WFTW Body: 

ঈশ্বরের সাথে যাকোবের দুটি সাক্ষাৎ হয়েছিল - একটি বৈথেলে (আদিপুস্তক ২৮) এবং অন্যটি পনূয়েলে (আদিপুস্তক ৩২)৷

বৈথেল শব্দের অর্থ "ঈশ্বরের গৃহ" (এক ধরনের গির্জাঘর) (আদিপুস্তক ২৮:১৯) এবং পনূয়েল শব্দের অর্থ "ঈশ্বরের মুখ" (আদিপুস্তক ৩২:৩০)। ঈশ্বরের শ্রীমুখ দর্শন করার জন্য আমাদের সকলকে ঈশ্বরের মণ্ডলীতে প্রবেশ করার পরেও আরও বেশী ভেতরে যেতে হবে। বৈথেলে, এটি বলে যে "সূর্য অস্ত গেছে" (আদিপুস্তক ২৮:১১) - এটি কেবল একটি ভৌগলিক ঘটনা, তবে যাকোবের জীবনে যা ঘটেছিল এটি তারও ইঙ্গিত দেয়, কারণ পরবর্তী ২০ বছর তাঁর জন্য গভীর অন্ধকারময় সময় ছিল। তারপর পনূয়েলে, এটি বলে, "সূর্য উদিত হলো" (আদিপুস্তক ৩২:৩১) - আবার একটি ভৌগলিক ঘটনা, কিন্তু যাকোবও অবশেষে ঈশ্বরের জ্যোতিতে এসেছিলেন।

বৈথেলে, যাকোব স্বপ্ন দেখেছিলেন পৃথিবীতে একটি সিঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে যার শীর্ষটি স্বর্গ পর্যন্ত স্থাপিত। যোহন ১:৫১ পদে, যীশু নিজেকেই সেই সিঁড়ি বলে উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করেছেন - পৃথিবী থেকে স্বর্গে যাওয়ার পথ। তাই যাকোব যা স্বপ্নে দেখেছিলেন তা আসলে প্রভু যীশুর স্বর্গের পথ খোলার একটি ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শন ছিল। প্রভু তখন সেই স্বপ্নে যাকোবকে অনেক কিছুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু যাকোব এতটাই পার্থিব মনের ছিলেন যে তিনি কেবল পার্থিব নিরাপত্তা, শারীরিক স্বাস্থ্য এবং আর্থিক সমৃদ্ধির কথাই ভাবতে পারতেন। এবং তাই তিনি ঈশ্বরকে বলেছিলেন "প্রভু যদি আপনি এই যাত্রায় আমার যত্ন নেন এবং আমাকে খাবার এবং পোশাক দেন এবং আমাকে নিরাপদে বাড়িতে নিয়ে আসেন তবে আমি আমার উপার্জনের ১০% আপনাকে দেব।" যাকোব ঈশ্বরকে একজন প্রহরীর মতো মনে করেছিলেন যিনি তার যত্ন নেবেন। আর ঈশ্বর তা করলে, যাকোব তাঁকে তাঁর মজুরি দেবেন - তার আয়ের ১০%!!

আজকেও অনেক বিশ্বাসী ঈশ্বরের সাথে এইভাবে আচরণ করে থাকে। তারা তাঁর কাছ থেকে শুধুমাত্র বস্তুগত আরাম কামনা করে। এবং যদি প্রভু তাদের এই জিনিসগুলি দেন, তারা বিশ্বস্ততার সাথে মণ্ডলীর-সভায় উপস্থিত হয় এবং প্রভুর কাজের জন্য তাদের কিছু অর্থ দান করে। এই ধরনের বিশ্বাসীরা প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের সাথে ব্যবসা করে তাদের নিজস্ব স্বাচ্ছন্দ্য এবং লাভের সন্ধান করার মাধ্যমে, ঠিক যে কোনও জাগতিক ব্যবসায়ীর মতো।

যাকোব তার জীবনের ২০ বছর পার্থিব জিনিস হস্থগত করার মাধ্যমে কাটিয়েছেন। তিনি লাবনের পরিবার থেকে এক পত্নী নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং পেয়েছিলেন দুটি! তিনি দুটি চাননি, কিন্তু যাইহোক তিনি দুটি পেয়েছিলেন!! তারপর তিনি লাবনকে প্রতারণা করে তার মেষগুলো দখল করে ফেলেন এবং এইভাবে একজন অত্যন্ত ধনী ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। তিনি লাবনের বাড়ি একজন নিঃস্ব ব্যক্তি হিসাবে গিয়েছিলেন, কিন্তু শেষে, সেখানে তিনি খুব ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে তিনি তার সমৃদ্ধিকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ হিসাবে গণ্য করেছিলেন- যেমনটি আজ অনেক বিশ্বাসী করে থাকেন!! কিন্তু "ঈশ্বরের আশীর্বাদ"-এর আসল চিহ্ন কী? তা কি সমৃদ্ধি? না। এটা হচ্ছে খ্রীষ্টের সাদৃশ্যে রূপান্তরিত হওয়া। একটা ভালো চাকরি, একটা ভালো বাড়ি এবং অনেক আরাম-আয়েশ নিয়ে কি লাভ, যদি আপনার জীবন ঈশ্বর ও মানুষের কাছে অনুপযোগী হয়? কিন্তু ঈশ্বর যাকোবের সাথে কার্য সমাপ্ত করেননি। তিনি (ঈশ্বর) দ্বিতীয়বার তার সাথে পনূয়েলে মুখোমুখি দেখা করেছিলেন।

আমি আপনাদের বলতে চাই, আমার ভাই ও বোনেরা, যে আপনাদের অনেকেরই ঈশ্বরের সাথে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হওয়া দরকার - একটি সাক্ষাৎ যা তখনই ঘটবে যখন আপনি আপনার জীবনে সর্বনিম্ন স্থানে পড়ে যাবেন - এবং যখন ঈশ্বর, আপনার বিচার করার এবং আপনাকে নরকে পাঠানোর পরিবর্তে, আপনাকে তাঁর পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ করবেন!

আমরা আদিপুস্তক ৩২ অধ্যায়ে পড়ি যে যাকোব ভীত হয়ে পড়েছিলেন কারণ তিনি শুধু শুনেছিলেন যে এষৌ (যাকে তিনি ২০ বছর আগে জন্মগত অধিকার নিয়ে প্রতারণা করেছিলেন) তার সাথে দেখা করতে আসছেন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে এষৌ তাকে হত্যা করবেন। এটা আমাদের জন্য ভালো যখন ঈশ্বর আমাদেরকে এমন কিছু পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে দেন যা আমাদের ভয়গ্রস্থ করে। কারণ, যখন আমরা ভীত হই যে লোকেরা আমাদের সাথে কি করতে পারে, তখন আমরা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হবো। পনূয়েলে (ঈশ্বরের শ্রীমুখ দর্শন করার সময়), যাকোব একা ছিলেন (আদিপুস্তক ৩২:২৪)। আমাদের সাথে দেখা করার আগে ঈশ্বর সর্বপ্রথম আমাদের একাকী করেন। এই কারণেই শয়তান আজকের পৃথিবীতে জীবনকে এত তাড়াহুড়ো এবং ব্যস্ত (বিশেষত শহরগুলিতে) করার আদেশ দিয়েছে যে এমনকি অনেক বিশ্বাসীর কাছে ঈশ্বরের সাথে একা থাকার সময় কমই থাকে। তাদের জীবন এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, কম অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো (ঈশ্বরের মতো বিষয়) তাদের সময়সূচির বাইরে স্থান করেছে! এটি আজকের খ্রীষ্টজগতের দুঃখজনক ঘটনা।

ঈশ্বর সেই রাতে যাকোবের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে মল্লযুদ্ধ (কুস্তি) করেছিলেন, কিন্তু যাকোব কিছু জয় করতে পারেননি। সেই কুস্তি আগের ২০ বছর ধরে যাকোবের জীবনে যা চলছিল তার প্রতীকী ছিল। এবং যখন ঈশ্বর দেখলেন যে যাকোব একগুঁয়ে জেদী, তিনি অবশেষে তার কোমর থেকে তার ঊরুফলক স্থানচ্যুত করলেন। সেই সময়ে যাকোবের বয়স ছিল মাত্র ৪০ বছর, এবং তিনি খুব শক্তিশালী মানুষ ছিলেন। তাঁর পিতামহ অব্রাহাম ১৭৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে যাকোব তাঁর যৌবনের প্রথম দিকে ছিলেন, তাঁর জীবনের ৭৫% এখনও তাঁর সামনে। এত অল্প বয়সে একটি স্থানচ্যুত ঊরুফলক হওয়া হয়তো তাঁর পক্ষে একেবারেই কাম্য ছিল না - কারণ এটি তাঁর ভবিষ্যতের সমস্ত পরিকল্পনা ভেঙ্গে ফেলত পারত। আজকের পরিভাষায় এটা বোঝার জন্য, এটা একজন ২০ বছর বয়সী যুবকের ঊরুফলক স্থানচ্যুতি হয়ে যাওয়া, এবং চিরকালের জন্য ক্রাচ (বগলে লাগিয়ে চলবার লাঠি) ব্যবহার করার মতে একটি বিষয়!! যা একটি কষ্টকর অভিজ্ঞতা হতে পারে। যাকোব তাঁর বাকি জীবনের জন্য ক্রাচ ছাড়া চলতে সক্ষম হবেন না। ঈশ্বর যাকোবকে ভাঙ্গার জন্য অনেক উপায়ে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তিনি সফল হননি; আর তাই তিনি অবশেষে তাঁকে একটি স্থায়ী শারীরিক অক্ষমতা দিয়েছিলেন। যা শেষ পর্যন্ত যাকোবকে ভাঙতে সফল হয়।

ঈশ্বর যাকোবের ঊরুফলক স্থানচ্যুত করার পর, তিনি তাঁকে বলেছিলেন, "ঠিক আছে, আমি আমার কার্য করেছি। এখন আমাকে যেতে দাও। তুমি কখনোই আমাকে চাওনি। তুমি শুধু স্ত্রী এবং অর্থ চেয়েছিলে।" কিন্তু যাকোব এখন ঈশ্বরকে যেতে দিচ্ছিলেন না। অবশেষে, তিনি পরিবর্তিত হয়েছিলেন! যে মানুষটি তার স্ত্রীদের এবং সম্পত্তি আঁকড়ে ধরে জীবন কাটিয়েছেন, তিনি এখন ঈশ্বরকে আঁকড়ে ধরেছেন এবং বলছেন "আপনি আমাকে আশীর্বাদ না করিলে আপনাকে ছাড়িব না" (আদিপুস্তক ৩২:২৬)। যাকোবের হৃদয়ে কী মহৎ একটি কার্য সম্পন্ন হয়েছিল যখন তাঁর ঊরুফলক স্থানচ্যুত হয়েছিল, যাতে তিনি এখন শুধুমাত্র ঈশ্বরের প্রতি আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন। পুরানো প্রবাদের মতো, "যখন আপনার কাছে ঈশ্বর ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না, তখন আপনি দেখতে পাবেন যে ঈশ্বরই যথেষ্ট"!! সেটাই সত্য। এখানে বলা হয়েছে যে যাকোব সেই জায়গাটির নাম "পনূয়েল" রেখেছিলেন কারণ তিনি অবশেষে ঈশ্বরের মুখ দেখেছিলেন। বৈথেলে, তাঁকে ঈশ্বরের গৃহে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আপনি হয়ত বহু বছর ধরে ঈশ্বরের গৃহে আছেন তবুও ঈশ্বরের মুখ দেখেননি। তাহলে ঈশ্বরের সাথে আপনার দ্বিতীয় সাক্ষাৎ প্রয়োজন - যেখানে আপনি তাঁর মুখ দেখতে পাবেন। যাকোব উত্তেজনায় বললেন, "এখন আমি ঈশ্বরকে সম্মুখাসম্মুখি হইয়া দেখিলাম, তথাপি আমার প্রাণ বাঁচিল" (আদিপুস্তক ৩২:৩০)।