবে দেখুন! এই প্রকারের একজন মানুষ, যিনি সামান্য কিছু বিষয়ে অবিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বস্ত থাকেন তিনি কয়েক বছরের ব্যবধানে ঈশ্বরের একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি হয়ে উঠবেন - বাইবেল-জ্ঞানের কারণে নয়, যা তিনি অর্জন করেছেন, তবে নিজেকে সন্তুষ্ট না করে, ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে জীবনের ছোট সিদ্ধান্তগুলি গ্রহন করার ক্ষেত্রে তার বিশ্বস্ততার কারণে। তাহলে দুর্বল ইচ্ছাপোষণকারী হবেন না। সর্বদা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের ইচ্ছাকে অনুশীলন করুন।
পরিপক্ক খ্রীষ্টবিশ্বাসী হলেন তারা যারা "অনুশীলনের কারণে (বহু বছর ধরে তাদের ইচ্ছাগুলিকে সঠিক পথে অনুশীলন করার কারণে), তাদের ইন্দ্রিয়গুলি ভাল এবং মন্দ নির্ধারণের জন্য প্রশিক্ষণ পেয়েছে" (ইব্রিয় ৫:১৪)। আপনি ঈশ্বরের একজন প্রকৃত পুরুষ / মহিলা হয়ে ওঠার সংকল্প করুন।