WFTW Body: 

ফিলিপীয়দের প্রতি লেখা চিঠিতে আনন্দের বিষয়ে অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। " সর্বদা আমি আমার সমস্ত বিনতিতে তোমাদের সকলের জন্য আনন্দ সহকারে বিনতি করতঃ আমার ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া থাকি" (ফিলিপীয় ১:৪); এবং "তোমরা প্রভুতে সর্বদা আনন্দ কর" (ফিলিপীয় ৪:৪)।

সাধু পৌল কারাগারে বন্দী থাকাকালীন ফিলিপীয় পত্রটি লিখেছিলেন (ফিলিপীয় ১:১৩)। সাধু পৌল কারাগারে থাকাকালীন আনন্দ সম্পর্কে বহুবার লিখেছিলেন, যা সত্যিকারের আশ্চর্যজনক। যখন আমাদের সমস্ত পরিস্থিতি আরামদায়ক হয় তখন আনন্দ সম্পর্কে প্রচার করা এক বিষয়। কিন্তু আমাদের পরিস্থিতি যখন কঠিন হয় তখন এই আনন্দ সম্পর্কে লেখা একেবারে অন্য বিষয়। পৌলের লেখা বাক্য এখানে আমাদের শিখিয়েছে যে খ্রীষ্টানদের পক্ষে সমস্ত পরিস্থিতিতে আনন্দ করা সম্ভব।এটিই খ্রীষ্টের মন এবং মনোভাব।

প্রভু যীশু তাঁর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগের রাতে আনন্দের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলেছিলেন (যোহনের ১৫ এবং ১৬ অধ্যায়)। শেষ নৈশভোজে (ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগের দিন সন্ধ্যায় যীশু ও তাঁর শিষ্যদের শেষ আহার করার সময়ে) তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, " এই সকল কথা তোমাদিগকে বলিয়াছি, যেন আমার আনন্দ তোমাদিগেতে থাকে, এবং তোমাদের আনন্দ সম্পূর্ণ হয়… তোমাদের সেই আনন্দ কেহ তোমাদের হইতে হরণ করে না… আমি তোমাদেরকে আমার আনন্দ দিতে চাই "। তখন থেকে আর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তিনি মিথ্যাভাবে অভিযুক্ত হয়ে, একজন অপরাধী হিসেবে প্রকাশ্যে ক্রুশবিদ্ধ হতে যাচ্ছিলেন। তবুও তিনি অন্যদের সাথে তাঁর আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছিলেন এবং তাদের উত্সাহিত করেছিলেন!!

এটাই হল খ্রীষ্টের মন এবং মনোভাব যা পৌলের ছিল। কারাগারেবন্দী থাকিকালীন তিনি আনন্দে পরিপূর্ণ ছিলেন। আমরা জানি না যে, এই চিঠিটি লেখার সময় পৌল কেবল গৃহবন্দী ছিলেন কিনা (প্রেরিত ২৮:১৬, ৩০, ৩১) নাকি তিনি আসল রোমান কারাগারে ছিলেন। সেই সময়ের রোমান কারাগারগুলি ছিল ইঁদুর, মশা এবং লতানো পোকামাকড়ে পূর্ণ অন্ধকার অন্ধকূপ, সেখানে বন্দীরা মেঝেতে ঘুমাতো এবং তাদের খুব কম খাবার দেওয়া হতো। এই দুটি জায়গার মধ্যে পৌল যেখানে ছিলেন না কেন, কোন পরিস্থিতি অবশ্যই সুখকর ছিল না। তবুও এইরকম পরিস্থিতি মধ্যেও পৌল আনন্দে পরিপূর্ণ থাকতেন। সুসমাচার প্রচারের জন্য তাঁকে কারারূদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর নিজের দুঃখের জন্য তিনি কখনই অশ্রুজল ফেলেননি। এমনকি তিনি কারও কাছ থেকে কোন সহানুভূতিও চাননি। তিনি আনন্দে পরিপূর্ণ ছিলেন।

পৌল কী এক দারুন উদাহরণ সেই সমস্ত খ্রীষ্টানদের জন্য যারা স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকা সত্ত্বেও ক্ষুদ্রতম অসুবিধার জন্যে অভিযোগ করে। আমরা প্রায়শই দেখি যে বিশ্বাসীরা যখন একটু অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন বা কোন একটি ছোট্ট পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তখন তারা অন্যদের কাছ থেকে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করেন। পৌল তাঁর কষ্টভোগ সম্পর্কে এখানে একটিও কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, " যখনই তোমাদিগকে স্মরণ হয়, সর্বদা আমি আমার সমস্ত বিনতিতে তোমাদের সকলের জন্য আনন্দ সহকারে বিনতি করতঃ আমার ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া থাকি " (ফিলিপীয় ১:৩, ৪)। এটি যখন তিনি লিখেছিলেন সম্ভবত সারা রাত ধরে মশা কামড়ের ভোগান্তির পরে; অথবা, হয়ত তাঁর কাছে যথেষ্ট গরম পোশাকও ছিলনা নিজেকে ঢাকতে। তাঁর আনন্দ তাঁর পরিস্থিতি থেকে আসে নি, কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহে, যা তিনি ফিলিপীর বিশ্বাসীদের মধ্যে দেখেছিলেন।

বহু বছর আগে ফিলিপীতে যাওয়ার জন্য দর্শনের মধ্য দিয়ে প্রভু তাঁকে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন (প্রেরিত ১৬:৯-১২)। তিনি সেই দর্শন'কে অনুসরণ করেছিলেন এবং সেখানে গিয়ে লোকদের প্রভুর কাছে নিয়ে এসেছিলেন - এবং ফিলিপিতেও বন্দী ছিলেন। যে কারারক্ষক সেখানে রূপান্তরিত হয়েছিলেন (খ্রীষ্টকে গ্রহণ করেছিলেন) তিনি সম্ভবত ফিলিপীয় মণ্ডলীর একজন প্রবীণ, এবং তখন হয়ত তিনি লোকদের জানিয়েছিলেন, "আমি এই লোকটিকে কারাগারে আনন্দ করতে দেখেছিলাম"। পৌলের আনন্দ এমন এক জীবন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল, যে জীবন প্রভুর জন্য কার্যকরভাবে ব্যয় হয়েছিল। আপনি যখন আপনার জীবনের শেষ সময়ে আসবেন, সেই বিষয়গুলি যা আপনাকে আনন্দ এনে দেবে তা হল ঈশ্বর যখন আপনাকে স্বাস্থ্য ও সামর্থ্য দিয়েছিলেন সেই দিনগুলিতে আপনি প্রভুর সেবা করার জন্য আপনার জীবনকে ব্যয় করেছিলেন, তাঁর রাজত্বের জন্য লোকদের একত্রিত করেছিলেন এবং তাঁর মণ্ডলী তৈরি করেছিলেন। এখনই এটির সম্পর্কে ভাবুন, যাতে আপনি যখন পৌলের মতো আপনার জীবনের শেষ সময়ে আসবেন, ঈশ্বর আপনার জীবন দিয়ে যা করেছেন তার জন্য আপনি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে পারবেন। ফিলিপীয় ৪:৪ তে পবিত্র আত্মা আমাদের প্রেরণা দেয়, " তোমরা প্রভুতে সর্বদা আনন্দ কর; পুনরায় বলিব, আনন্দ কর" - সেটা কখনও কখনও বা এমনকি বেশিরভাগ সময় নয়, কিন্তু সর্বদা। এই পদটি বহু বছর আগে আমাকে (লেখককে) অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। আমি স্বীকার করেছিলাম যে এই পদটি আমার জীবনে সত্য ছিল না; এবং তারপরে আমি প্রভুকে আমার জীবনে এটি বাস্তবায়িত করতে বলেছিলাম। আপনি কি কখনও কখনও, বা বেশিরভাগ সময় সুস্থ থাকতে চান, নাকি সর্বদা? আমরা সবাই সর্বদা সুস্থ থাকতে চাই। সুতরাং আপনি কি কখনও কখনও, বেশিরভাগ সময় আনন্দ করতে চান, নাকি সর্বদা? আপনি বলবেন, "এটা কি সম্ভব?" ঈশ্বরের অনুগ্রহে এটি সম্ভব।

ঈশ্বর আমাদের এই আদেশটি দিতেন না যদি তিনি জানতেন এটি অসম্ভব। যদি এটি এখনও আমাদের জীবনে সত্য না হয়ে থাকে, তবে আসুন আমরা সৎ হই এবং প্রভুকে বলি। আপনাকে পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ করতে এবং আপনাকে শিখিয়ে দিতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন যে খ্রীষ্টের বাইরে বিশ্বের সমস্ত কিছুই আবর্জনা। তারপরেই আপনি সর্বদা আনন্দ করবেন। বিশ্বাসীদের মধ্যে প্রচুর অপরিস্ফুট বিরক্তি, অভিযোগ ও ঝগড়া করতে দেখা যায় কারণ তারা খ্রীষ্টের বাইরে পৃথিবীর অন্য সমস্ত কিছুকেই আবর্জনা হিসাবে দেখেননি - তাই তাদের সর্বদা আনন্দ করা সত্যিই অসম্ভব! পৌল যখন এই বাক্যগুলি লিখেছিলেন তখন রোমের একটি জঘন্য অন্ধকার কারাগারের বন্দী ছিলেন। যদি তিনি এইরকম পরিস্থিতিতে আনন্দ করতে পারেন, তবে আমরা কেন পারব না?