WFTW Body: 

প্রভু যীশু টাট্কা (নতুন) দ্রাক্ষারসকে নতুন কুপাতেই (দ্রাক্ষারসের পাত্র) রাখার বিষয়ে বলেছিলেন (লূক ৫:৩৭)। নতুন দ্রাক্ষারস হলো প্রভু যীশুর জীবন এবং নতুন কুপাটি হলো মণ্ডলী যা যীশু নির্মান করেছেন। কান্না নগরে যে বিবাহ হয়েছিল, সেখানে যীশু উপস্থিত ছিলেন, পুরাতন দ্রাক্ষারস ফুরিয়ে গিয়েছিল (যোহন ২:১-৩)। পুরাতন দ্রাক্ষারস বহু বছর ধরে মানুষের প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছিল - তবে এটি প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারেনি। এটি ব্যবস্থার অধীনে থাকা জীবনের একটি দৃষ্টান্ত - যা পুরাতন নিয়মকে বোঝায়। পুরাতন দ্রাক্ষারস ফুরিয়ে যায়; এবং এটি ফুরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত প্রভুকে অপেক্ষা করতে হয় আমাদেরকে নতুন দ্রাক্ষারস দেওয়ার জন্যে।

আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে, আমাদের বিবাহিত জীবনে বা আমাদের সমাবেশ জীবনে কী দ্রাক্ষারস ফুরিয়েছে? তাহলে এখন সেই সময় এসেছে যে আমরা প্রভুর মুখ অন্বেষণ করি এবং আমাদের প্রয়োজনটিকে সততার সাথে স্বীকার করি। তিনিই কেবল আমাদের নতুন দ্রাক্ষারস দিতে পারেন! কান্না নগরের নতুন দ্রাক্ষারস মানুষের প্রচেষ্টার দ্বারা উত্পাদিত হয়নি। এটি ছিল ঈশ্বরের ঐশ্বরিক কাজ (যোহন ২:৬-১১)। এটা আমাদের জীবনেও হতে পারে। তিনি তাঁর আইন (ব্যবস্থা) আমাদের হৃদয় ও মনের মধ্যে লিখবেন, এবং তাঁর নিখুঁত ইচ্ছাকে পালন করার জন্য আমাদের ইচ্ছাকে তৈরি করবেন (ইব্রীয় ৮:১০, ফিলিপীয় ২:১৩)। তাঁকে প্রেম করতে এবং তাঁর আদেশানুসারে (বিধিপথে) আমাদের চলার জন্য তিনি আমাদের হৃদয়কে ছিন্নত্বক করবেন (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:৬, যিহিষ্কেল ৩৬:২৭)। কান্না নগরে নতুন দ্রাক্ষারস উত্পন্ন করা যেমন তাঁর কাজ ছিল তেমনি এই কাজটিও তাঁরই কাজ হবে। এটাই অনুগ্রহের অর্থ। আমরা প্রভু যীশুর জীবন উত্পন্ন করতে পারব না, এমনকি যদি আমরা আজীবন চেষ্টা করি তবুও নয়। কিন্তু আমরা যদি আমাদের শরীরে "যীশুর মৃত্যু" বহন করি (প্রতি দিনের ক্রুশ বহন করা, আমাদের অহংকার, আমাদের স্ব-ইচ্ছা এবং আমাদের অধিকার এবং খ্যাতির প্রতি মরণশীল হওয়া), তবে ঈশ্বর আমাদের মধ্যে যীশুর জীবন স্বরূপ নতুন দ্রাক্ষারস উত্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (২ করিন্থীয় ৪:১০)।

নতুন দ্রাক্ষারস অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের লড়াই হচ্ছে পাপের বিরুদ্ধে। তবে নতুন কুপাটি অর্জন করার ক্ষেত্রে, আমাদের লড়াই হচ্ছে ধর্মীয় রীতিনীতির বিরুদ্ধে যা ঈশ্বরের বাক্যকে বাতিল করে দিয়েছে। আর অনেক মানুষের পক্ষে পাপমুক্ত হওয়া যতটা না কঠিন হয় তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয় মানুষের রীতিনীতির থেকে মুক্ত হওয়া! তবে বলবান যোদ্ধারাই কেবল ঈশ্বরের রাজত্ব অধিকার করবে (মথি ১১:১২)। ধর্মীয় রীতিনীতিগুলির প্রতি হিংসাত্মক আচরণ ছাড়া সরানো যায় না।

আমরা ভাবতে পারি যে, খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসী হওয়ায় আমরা যিহূদীদের পুরাতন কুপা থেকে মুক্তি পেয়েছি এবং আমাদের কাছে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী হিসাবে নতুন কুপা রয়েছে। কিন্তু আপনি যাকে খ্রীষ্টীয় সমাবেশ বলে থাকেন তার দিকে আপনি যদি মনোযোগ সহকারে দেখেন, তাহলে এটিতে পুরাতন নিয়মের অনেক বৈশিষ্ট্য পেয়ে আপনি অবাক হতে পারেন। কেবল তিনটি উদাহরণ বিবেচনা করুন যদিও অনেক উদাহরণ আছে।

প্রথমত, যিহূদীদের একটি বিশেষ উপজাতি (লেবীয়) যারা ছিল যাজক, তারা সমস্ত ধর্মীয় কাজ করতেন। সমস্ত যিহূদীরা যাজক হতে পারতেন না। তবে নতুন নিয়মের অধীনে, সমস্ত বিশ্বাসীরাই যাজক (১ পিতর ২:৫; প্রকাশিত বাক্য ১:৬)। যদিও এই সত্যটি তাত্ত্বিকভাবে বেশিরভাগ বিশ্বাসীরা ধারণ করে, তবে প্রকৃতপক্ষে এটি খুব কম বিশ্বাসী অনুশীলন করেন। খ্রীষ্টীয়দের প্রায় প্রতিটি গোষ্ঠীরই তাদের 'যাজক' বা 'পালক' বা 'ঈশ্বরের দাস' বা 'পূর্ণ সময়ের কর্মী' রয়েছে যাঁরা হলেন পুরানো লেবীয়দের মতো, ঈশ্বরের লোকদের উপাসনায় নেতৃত্ব দেন। কেবলমাত্র এই 'লেবীয়রা' নতুন বিশ্বাসীদের বাপ্তিস্ম দিতে এবং রুটি ভাঙ্গতে পারেন। এবং এই 'লেবীয়রা' ঈশ্বরের লোকদের দশমাংশ দ্বারা আর্থিক ভাবে সাহায্য প্রাপ্ত হয়। সভাগুলিতে, এই 'লেবীয়রা' প্রদর্শনীতে (জাহির করতে) আধিপত্য বিস্তার করেন, 'দৈহিক'-সেবাকার্য্যর কোন সুযোগ দেন না। এক-বক্তার প্রদর্শনী হলো একটি পুরাতন কুপার অংশ। নতুন নিয়মের অধীনে, প্রতিটি বিশ্বাসী নতুন দ্রাক্ষারস পান করতে পারেন, পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হতে পারেন এবং আত্মার উপহার পেতে পারেন। দুই বা তিনজন ভাববাদী সভাটি শুরু করতে পারেন, একজন বা দুজন পরভাষা বলতে পারেন (প্রত্যেকের ব্যাখ্যা দিয়ে) এবং প্রতিটি বিশ্বাসী সভায় ভাববাণী করতে এবং মণ্ডলী গঠন করার জন্য স্বাধীন। এটাই নতুন কুপা (১ করিন্থীয় ১৪:২৬-৩১)। ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায়ে নতুন দ্রাক্ষারসের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে - প্রেমের জীবন। ১ করিন্থীয় ১২ এবং ১৪ অধ্যায়ে নতুন কুপার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কতজন বিশ্বাসী চান ঈশ্বরের উপায়ে সব কাজ সম্পন্ন হোক? হায়, খুব কম। বেশিরভাগই তাদের পুরানো কুপা এবং তাদের বেতনভুক্ত 'লেবীয়' দ্বারা সন্তুষ্ট।

দ্বিতীয়ত, যিহূদীদের নিজ ভাববাদী ছিলেন যাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা খুঁজে পেতেন - যেহেতু একমাত্র ভাববাদীদেরই কাছে আত্মা ছিল। কিন্তু নতুন নিয়মের অধীনে, ভাববাদীদের সম্পূর্ণ একটি আলাদা কর্তব্য রয়েছে - খ্রীষ্টের দেহ গঠন করার জন্য (ইফিষীয় ৪:১১, ১২)। যেহেতু সমস্ত বিশ্বাসীরাই এখন পবিত্র আত্মা গ্রহণ করতে পারেন, তাই তাদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা জানতে কোনও ভাববাদীর কাছে যেতে হবে না (ইব্রীয় ৮:১১, ১ যোহন ২:২৭)। তবুও অনেক বিশ্বাসী এখনও ঈশ্বরের কোন লোকের কাছে যায় তাদের কী করা উচিৎ তা জানতে, কার সাথে তাদের বিবাহ করা উচিৎ ইত্যাদি অনুসন্ধান করার জন্য, যার মাধ্যমে তারা পুরাতন কুপার মধ্যে বাস করছেন।

তৃতীয়ত, বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে যিহূদীদের বিস্তৃত লোকদের একটি বিশাল সম্প্রদায় ছিল, কিন্তু যিরূশালেম ছিল কেন্দ্রীয় সদর দফতর এবং তাদের নেতা হিসাবে একজন পার্থিব মহাযাজক ছিল। নতুন নিয়মের অধীনে, কেবলমাত্র প্রভু যীশুই আমাদের মহাযাজক এবং আমাদের একমাত্র সদর দফতর হিসাবে ঈশ্বরের সিংহাসনই রয়েছে। যিহূদীদের একটি দীপবৃক্ষ ছিল এবং সাতটি শাখা কাণ্ডের সাথে অখণ্ডভাবে যুক্ত ছিল (যাত্রাপুস্তক ২৫:৩১, ৩২)। এটাই ছিল পুরাতন কুপা।

নতুন নিয়মের অধীনে, প্রতিটি স্থানীয় মণ্ডলী হলো পৃথক পৃথক দীপবৃক্ষ - যার কোন শাখা নেই। প্রকাশিত বাক্য ১:১২, ২০ পদে আপনি এটি স্পষ্ট দেখতে পান, যেখানে এশিয়ার সাতটি স্থানীয় মণ্ডলী সাতটি পৃথক দীপবৃক্ষকে প্রতিনিধিত্ব করে - যা যিহূদীদের দীপবৃক্ষের মতো নয়। প্রভু যীশু মণ্ডলীর প্রধান হিসাবে, এই দীপবৃক্ষগুলির মধ্যে দিয়ে গমনাগমন করেন। সেই দিনগুলিতে কোনও পার্থিব পোপ, বা কোনও মহাপরিচালক বা কোনও সম্প্রদায়ের অধ্যক্ষ ছিলেন না। পৃথিবীতে কোথাও কোন প্রধান প্রাচীন ভাই ছিলেন না, যিনি কোন বিষয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন। প্রতিটি স্থানীয় মণ্ডলী স্থানীয় প্রাচীনদের দ্বারা পরিচালিত হতো। এই প্রাচীনরা তাঁদের প্রধান হিসাবে প্রভুর কাছে সরাসরি দায়বদ্ধ ছিলেন। কিন্তু আমরা আজ আমাদের চারপাশের খ্রীষ্টানদের বেশিরভাগ লোককেই দেখতে পাই যারা একটি সম্প্রদায়ের ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছেন (পুরাতন কুপা), নাম থাকুক বা না থাকুক - এমন কিছু গোষ্ঠী আছে যারা দাবি করেন যে তারা কোন সম্প্রদায় নয় কিন্তু তবুও তাদের মধ্যে কোন একটি সম্প্রদায়ের সমস্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই সব পুরাতন কুপা।

দুর্নীতির বিস্তার রোধ করতে ঈশ্বর স্থানীয় মণ্ডলীতে নতুন কুপা নিযুক্ত করেছেন। যদি এশিয়ার এই সাতটি মণ্ডলী একে অপরের সাথে শাখাযুক্ত থাকত, তবে বালাম এবং নীকলায়ের দুর্নীতিবাদী মতবাদ এবং ঈষেবলের মিথ্যা ভবিষ্যদ্বাণী (প্রকাশিত বাক্য ২: ১৪; ১৫, ২০) সমস্ত সাতটি মণ্ডলীর কাছে ছড়িয়ে পড়ত। তবে যেহেতু এগুলি সমস্ত পৃথক দীপবৃক্ষ ছিল, স্মুর্ণা এবং ফিলাদিলফিয়ার দুটি মণ্ডলী নিজেকে বিশুদ্ধ রাখতে পেরেছিল। তাই আপনি যদি আপনার মণ্ডলীকে বিশুদ্ধ রাখতে চান তবে সাম্প্রদায়িকতার পুরাতন কুপাটি সম্পূর্ণ ত্যাগ করুন। প্রভু আমাদের দেশে এমন অনেক লোককে উত্থাপিত করুন যারা লোকেদের রীতিনীতির উপর কঠোর হতে প্রস্তুত যা অসংখ্য মানুষকে দাসত্বে ধরে রেখেছে (মথি ১১:১২); এবং যারা প্রতিটি অঞ্চলে খ্রীষ্টের দেহ তৈরি করবেন।